কাজিরবাজার ডেস্ক :
সুপ্রীমকোর্টের অবকাশ শেষে উচ্চ আদালতসহ বিচারিক আদালতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়, আপীল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীগণ আশা করছেন কয়েকটি মামলার রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু মামলা আপীল শুনানির জন্য রয়েছে। শীঘ্রই এগুলোর শুনানি হতে পারে। অবকাশকালীন ও পবিত্র ঈদের ছুটি শেষে ১৮ আগষ্ট রবিবার খুলছে সুপ্রীমকোর্ট। আদালত খোলার পর থেকেই পুনরায় আইনজীবী-বিচারপ্রার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠবে সুপ্রীমকোর্ট অঙ্গন। সর্বোচ্চ আদালত খোলার পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও জনগুরুত্বপূর্ণ মামলা, রিটের শুনানিতে উত্তাপও থাকবে। এ ছাড়া আপীল বিভাগে আলবদর বাহিনীর কমান্ডার এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে আপীলের রায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বাঁশবাড়িয়ার রাজাকার আব্দুস সামাদ ওরফে ফিরোজ খাঁ ওরফে মুসা ও গাইবান্ধার রঞ্জু মিয়াসহ পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আপীল বিভাগে আমত্যু কারাবাসের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশনের রায়, একুশে আগষ্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ডেথ রেফারেন্স, ১০ট্রাক অস্ত্র মামলা, রমনা বোমা হামলা মামলা ও শেখ হাসিনার ট্রেনবহরে গুলিবর্ষণ ও হামলার মামলায় ডেথ রেফারেন্সের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। আইনজীবীগণ আশা করছেন- যে সমস্ত মামলার রায় ঘোষণার জন্য সিএভি ( অপেক্ষমাণ ) রাখা হয়েছে তা শীঘ্রই ঘোষণা করা হতে পারে। একই সঙ্গে অন্যান্য মামলার শুনানিও হতে পারে। আপীল বিভাগসহ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার জন্য চারটি মামলা সিএভি ( অপেক্ষমাণ) রেখেছে।
বর্তমানে সুপ্রীমকোর্টে অবকাশ চলছে। সুপ্রীমকোর্টের ১৪ দিনের অবকাশ শেষে ১৮ আগষ্ট রবিবার পুনরায় সুপ্রীমকোর্টের নিয়মিত বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে। এ প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিষ্টার শফিক আহম্মেদ বলেছেন, যে সমস্ত মামলার যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য সিএভি (অপেক্ষমাণ) রাখা হয়েছে, তা শীঘ্রই ঘোষণা করা হতে পারে। বিচারপতিগণ বিচার বিশ্লেষণ করে রায় লিখবেন তারপর তা ঘোষণা করবেন। এটা তাদের এখতিয়ার। আমি আশা করছি, যথাসময়ে আদালত এ সমস্ত মামলার রায় ঘোষণা করবে। ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এ কেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেছেন , ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে এটিএম আজাহারুল ইসলামসহ কয়েকটি মামলা সিএভি রাখা হয়েছে। আশা করছি, এগুলোর রায় অবকাশের পর হতে পারে।
এ ছাড়া বেশ কিছু মামলা বিচারিক আদালতে রায় হয়েছে সে গুলোর ডেথ রেফারেন্স ও আপীল শুনানি হাইকোর্টে সহসাই হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
একুশে আগষ্ট গ্রেনেড হামলা মামলা : ১৩ জানুয়ারি বহুল আলোচিত বর্বরোচিত ভয়াবহ একুশে আগষ্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় আপীল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। এর আগে ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া দুই মামলার রায়সহ প্রায় ৩৭ হাজার ৩৮৫ পাতার নথি ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে পৌঁছায়।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন মামলা দু’টিতে রায় ঘোষণা করেন। সে হিসেবে রায় ঘোষণার ৪৮ দিন পর নথি হাইকোর্টে পাঠানো হলো। ১০ অক্টোবর একুশে আগষ্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ১১ আসামির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড হয়।
রমনা বটমূলে বোমা হামলা : দীর্ঘ ১৮ বছরেও রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় করা দুটি মামলা ( হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন) নিষ্পত্তি হয়নি। দুটি মামলার মধ্যে হত্যা মামলাটির রায় নিম্ন আদালত থেকে ঘোষণা করা হলেও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাটির নিষ্পত্তি হয়নি। হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদন্ড নিশ্চিতকরণ) এবং আসামিদের আপীলের শুনানি হাইকোর্টে নিষ্পত্তি হয়নি। মামলাটি শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে।
২০১৪ সালের বিচারিক আদালতের রায় ঘোষণার পরে মামলাটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাইকোর্টে আসে। একই সঙ্গে জেল আপীল হয়। পরে পেপারবুক প্রস্তত করে মামলাটি একটি বেঞ্চে ছিল। ওই বেঞ্চের এখতিয়ার পরিবর্তন হওয়ায় উল্লেখিত বেঞ্চের কার্যতালিকায় আসে মামলাটি। মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকার টপের দিকে (শীর্ষে) ছিল। আইনজীবীগণের আশাবাদ, শীঘ্রই এটি কার্যতালিকায় আসতে পারে।
