বড়লেখায় ভেজাল পণ্য তৈরির কারখানার সন্ধান, দণ্ডিত ৩

21

বড়লেখা থেকে সংবাদদাতা :
ভেজালবিরোধী অভিযানে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার পৌর শহরের দক্ষিণ বাজার এলাকায় একটি ভেজাল মালামাল তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পৌর শহরের দক্ষিণ বাজার এলাকার হোটেল মোশাহিদে থানা পুলিশের সহযোগিতায় শুরু হয় ভেজালবিরোধী এই অভিযান।
এ সময় ভেজাল পণ্য তৈরির সেই কারখানা থেকে বিপুল পরিমাণ খাদ্য দ্রব্য জব্দ করে তা ধ্বংস করে দেয় ভ্রাম্যমান আদালত এবং ভবন মালিক ও কারখানা মালিককে বিভিন্ন দণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ বাজারের হোটেল মোশাহিদে গত সোমবার রাতে বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক নিয়মিত তল্লাশি চালান। এ সময় হোটেলের দ্বিতীয় তলার ২২২ নম্বর এবং তৃতীয় তলার ৩১৫ নম্বর কক্ষে বিভিন্ন পণ্যের উপস্থিতি দেখতে পান। হোটেল কক্ষে পণ্যের খোঁজ-খবর নেন। এ নিয়ে তাঁর সন্দেহ তৈরি হয়। ওসি হোটেল কক্ষে অবস্থানকারীর ওপর বিশেষ নজরদারি চালান। মঙ্গলবার (২০ আগষ্ট) সকালে পুনরায় ওই হোটেলে গিয়ে কক্ষ দুটিতে তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশি চলাকালীন সময়ে দেখা যায়, কক্ষের শৌচাগারকে কারখানা বানিয়ে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রং ও নিম্নমানের তেল-মসলা দিয়ে জনপ্রিয় পানীয় রুহ আফজা, মডার্ন ভেজিটেবিল ঘি, মটরশুঁটি ও বিভিন্ন ধরনের ভেজাল মসলাসহ পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে কল্যাণী ধনিয়া গুঁড়া, মডার্ন ভেজিটেবল ঘি, মডার্ন সুপার ক্লাস ভেজিটেবল ঘি, কল্যাণী মরিচের গুঁড়াসহ বিভিন্ন খাদ্য পণ্য।
এদিকে এসব ভেজাল পণ্য দীর্ঘদিন ধরে বাজারজাত করে আসছিলো এ ভেজাল কারখানা কর্তৃপক্ষ। এমনকি প্রায় দেড় বছর ধরে আশরাফুল ইসলাম কক্ষ দুটি ভাড়া নিয়ে ভেজাল পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করছিলেন বলেও জানায় পুলিশ।
সূত্রে আরও জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় শুরু হওয়া এ অভিযান চলে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। এসময় হোটেলের দুটি কক্ষে ভেজাল মালামাল তৈরির কারখানা সন্ধান পাওয়া যায়। পরে হোটেল কক্ষের ভাড়াটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশরাফুল ইসলামকে (৫৫) আটক এবং কক্ষ দুটি থেকে বিভিন্ন পণ্য জব্দ করে পুলিশ।
জব্দ পণ্যের মধ্যে রয়েছে একটি কম্পিউটার, একটি প্রিন্টার, ভেজাল মডার্ণ গাওয়া ঘি ১২ কেজি, কল্যাণী গাওয়া ঘি ১৮ কেজি, পাম ওয়েল ৬০ লিটার, প্রচুর মসলা তৈরির কৌটা ও বোতল। অভিযান শেষে কম্পিউটার ও প্রিন্টার ছাড়া অন্যান্য ভেজাল পণ্য পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
পরে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী হাকিম মো. শামীম আল ইমরান ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে হোটেল মোশাহিদের মালিক আবুল ফাত্তাহকে এরকম কাজে হোটেল কক্ষ ব্যবহার করতে দেওয়ায় ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন। অপরদিকে কক্ষের ভাড়াটে আশরাফুল ইসলামকে ভেজাল পণ্য তৈরি করায় ১ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। অন্যদিকে বড়লেখা শহরের বারইগ্রাম এলাকায় মঙ্গলবার বিকেলে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ঘি ও তেল উৎপাদন করায় দীপক দত্ত নামে এক ব্যবসায়ীকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত। পরে কারখানায় জব্দ করা অবৈধ পণ্যগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী হাকিম মো. শরীফ উদ্দিন।
এ ব্যাপারে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী হাকিম মো. শামীম আল ইমরান বলেন, আবাসিক হোটেলটির ২য় ও ৩য় তলা ভাড়া নিয়ে অবৈধভাবে ঘি ও অন্যান্য পণ্য তৈরির সন্ধান পাওয়া যায়। কারখানার মালিক দেড় বছর থেকে এখানে কারখানা পরিচালনা করছিলেন। তাকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে ১ বছরের কারাদণ্ড ও এই কাজে সহায়তার অপরাধে হোটেল মালিককে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক বলেন, নিয়মিত তল্লাশিকালে সোমবার রাতে আবাসিক হোটেলের দুটি কক্ষে বিভিন্ন পণ্য দেখতে পাই। একটি কম্পিউটার, প্রিন্টারও ছিল। হোটেল কক্ষে পণ্যের খোঁজ-খবর নেই। এ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। এরপর হোটেল কক্ষে অবস্থানকারীর ওপর বিশেষ নজরদারি বৃদ্ধি করি। সকালে পুনরায় ওই হোটেলে গিয়ে কক্ষ দুটিতে তল্লাশি করলে বেরিয়ে আসে ভয়াবহ চিত্র। তিনি আরও বলেন জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রং এবং নিম্নমানের তেল ও অন্যান্য জিনিস দিয়ে ভেজাল পণ্য তৈরি হচ্ছিল। পরে ভ্রাম্যমান আদালত কারখানা মালিককে এক বছরের জেল ও ভবন মালিককে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। একইদিন বিকেলে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তেল ও ঘি তৈরি করায় আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে একলক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।