রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করুন

19

দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়েছে আগামী ২২ আগষ্ট থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে। এর আগে বাংলাদেশ যে ২৫ হাজার রোহিঙ্গার তথ্য দিয়েছিল তার মধ্য থেকে প্রথম ধাপে তিন হাজার ৫৪০ জনকে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে মিয়ানমার। এর আগে গত নভেম্বর মাসেও মিয়ানমার আড়াই হাজার রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিল। প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তখন কোনো রোহিঙ্গা ফিরে যেতে রাজি না হওয়ায় সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছিল। এখনো পাশ্চাত্যের কিছু দেশ ও সংস্থা বলছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। কোনো কোনো রোহিঙ্গা নেতা এমনও বলেছেন, প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে তাঁদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি এবং নাগরিকত্ব দেওয়াসহ তাঁদের সব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা ফিরে যাবেন না। এ অবস্থায় আগামী ২২ আগষ্টের প্রত্যাবাসন উদ্যোগ সফল হবে কি না, তা নিয়েও সংশয় আছে।
২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করলে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে আসা প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়ে গেছে। ফলে এখন ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এই রোহিঙ্গারা এখানে যেমন মানবেতর জীবন যাপন করছে, তেমনি তাদের কারণে কক্সবাজারের বাসিন্দাদের জীবনেও নেমে এসেছে এক দুর্বিষহ অবস্থা। শুধু সামাজিক বা অর্থনৈতিক ক্ষতিই নয়, তাদের কারণে কক্সবাজারের প্রাকৃতিক পরিবেশও ধ্বংস হতে চলেছে। তাই বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সহযোগিতা কামনা করে আসছে। সর্বশেষ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সময়ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পায়। চীন এ ব্যাপারে সম্ভাব্য সব কিছু করার আশ্বাস দেয়। এমন পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় প্রত্যাবাসনের নতুন তারিখ নির্ধারিত হয়েছে।
জানা যায়, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে কর্মরত কিছু এনজিও তাদের অর্থদাতাদের ইচ্ছানুযায়ী ফিরে না যাওয়ার জন্য রোহিঙ্গাদের পরামর্শ দিচ্ছে। কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ আছে। তারা উপযুক্ত পরিবেশ না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করার কথা বলছে। কিন্তু তেমন পরিবেশ সৃষ্টিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করার জন্য তারা বিশেষ কিছুই করছে না। এ অবস্থায় বাংলাদেশ কি বছরের পর বছর তাদের এখানে রেখে দিতে পারবে? সেই সক্ষমতা কি বাংলাদেশের আছে? আমরা মনে করি, রোহিঙ্গাদের দ্রুত ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোরও আরো কার্যকর ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। এবারের উদ্যোগ সফল হবে এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।