২০০১ সালের পহেলা বৈশাখের দিন ভোরে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের ঘটনাস্থলে দুটি বোমা পুঁতে রাখা হয় এবং পরে রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে তা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই নয় জন মারা যায়। পরে আরও একজন মারা য়ায়। আর ২০-২৫ জন আহত হন। এ ঘটনায় দুটি (হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন) মামলা হয়। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকত-উল-জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানসহ ১৪ জঙ্গিকে এ মামলার আসামি করা হয়। হামলার ঘটনায় বিচারিক আদালতে দায়ের করা হত্যা মামলার রায়ে মুফতি হান্নানসহ আটজনের মৃত্যুদন্ড এবং ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়। ২০১৪ সালের বিচারিক আদালতের রায় ঘোষণার পরে মামলাটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাইকোর্টে আসে। একই সঙ্গে জেল আপীল হয়। রাষ্ট্রপক্ষ এ বিষয়ে শুনানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে জানা গেছে। ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন রায় দেন। রায়ে বিচারিক আদালত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকত-উল-জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানসহ আটজনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডাদেশ এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয় বিচারিক আদালত।
শেখ হাসিনার ট্রেনে গুলিবর্ষণ ও হামলা : ২১ জুলাই শেখ হাসিনার ট্রেনবহরে গুলিবর্ষণ ও হামলার ঘটনায় মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপীল আবেদন করা হয়েছে। আপীলে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিসহ সব আসামির খালাস চাওয়া হয়েছে। ঐ দিন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদন করা হয় । ১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে বোমা হামলা ও গুলির মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ৮ জনসহ মোট ৪৩ জন খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপীল করেছে। আপীলকারীদের মধ্যে ৮ জন মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত , ২২ জন যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত এবং ১৩ জন ১০ বছর করে দন্ডপ্রাপ্ত । গত ৩ জুলাই এ মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে ৪৭জনকে সাজা দেয় আদালত। পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রোস্তম আলী ৯ জনের ফাঁসির আদেশ দেন। এছাড়া রায়ে ২৫ জনের যাবজ্জীবন, ১৩ জনের ১০ বছর করে সশ্রম কারাদন্ডে রায় হয়। পাশাপাশি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের ৩ লাখ টাকা এবং ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্তদের ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। আসামিদের মধ্যে কারাগারে থাকা ৩২ জন আদালতে হাজির ছিলেন। পরে ১৪ জুলাই যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত আরও ৭ জন আত্মসমর্পণ করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর খুলনা থেকে ট্রেনে ঈশ্বরদী হয়ে সৈয়দপুরের দলীয় কর্মসূচীতে যাচ্ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলের নেত্রী শেখ হাসিনা। তাকে বহনকারী ট্রেনটি ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন ষ্টেশনে প্রবেশের মুহূর্তে ওই ট্রেন ও শেখ হাসিনার কামরা লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা। ষ্টেশনে যাত্রাবিরতি করলে আবারও ট্রেনটিতে হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় পরবর্তীতে দলীয় কর্মসূচী সংক্ষিপ্ত করে শেখ হাসিনা দ্রুত ঈশ্বরদী ত্যাগ করেন। পরে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জিআরপি থানার ওই সময়কার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাদী হয়ে তৎকালীন ছাত্রদল নেতা ও বর্তমানে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর পুলিশ মামলাটি পুনঃতদন্ত করে। তদন্ত শেষে নতুনভাবে স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ ৫২ জনকে এ মামলার আসামি করা হয়।
১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলা : চাঞ্চল্যকর ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া রায়ের ডেথ রেফারেন্স ও আপীল শুনানির জন্য হাইকোর্টে এসেছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আশা করছেন, শীঘ্রই শুনানির জন্য মামলাটি কার্যতালিকায় আসবে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল সিইউএফএল ঘাট থেকে ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান আটক করা হয়। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন ও ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগ এনে দুটি মামলা হয়। ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক এস এম মজিবুর রহমান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। মামলায় সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুতফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদন্ড দেয় আদালত। এই মামলার মৃত্যুদন্ড পাওয়া অন্যতম আসামি মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়। পরে এই মামলায় মৃত্যুদন্ড পাওয়া আসামিদের আপীল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য হাইকোর্টে আসে। এরপর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও শুনানিই শুরু হয়নি।
