একসময়ের আমদানিনির্ভর বাংলাদেশ এখন রপ্তানি বাণিজ্যে বেশ ভালো করছে। প্রতিবছরই উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে মোট রপ্তানি। গত অর্থবছরে (২০১৮-১৯) ২০২টি দেশে ৭৫০টি পণ্য ও সেবা রপ্তানির মাধ্যমে মোট আয় হয়েছে ৪৬.৮৮ বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪.৩০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ বিলিয়ন ডলার। প্রথম মাসের রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। আশা করা যায়, নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে না। কিন্তু কিছু সমস্যাও আছে। আমাদের রপ্তানি আয়ের বেশির ভাগই আসে পোশাক খাত থেকে। কোনো কারণে এই খাত মার খেলে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য বড় ধাক্কা খেতে পারে। যেমনটি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি স্থগিত করার পর। গত রবিবার জাতীয় রপ্তানি ট্রফি বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, রপ্তানি আয়ের এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে আমাদের রপ্তানি তালিকায় নতুন নতুন পণ্য সংযোজন করতে হবে এবং নতুন নতুন বাজার খুঁজতে হবে। পাশাপাশি খোঁজ রাখতে হবে কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা কেমন, সে অনুযায়ী আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য জোরদার করতে হবে।
ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিসটিক্যাল রিভিউ ২০১৯ অনুযায়ী রপ্তানি প্রবৃদ্ধির দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। এক নম্বরে রয়েছে ভিয়েতনাম। আর রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৪২তম। এই অবস্থানকে এগিয়ে নিতে হলে অর্থাৎ রপ্তানি আরো বাড়াতে হলে আমাদের যেমন নতুন নতুন পণ্য উত্পাদন ও বাজার সৃষ্টিতে মনোযোগ দিতে হবে, তেমনি মানসম্মত পণ্য উত্পাদন করতে হবে। বর্তমান সরকার সে লক্ষ্যে সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। বেশ কিছু বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। সেগুলোতে নতুন নতুন কারখানা গড়ে উঠছে। দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ দুটিই বাড়ছে। বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে জরুরি যে বিষয়গুলো অর্থাৎ অবকাঠামো, জ্বালানি ও বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ব্যাপক কাজ হয়েছে ও হচ্ছে। দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার কাজেও দ্রুত এগিয়ে চলেছে দেশ। গত অর্থবছরে আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮.১ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমরা এই প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে নিয়ে যেতে সক্ষম হব। আমরাও মনে করি, উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত থাকলে তা অবশ্যই সম্ভব।
উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে ব্যাংকিং খাতের সংস্কারসহ পুঁজির জোগান নিশ্চিত করা খুবই জরুরি বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। ব্যাংকঋণের বিদ্যমান উচ্চ সুদহার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখনো একটি বড় বাধা। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে সরকার কাজ করছে। কিছু ব্যাংক এরই মধ্যে সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে এনেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, অন্যরাও শিগগির এক অঙ্কে নামিয়ে আনবে। আমরাও চাই, রক্তে কেনা বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশা অনুযায়ী ধাপে ধাপে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাক।