দোয়ারাবাজারে দেয়ালে দেয়ালে দৃষ্টিনন্দন ক্যালিগ্রাফি

12

শাহ্ মাশুক নাঈম, দোয়ারাবাজার

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার দেয়ালে-দেয়ালে নানা রঙের আলপনা আর দৃষ্টিনন্দন ক্যালিগ্রাফিতে দেখা দিয়েছে নতুনত্বের ছোঁয়া। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেয়ালগুলোতে যেখানে আগে বিভিন্ন পোস্টারে ছেয়ে ছিল, আর এখন সেই দেয়ালগুলোতে শিক্ষার্থীদের রঙ-তুলির আঁচড় পড়েছে। সেগুলো এখন নতুন রূপে সেজেছে। আর এ পরিবর্তনের পেছনে রয়েছেন শিক্ষার্থীদের ঘামজরা, নিদ্রাহীন অবদান।
আগুনের ফুলকিরা এসো জড়ো হই দাবানল জ্বালবার মন্ত্রে বজ্রের আক্রোশে আঘাত হানি মানুষের মনগড়া তন্ত্রে বল বীর, বল বীর বল উন্নত মম শির। ‘আমাদের দেশের ভাগ্য আমরাই পরিবর্তন করব’ এমন নানান প্রতিবাদী শোভা আর আলপনায় পরিবর্তনের ছোঁয়া পরেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দেয়ালে।
বৃহস্পতিবার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নে আল মদিনা একাডেমির ক্যাম্পাসের দেয়াল, বাজারের বিভিন্ন স্থাপনার দেয়ালগুলোতে বিজয় উল্লাসের বিভিন্ন গ্রাফিতি আঁকতে দেখা যায়। দিনভর এসব দেয়ালে গ্রাফিতির কাজ করেন আল মদিনা একাডেমির শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে ছাত্র-জনতার বিজয়ের বিভিন্ন প্রতীকী ছবিও আঁকা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছাত্র আন্দোলনের পর সারা দেশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসেবে উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের আল মদিনা একাডেমির দেয়ালে রঙ-তুলির আঁচড়ে দেয়াল সাজাতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের হাতের তুলিতে রঙিন হয়ে উঠেছে। কালো, সাদা, লাল, নীল, হলুদ-এ যেন রঙের এক মেলা! দেখা গেল, কেউ রঙ লাগাচ্ছে, কেউ পানি ছিটাচ্ছে- এ যেন এক মিলন মেলা! প্রতিটি মুখে যেন ফুটে উঠছে এক অনাবিল আনন্দ।
রোদের মধ্যেই যেন একটা মায়া লুকিয়ে আছে। কারও হাতে রঙের তুলি, কারও হাতে পানির বোতল- এ যেন এক স্বপ্নের রূপ! সবাই মিলে যেন একটা নতুন স্বপ্নের জন্ম দিচ্ছে। প্রতিটি ক্যালিগ্রাফির আঁচড়ে যেন ফুটে উঠছে এক নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশা। এ সময় বিভিন্ন বয়সী ছেলে-মেয়েরা দেয়ালে লিখনে অংশ নেয়।
শাহরিয়ার নাহির নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘স্কুলের সামনের দেয়ালসহ বাজারে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল। এসব পোস্টার, ফেস্টুন অপসারণ করে সৌন্দর্য বাড়াতে দেয়াল লিখন চলছে।’ বুধবার সকাল থেকে শুরু হওয়ায় দেয়াল লিখন রাত ২ টা পর্যন্ত চলে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবারও শুরু করেছে তারা।
জুয়েল আহমদ নামে এক শিক্ষক বলেন, ‘আগে যেসব দেয়াল বিভিন্ন বিঙ্গাপনের প্রচারণার কাজে ব্যবহৃত হতো, এখন সেগুলো পরিণত হয়েছে দেয়ালে। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই এগিয়ে এসে দেয়ালে যোগ করেছেন শিল্পের ছোঁয়া।’
বাজারের বিভিন্ন দেয়ালে রং তুলিতে দেয়াল লিখনে আল মদিনা একাডেমির শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করছেন বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা।
সুমন আহমদ, মামুন হোসেন, মোহাম্মদ মাজু নামের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আল মদিনা একাডেমির শিক্ষার্থীদের সাথে বাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেয়ালে বিভিন্ন চিত্র, উক্তি, ছবি আঁকায় আমরা সহযোগিতা করছি। আমরা মনে করি আমাদের পরিবর্তন আমাদের দ্বারাই সম্ভব।
মোস্তাফিজুর রহমান হাসান নামে এক শিক্ষার্থী জানান ‘এই দেওয়ালগুলো এতদিন অযতেœ-অবহেলায় ছিলো। আমরা আজ ক্যালিওগ্রাফিতি করে পুরো দেওয়ালগুলো সাজিয়েছি। পথচারীরা অনেক প্রশংসা করছেন। এখন দেখতেও অনেক সুন্দর লাগছে। এই কার্যক্রমে অংশ নিতে পেরেছি এজন্য আমি গর্বিত।’