কাজিরবাজার ডেস্ক :
বন্যায় এ পর্যন্ত দেশের ২৮ জেলা প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে এখনও প্লাবিত রয়েছে ১৭ জেলা। ২৮ জেলার মধ্যে ১৬ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ৫১৬ জন মানুষ। এর মধ্যে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৩১ লাখ ২৩ হাজার ৩৭৮ জন এবং সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১৭ লাখ ৪৬ হাজার ১৩৮ জন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টারের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এখনও প্লাবিত থাকা জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে কুড়িগ্রাম, বগুড়া, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, শেরপুর, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, জামালপুর, চাঁদপুর, শরিয়তপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ। চাঁদপুরে ১৫০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কতজন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তার তথ্য নেই।
এদিকে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, ফেনী, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, নীলফামারী, লালমনিরহাট, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজারে পানি নেমে গেছে।
বন্যায় মোট একলাখ ৩৯ হাজার ৯৭৮ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোট ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির সংখ্যা পাঁচ লাখ ৩১ হাজার ৯৯৪টি এবং রাস্তাঘাটের ক্ষতি হয়েছে পাঁচ হাজার ২১৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পাহাড়ি ঢল, অতিবৃষ্টি, পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধস এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি বরাদ্দ পৌছে দেওয়া হয়েছে।
দেশের বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে গত ২৪ জুলাই পর্যন্ত ২৬ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন চাল, নগদ চার কোটি ২৮ লাখ টাকা, একলাখ ৮ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, আট হাজার ৫০০ সেট তাঁবু, দুই হাজার ৬০০ বান্ডিল ঢেউটিন, ৭৮ লাখ গৃহ নির্মাণ মঞ্জুরি, গো-খাদ্য বাবদ ১৬ লাখ টাকা, শিশু-খাদ্য বাবদ ১৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সারাদেশের বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল জানান, বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনও অভিযোগ বা সমস্যা নেই। তিনি বলেন, ‘রংপুর, কুড়িগ্রাম, কাউনিয়া, চিলমারী, রৌমারি, রাজিবপুর এলাকায় ঘুরেছি। কোথাও ত্রাণ নিয়ে কেউ কোনও অভিযোগ করেনি। জেলা প্রশাসকদের বলেছি, কোথাও ত্রাণ স্বল্পতা থাকলে বরাদ্দ দেওয়া হবে। যেখানে যা প্রয়োজন সেখানে সেই বরাদ্দ দেওয়া হবে। নতুন করে গো-খাদ্য ও শিশু-খাদ্য বরাদ্দ দিয়েছি। কোথাও সমস্যা নেই।’
১৯ পয়েন্টে বিপদসীমার ওপরে পানি : দেশের কুশিয়ারা, সুরমা, তিতাস, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, যমুনা, ঘাঘট, যমুনা, আত্রাই, ধলেশ্বরী ও পদ্মা নদীর ১৯টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে (সর্বোচ্চ) সুরমা নদীর পানি কমলেও বিপদসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর (সর্বনিম্ন) কুড়িগ্রামের নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকাল ৯টা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণাধীন ৯৩টি নদীর ৪২টি পয়েন্ট সংলগ্ন এলাকায় পানি বেড়েছে, কমেছে ৫০টি পয়েন্টে, অপরিবর্তিত রয়েছে একটি পয়েন্টে এবং বিপদসীমার ওপরে রয়েছে ১৯টি পয়েন্টে।
এক নজরে নদ-নদীর পরিস্থিতি : ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ধরলা এবং তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে, গঙ্গা, পদ্মা, সুরমা ও কুশিয়ারার পানি কমছে।
আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল ও বিহারের কিছু জায়গায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি বাড়া অব্যাহত থাকতে পারে। অন্যদিকে, পদ্মা, সুরমা ও কুশিয়ারার পানি কমা অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের নদীগুলোর পানি দ্রুত বাড়তে পারে। কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির সামান্য অবনতি হতে পারে। অন্যদিকে সিলেট, সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। নীলফামারী ও লালমনিরহাটের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।
বৃষ্টিপাতের তথ্য : বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বগুড়ায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৫৮ মিলিমিটার, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৮৪ মিলিমিটার, টেকনাফে ১২৮ মিলিমিটার, রোহানপুরে ৮১ মিলিমিটার, কুষ্টিয়ায় ৭৪ মিলিমিটার, নওগাঁর মহাদেবপুরে ৬৬ মিলিমিটার, দিনাজপুরে ৭৩ মিলিমিটার এবং রাজশাহীতে ৫৭ মিলিমিটার।