এটিএম আজাহারুল ইসলাম : ১০ জুলাই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও আলবদর কমান্ডার এটিএম আজাহারুল ইসলামের মৃত্যুদন্ড থেকে খালাস চেয়ে করা আপীলে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়েছে। অর্থাৎ যে কোনদিন এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্য বিশিষ্ট আপীল বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন। গত ১৮ জুন এটিএম আজাহারুল ইসলামের আপীলের শুনানি শুরু হয়ে পর পর কয়েক দিন ধরে পেপারবুক থেকে আজহারের পক্ষে এডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন পড়েন। ২৬ জুন আপীল বিভাগে পড়া শেষে ১জুলাই যুক্তিতর্ক শুনানির দিন ধার্য করেন।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরধ ট্রাইব্যুনাল-১ একাত্তরে রংপুর জেলা আলবদর বাহিনীর কমান্ডার এ টি এম আজাহারুল ইসলামকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করে ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ৬টি অভিযোগের মধ্যে হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, আটক, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ৫টি অভিযোগই প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে ৩টি অভিযোগে ফাঁসি, ২টিতে ৩০ বছরের কারাদন্ড ও একটিতে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ এ রায় ঘোষণা করে। ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপীল করেন আজাহারুল ইসলাম। সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় তার আইনজীবীরা এ আপীল করেন। আপীলে খালাস চান তিনি। মোট ৯০ পৃষ্ঠার আপীলে খালাসের পক্ষে ১১৩টি যুক্তি তুলে ধরা হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দুটি মামলা : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য গাইবান্ধার রঞ্জু মিয়াসহ পাঁচ রাজাকার ও রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বাঁশবাড়িয়ার রাজাকার আব্দুস সামাদ ওরফে ফিরোজ খাঁ ওরফে মুসার মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়েছে। অর্থাৎ যে কোনদিন এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ এ আদেশ প্রদান করেছে।
২১ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গাইবান্ধার রঞ্জু মিয়াসহ পাঁচ রাজাকারের রায় যে কোনদিন ঘোষণা করা হবে। রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছে ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশন ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ প্রদান করেছে। এ মামলায় মোট আসামি ছিল ছয়জন। তাদের মধ্যে মোঃ রঞ্জু মিয়া গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। পলাতক আসামিরা হলেন- রাজাকার কমান্ডার আবদুল জব্বার (৮৬), মোঃ জাফিজার রহমান খোকা (৬৪), মোঃ আবদুল ওয়াহেদ ম-ল (৬২), মোঃ মমতাজ আলী বেপারি মমতাজ (৬৮) ও মোঃ আজগর হোসেন খান (৬৬)। এদের মধ্যে আজগর হোসেন খান মারা যান। আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, ভয়-ভীতি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে হিন্দু সম্প্রদায়কে ধর্মান্তর ও দেশান্তরে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্যদিকে ৮ জুলাই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বাঁশবাড়িয়ার রাজাকার আব্দুস সামাদ ওরফে ফিরোজ খাঁ ওরফে মুসার মামলাটি সিএভি রাখা হয়েছে। অর্থাৎ যে কোন দিন এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।
যাবজ্জীবন কারাদন্ড মানে কত বছর : আমত্যু কারাবাসের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশনের শুনানি শেষ হয়েছে। শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি)রাখা হয়েছে। অর্থাৎ যে কোন দিন এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ১১ জুলাই এ আদেশ দেয়। এর আগে এই রিভিউ পিটিশনের ওপর দীর্ঘ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে গত ১১ এপ্রিল এ বিষয়ে আইনী মতামত নেয়ার জন্য চার আইনজীবীকে এ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) নিয়োগ দেয় আপীল বিভাগ। মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০১ সালে সাভারে জামান নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। একটি হত্যা মামলায় দুই আসামিকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে ২০০৩ সালের ১৫ অক্টোবর রায় দেয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা হাইকোর্টে আপীল করেন। তাদের মৃত্যুদন্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদন্ড অনুমোদন) শুনানির জন্য হাইকোর্টে আসে। শুনানি নিয়ে ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট রায়ে দুজনের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখে। এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপীল করেন। এরপর ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আপীল বিভাগের দেয়া রায়ে দুই আসামির মৃত্যুদন্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। একই সঙ্গে আদালত যাবজ্জীবন মানে আমত্যুদন্ড কারাবাসসহ সাত দফা অভিমত দেন। আপীল বিভাগের দেয়া এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামি আতাউর মৃধা পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন। ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল আপীল বিভাগে এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।