কাজিরবাজার ডেস্ক :
আগামী ৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নির্বিঘœ করতে কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। পরীক্ষা চলার সময় হলের ভেতরে ও বাইরের শৃঙ্খলা রক্ষায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হবে। এজন্য ১৯০ ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। সরকারী কর্মকমিশনের (পিএসসি) অধীন এ পরীক্ষায় এক হাজার ৩৭৫ পদের জন্য আবেদন করেছেন দুই লাখ ৩৫ হাজার চাকরিপ্রার্থী।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় শিক্ষক সঙ্কটে পড়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। আবার রাজধানীসহ কোন কোন এলাকায় কিছু প্রতিষ্ঠানে পদের অতিরিক্ত শিক্ষক থাকলেও মফস্বলের স্কুলগুলোতে প্রয়োজনীয় শিক্ষক নেই। অন্যদিকে আইসিটি বিষয়ে শিক্ষকের কোন পদই নেই। ফলে মানসম্মত শিক্ষা না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সারাদেশে সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে সাড়ে তিন‘শ। যেখানে প্রায় দুই হাজার শিক্ষকের সঙ্কট আছে বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোঃ সাখায়েত হোসেন। তিনি বলেছেন, প্রচুর শিক্ষক সঙ্কট আছে। এ সঙ্কট দূর করতে পাড়লে শিক্ষার মানে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের অভিজাত এলাকায় সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজী, গণিত, সামাজিক বিজ্ঞানসহ কয়েকটি বিষয়ে পদের অতিরিক্ত শিক্ষক রয়েছে। অন্যদিকে শহরের যে এলাকায় সুযোগ-সুবিধা তুলনামূলক কম এবং জেলা-উপজেলার সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে।
অধিদফতর জানিয়েছে, দেশে সাড়ে তিন‘শ সরকারী স্কুলের বাইরেও গত কয়েক বছরে সরকারী হওয়া প্রতিষ্ঠান আছে অনেক। এসব প্রতিষ্ঠানে এখনও পদ সৃষ্টি হয়নি। এমন প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে মোট সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় পৌনে ৭‘শ।
সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের অনুমোদিত পদ আছে ১০ হাজার ৫৬৩টি। কর্মরত আছেন সাড়ে আট হাজার। এর মধ্যে গণিতে ১২৭, ইংরেজীতে ৩২৪ ও ভৌতবিজ্ঞানে ২৯১ পদ শূন্য। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর ২৪ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫২২ শিক্ষক ১০ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৩৩ বছর পর্যন্ত একই বিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। তাদের অনেকে কোচিং বা প্রাইভেট-বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে বছরের পর বছর ঢাকার একই বিদ্যালয়ে অবস্থান করছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া ওই প্রতিবেদনে ১০ বছরের বেশি সময় একই বিদ্যালয়ে থাকা শিক্ষকদের বিভাগের বাইরে বদলির সুপারিশ করেছিল দুদক। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় কয়েকজনকে বদলি করলেও পরে তা আটকে যায়। আবার ঢাকাতেই বদলিতে আছে অনিয়মের অভিযোগ। যেমন রাজধানীর মতিঝিল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আছেন ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে।
অথচ স্বল্প সময়ে চাকরি করলেও মাউশিতে ঠিকভাবে তদ্বির করতে না পারায় কয়েকজনকে বদলি করা হয়েছে ঢাকার বাইরে। এমন শিক্ষকরা ঢাকায় সবচেয়ে বেশি সময় অবস্থান করা অধ্যক্ষের সঙ্গে মাউশির রহস্যজনক সম্পর্কেরও অভিযোগ তুলেছেন। শিক্ষকরা এ ধরনের শিক্ষকদের দুদকের সুপারিশ অনুসারে বদলিরও আবেদন করেছেন মাউশিতে।
শিক্ষক নেতা মোঃ ইনছান আলী বলছিলেন, যারা কম সময় ধরে আছেন তাদের বদলি করেছেন মতিঝিল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষসহ তাদের পছন্দের লোকজন। যারা আজীবন সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন তারা আছেন। আর আমরা আজ হলাম খারাপ। তারা থাকবেন আজীবন। বহু বলেছি। কাজ হয়নি।
শিক্ষক সঙ্কট ও বদলি অনিয়মের এমন অবস্থার মধ্যেই আগামী ৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী পদের ২০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা। পরীক্ষা শুধু ঢাকা শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারী কর্মকমিশন। এক হাজার ৩৭৫ পদের বিপরীতে আবেদন করেছেন দুই লাখ ৩৫ হাজার ২৯৩ প্রার্থী।
প্রার্থীদের ২০০ নম্বরের এমসিকিউ ধরনের লিখিত পরীক্ষা আগামী ৬ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকা শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা নির্বিঘœ করতে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে পিএসসি। কমিশনের এক সদস্য বুধবার বলেছেন, এখন পিএসসির সকল পরীক্ষাই অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে কোন ধরনের বিতর্ক ছাড়াই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ ধারা সকল পরীক্ষাতেই অব্যাহত থাকবে বলে মনে করে পিএসসি।
কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক তাদের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে বলছিলেন, দীর্ঘদিন পরে সরকারী হাইস্কুলে একটা নিয়োগ হচ্ছে। বেশ বড় ধরনের একটা নিয়োগ হচ্ছে। আমরা কাজ করছি। প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতিই আমরা নিচ্ছি। সুন্দরভাবে পরীক্ষা আয়োজনে আমি সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
এদিকে নিয়োগ পরীক্ষা চলার সময় হলের ভেতরে ও বাইরে শৃঙ্খলা রক্ষায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। এজন্য ১৯০ ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের এ কর্মকর্তাদের ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ দিয়ে বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ জারি করা হয়েছে।
পরীক্ষা নিতে ঢাকায় ১৭০ কেন্দ্রে প্রতিটির জন্য একজন করে ম্যাজিষ্ট্রেটসহ সরকারী কর্মকমিশনের (পিএসসি) কন্ট্রোল রুমে আরও ২০ জনকে ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর ১৮৯৮’ অনুযায়ী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেটের সাধারণ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তারা মোবাইল কোর্ট আইন অনুযায়ী ‘পাবলিক এক্সামিনেশনস (অফেন্সেস) এ্যাক্ট ১৯৮০’ অধীনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবেন।
নিয়োগ পাওয়া ম্যাজিষ্ট্রেটদের আগামী ২ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টার মধ্যে সরকারী কর্মকমিশন সচিবালয়ের একাত্তর মিলনায়তনের সেমিনারে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। একইসঙ্গে পরীক্ষার দিন ভোর সাড়ে ৪টায় পিএসসিতে রিপোর্ট করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আদেশে।