কাজিরবাজার ডেস্ক :
রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘœ ঘটতে পারে এমন আশঙ্কায় মোবাইল অপারেটরদের ব্ল্যাকবেরি সেবা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। মোবাইল অপারেটররা বলছেন, গ্রাহকদের বিকল্প সেবা নিশ্চিত করে খুব শীঘ্রই বন্ধ করে দেয়া হবে ব্ল্যাকবেরি সেবা কার্যক্রম। তারা এজন্য বিটিআরসির কাছ থেকে সময় চেয়ে আবেদন করেছে। বিটিআরসি এ বছরের এপ্রিলে দুই সপ্তাহের সময় দিয়েছিল ব্ল্যাকবেরি সেবা বন্ধ করার। কিন্তু অপারেটররা আগস্ট মাসেও ব্ল্যাকবেরি সেবা বন্ধ করেনি। এই সময়ের মধ্যে অপারেটরগুলোকে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছে বিটিআরসি। সাড়ে ৬ হাজার ব্ল্যাকবেরি সেটের সেবা বন্ধ না হলে রাষ্ট্রের জন্য একটা হুমকি থেকে যাবে।
বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, বিশেষ ধরনের সফটওয়্যারের মাধ্যমে ব্ল্যাকবেরি মোবাইল সেট চলে। তাই এর গ্রাহকদের এসএমএস, এমএমএস, যেকোন কথোপকথনসহ সব ধরনের তথ্যই সংরক্ষিত থাকে নির্দিষ্ট সার্ভারে, যা অন্য কারও পক্ষেই পাওয়া সম্ভব না। বাংলাদেশে এ সেবা চালুর শর্ত ছিল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংরক্ষিত সার্ভারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন সংস্থার প্রবেশাধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে ‘ডিকোডিং সার্ভার’ স্থাপন করতে হবে। কিন্তু সেটি করতে ব্যর্থ হয়েছেন অপারেটররা। এই সেবার আওতায় গ্রাহক কম থাকায় এ দেশে সার্ভার স্থাপনে আগ্রহ নেই নির্মাতা দেশ কানাডার। দেশে মাত্র সাড়ে ৬ হাজার ব্ল্যাকবেরি সেট ব্যবহার হচ্ছে বলে বিটিআরসি এক হিসাবে জানিয়েছে। তবে এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। এই সেটগুলো সাধারণত টাকাওয়ালাদের কাছেই রয়েছে। তবে অপরাধীদের কাছেও ব্ল্যাকবেরি মোবাইল সেট থাকতে পারে।
বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মোঃ জাকির হোসেন বলেন, ব্ল্যাকবেরি সেট নিয়ে বিটিআরসি কমিশন বৈঠকে সেবা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গত এপ্রিলে। একই মাসে সব অপারেটরকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এরপরও এই সেবা চলতে পারে না। অপারেটররা ব্ল্যাকবেরি সেবা বন্ধ করে বিটিআরসির কাছে রিপোর্ট দেয়ার কথা। কিন্ত তারা এখন পর্যন্ত কোন রিপোর্ট বিটিআরসিতে জমা দেয়নি।
সূত্র জানিয়েছে, ২০০৮ সালে বেরসকারী মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন ২০১১ সালে এয়ারটেল ব্ল্যাকবেরি মোবাইল সেবা চালু করে। বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ছাড়াও সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা আর সমাজের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি এ সেবার গ্রাহক। আশঙ্কা করা হচ্ছে ব্ল্যাকবেরি মোবাইল ফোন সেট অপরাধীদের হাতেও রয়েছে। কূটনৈতিক ও সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য বিকল্প সেবার কথা চিন্তা করছেন মোবাইল অপারেটররা। কিন্তু অপরাধীদের বিষয়ে কি চিন্তা করছেন মোবাইল অপারেটররা তা বলেননি।
বিটিআরসির এক কর্মকর্তা জানান, তথ্যের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিয়ে ১৯৯৯ সালে বিশ্ব বাজারে আসে ব্ল্যাকবেরি। দশ বছর পর বাংলাদেশে চালু হলেও বর্তমানে এর নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয় হাজারের মতো। ব্ল্যাকবেরি সেট অপরাধীদের হাতেও চলে গেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রও এই সেবা নিচ্ছে দিনের পর দিন। ফলে বড় বড় চোরা চালান দেশের ভেতর ঢুকে গেলেও আইন শৃঙ্খলাবাহিনী তাদের শনাক্ত করতে পারছে না। অথবা অন্য যেকোন অপরাধ করলেও ব্ল্যাকবেরি সেটের কোন কথা বা এসএমএস শনাক্ত করার প্রযুক্তি দেশে নেই। ফলে বিটিআরসি ব্ল্যাকবেরি সেবা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। ব্ল্যাকবেরির এনক্রিপ্টেড টেকনোলজির আওতায় গ্রাহকদের সকল ভয়েস কল, মেসেজ প্রভৃতি যোগাযোগমূলক কর্মকা- কানাডাভিত্তিক কোম্পানিটির সার্ভার কেন্দ্রিক হওয়ায় এতে বাইরের কারও প্রবেশাধিকার থাকে না। ব্ল্যাকবেরির গ্রাহকদের কথোপকথন গ্রাহক দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রয়োজন হলে সেগুলো সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। যদিও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উক্ত সুবিধা নিশ্চিত করার শর্তেই বাংলাদেশে ব্ল্যাকবেরি সেবা চালু হয়েছিল। তবে অপারেটররা সেই সময় পার করে গেলেও দেশীয় প্রযুক্তির মধ্যে নেয়নি।
গ্রামীনফোন ও এয়ারটেল এই দুটি আপারেটর সেবাটি চালু করে। এখন তাদের বিটিআরসির থেকে চিঠি দিয়ে সেবাটি বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। যদি ওই দুটি আপারেটর বিটিআরসির কাছ থেকে সময় চেয়ে নিয়েছিল। বিটিআরসি তাদের দুই সপ্তাহের সময় বেঁধে দেয়। এরপর এই সেবা চালু রাখলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়। এখন পর্যন্ত দেশে ব্ল্যাকবেরি সেবা চালু রয়েছে।