মো. শাহজাহান মিয়া জগন্নাথপুর থেকে :
জগন্নাথপুরে মরমী কবি রাধারমণের নামে ভবন নির্মাণ ও রাধারণের প্রয়াণ উৎসব পালন বানচালের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, এশিয়া মহাদেশের বিয়ের ধামাইল গানের জনক ও জারি, সারি, ভাটিয়ালী, বিচ্ছেদ সহ কয়েক হাজার গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় গানের জন্মদাতা ছিলেন মরমী সাধক কবি জমিদার রাধারমণ দত্ত পুরকায়স্থ। ১৮৩৩ সালে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌর এলাকার কেশবপুর গ্রামে জমিদার পরিবারে রাধারমণের জন্ম হয় এবং ১৯১৫ সালে মৃত্যু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে মরমী কবি রাধারমণের নাম ও ছবি দিয়ে সরকারি ভাবে ১০ টাকা মূল্যের ডাক টিকিট বানিয়ে তাঁকে মূল্যায়িত করা হয়েছে। এতে রাধারমণ ভক্তরা আনন্দিত হয়েছেন। তবে কেশবপুর এলাকায় জমিদার রাধারমণের ছিল প্রায় ১৯ একর জমিদারী সম্পত্তি রকম ভূমি। এর মধ্যে অধিকাংশ বেদখল হয়ে গেছে। অবশিষ্ট কেশবপুর বাজারের পাশে কিছু ভরাট ও পুকুর রকম জায়গা রয়েছে। ভরাটকৃত জায়গায় রাধারমণের নামে সরকারিভাবে স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে-১৯৮৪ সালে মরমী কবি রাধারমণের স্মৃতি ধরে রাখতে স্থানীয় সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে গঠন করা হয় রাধারমণ সমাজ কল্যাণ সাংস্কৃতিক পরিষদ নামের একটি কমিটি। এ কমিটির মাধ্যমে প্রতি বছর রাধারমণের জন্ম ও প্রয়াণ দিবস পালন হয়ে আসছে। বর্তমান কমিটির সদস্যরা হলেন সভাপতি জিলু মিয়া, সহ-সভাপতি আছকির আলী, সাধারণ সম্পাদক পৌর কাউন্সিলর তাজিবুর রহমান, যুগ্ম-সম্পাদক রমজান আলী, সদস্য তেরা মিয়া, টুনু মিয়া, কাদির মিয়া, মিরাস মিয়া সহ ৪৬ জন।
রাধারমণের মালিকানাধীন কেশবপুর বাজারের পাশে অবস্থিত ভরতপুর মৌজার জেএল নং-৪৬, সাবেক দাগ নং-১১৫ ও খতিয়ান নং-৫১ এতে প্রায় ৩ একর জায়গায় রাধারমণের নামে ভবনের নির্ধারিত স্থানের জায়গা নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা চলছে। এর মধ্যে মহামান্য হাইকোর্টে কেশবপুর গ্রামের মৃত আবদুল মনাফের ছেলে আবদুল জলিলের দায়ের করা একটি মামলার রায় পান রাধারমণ পরিষদ। এরপর থেকে রাধারমণ পরিষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে একটি মহল একের পর এক ৭টি মামলা দিয়ে হয়রানী করছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে ৪ সেপ্টেম্বর বুধবার রাধারমণ সমাজ কল্যাণ সাংস্কৃতিক পরিষদের সভাপতি জিলু মিয়া ও সহ-সভাপতি আছকির আলী বলেন, আমরা রাধারমণ ও তাঁর গানকে ভালবাসি। যে কারণে রাধারমণের স্মৃতি রক্ষায় কাজ করছি। তবে রাধারণ ছিলেন একজন জমিদার। তাঁর রয়েছে বিশাল জায়গা-সম্পত্তি। এর মধ্যে অধিকাংশ জমি বেদখল হলেও কিছু অবশিষ্ট জমিতে রাধারমণের নামে সরকারিভাবে কমপ্লেক্স নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে এবং পুকুরে আমাদের পরিষদের উদ্যোগে মাছ চাষ করা হয়। আগামী নভেম্বর মাসে রয়েছে রাধারমণের প্রয়াণ দিবস। দিবসটি পালনের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। তবে আমরা রাধারমণের পক্ষে কাজ করায় একটি মহলের কিছু লোক আমাদের পরিষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ আদালত ও বিভিন্ন দপ্তরে একের পর এক ৭টি মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। যাতে রাধারমণ ভবন নির্মাণ ও রাধারমণের প্রয়াণ উৎসব বানচাল করা যায়। এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, রাধারমণের জায়গা-জমি আত্মসাত করার জন্য তারা আমাদেরকে সরাতে চাইছে। অবশেষে তারা গানের ছন্দে-ছন্দে বলেন “রাধারমণকে ভালোবেসে হইলাম মামলার আসামী, আর কত কষ্ট সহিতে হবে আমরা নাহি জানি”। তবে চেষ্টা করেও মামলা গুলোর কোন বাদীর মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।