আজ ইয়াস ও মহাকাশে গ্রহের ত্রয়ী মিলন

10

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ বুধবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সঙ্গী হয়ে এসেছে জাগতিক গ্রহ। একই অক্ষরেখায় তাদের মিলিত অভিকর্ষে প্রকৃতির বিরল ঘটনা ঘটছে। উপমহাদেশের মানুষ শুধু ইয়াস নিয়ে আতঙ্কে আছে। একবিংশ শতকের প্রথম দুইদশকে মে মাসে প্রকৃতির তান্ডব হয়েছে বেশি। গত ক’বছর ধরে মে মাসে নানা ধরনের দুর্যোগ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যুর হার বেশি।
প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড়ের সূত্রপাত ১৯৭০ সালে। এর পরেরগুলো মাঝারি। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড়ের মহাতান্ডব বিশ্বের মানুষকে নাড়া দেয়। কক্সবাজারের মহেশখালী মাতারবাড়ি ধলঘাটার মানুষের কাছে এই ঝড়ের বর্ণনা শুনলে রোম শিউড়ে ওঠে। জলোচ্ছ্বাস যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তার চিত্র রেখে গেছে। এর অনেকটা পর দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের মানুষের ওপর আঘাত হানে সিডর। সিডরের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ২০০৯ সালের ২৫ মে আঘাত করে আইলা। ঝড়ে ক্ষতবিক্ষত মানুষের ঘা না শুকাতেই ২০১৯ সালের ১২ মে আঘাত হানে ফণী। বছর না ঘুরতেই ২০২০ সালের ২০ মে আঘাত করে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। প্রকৃতি কোন নিয়মে মে মাসকেই ঘূর্ণিঝড়ের জন্য বেছে নিচ্ছে এর উত্তর মেলে না।
এক বছর কেবল পেরিয়েছে এর মধ্যেই দ্রুত ধেয়ে আসছে ইয়াস। আজ যখন ইয়াস উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করার কথা তখনই চন্দ্রগ্রহণে ঢেকে যাবে দেশ। জাগতিক বিস্ময় এরপর- এই রাত ভরা পূর্ণিমার। চাঁদকে গ্রাসের পর এমন পূর্ণিমা বিরল। পূর্ণিমার এই মহাতিথিতে উপকূলীয় এলাকায় ভয়াবহ উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করতে তান্ডবের বহ্নিশিখায় ছুটছে ইয়াস। ৩০ বছর আগে ১৯৯১ সালের এপ্রিলের শেষে প্রলয়ঙ্করী ঝড়ের রাতে ছিল ভরা চাঁদের পূর্ণিমা। প্রকৃতির নিয়মে ভরা পূর্ণিমায় সমুদ্রের ঢেউ ২/৩ ফুট বেশি ওপরে ওঠে। এই সময় ঝড় শুরু হলে এই ঢেউ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ১৯৯১ সালে এমনটিই হয়েছিল। এ বছর এর চেয়ে বেশি জলোচ্ছাসের আশঙ্কা করছেন প্রকৃতি বিজ্ঞানী ও আবহাওয়াবিদগণ।
এর মধ্যেই জ্যোতির্বিজ্ঞানীগন দেখছেন প্রকৃতির আরেক ভয়াবহ রূপ! এই রাতের ভরা পূর্ণিমায় চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী একই অক্ষরেখায় অবস্থান করবে। ত্রয়ী মিলনের এমন অভিকর্ষ এবং ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে কি ঘটনা ঘটবে তার কোন আভাস কেউ দিতে পারেনি। তবে বিজ্ঞানীগণ বলছেন, এই ঘটনা বিরল। জাগতিক বিশ্বে ও মহাকাশে এমন কতকিছুই তো ঘটছে। কে কোনটার খোঁজ রাখে। কোন গ্রহ কোন অক্ষ রেখায় গেল কোথায় সমান্তরাল থাকল এতকিছু কে ভাবে। মহাকাশে কোন ধ্রবতারা ছিটকে পড়ল, কোন নক্ষত্র কক্ষচ্যুত হলো এ নিয়ে ভেবে হবেটা কী! যখন ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডব শুরু হয় তখন বোঝা যায় অক্ষ রেখা কক্ষপথ মহাকাশ গ্রহে কোন কিছু ঘটছে।
পৃথিবী উষ্ণায়নের পথে। তাপমাত্রা শুধুই বাড়ছে। দেশের ষড়ঋতু কোনটা কখন আসে চেনা যায় না। শীত কমছে না গ্রীষ্ম বাড়ছে। বারিধারা কমছে না বাড়ছে। উষ্ণমন্ডল না নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল না মরুকরণ। প্রকৃতির অঙ্কের সবই হেরফের। বিশ্বে ঘূর্ণিঝড় বড় একটি দুর্যোগ হয়ে দেখা দিচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঘূর্ণিঝড়গুলোর আগাম নাম দিচ্ছে। নামের প্রতিযোগিতা শুরু হয়- কে কত সুন্দর নাম দিতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ে মানুষের ধ্বংসলীলার মধ্যে নামের বাহারের প্রতিযোগিতা। বহুকাল আগে বীর আলেকজান্ডার বুঝি এই কারণেই তার সেনাপতিকে বলেছিলেন- সত্যিই সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ।