তুহিন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে সহপাঠি তায়েফের জবানবন্দী ॥ গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম

35

স্টাফ রিপোর্টার :
দক্ষিণ সুরমা আলমপুরের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিক্ষার্থী তানভির হোসেন তুহিন (১৯) হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে আটক হওয়া আবু কুতরত তায়েফ (১৮)।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তায়েফকে সিলেট মহানগর আমলী আদালত-৫ এর কাছে হাজির হাজির করলে সে হত্যার দায় স্বীকার করে ফৌজদারী আইনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে বলে জানান মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন। এরপর তায়েফকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
বুধবার রাতেই নগরীর কদমতলী এলাকার আব্দুল আলিমের পুত্র আবু কুতরত তায়েফকে আটক করে পুলিশ। ওই রাতেই নিহত তুহিনের চাচা নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে তায়েফসহ ১০ জনকে আসামী করে মোগলাবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা (৮ তারিখ-২৪/০৭/২০১৯) দায়ের করেন। ওই মামলায় তায়েফকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ ময়না তদন্ত শেষে নিহতের লাশ তার আত্মীয় স্বজনের কাছে হস্তান্তর করেছে।
গত বুধবার দুপুরে কথাকাটাকাটির জেরে সহপাঠিদের হাতে খুন হন তানভীর হোসেন তুহিন। নিহত তুহিন গোলাপগঞ্জ উপজেলার হেতিমগঞ্জের কোনাচর দক্ষিণভাগ পলিকাপন গ্রামের মানিক মিয়ার পুত্র।
ওসি আখতার হোসেন বলেন, মামলার অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতার করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
সেলিম হাসান কাওছার গোলাপগঞ্জ থেকে জানিয়েছেন : কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সহপাঠিদের হাতে খুন হওয়া তানভির হোসেন তুহিন (১৯) এর জানাযা শেষে দাফন করা হয়েছে। তুহিনের নৃশংস হত্যার ঘটনায় গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়ন সহ পুরো উপজেলা নেমে এসেছে শোকে ছায়া। তাকে শেষ বারের মতো বিদায় জানাতে জানাযায় যোগ দেন সহপাঠীসহ অসংখ্য শোকার্ত মানুষ। লাশ দেখে সহপাঠীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। নিহত তুহিন গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপাশা ইউপির কোনাচর দক্ষিণভাগ পলিতাপর গ্রামের সৌদি প্রবাসী মানিক মিয়ার ছেলে। সিলেট এমসি কলেজের ডিগ্রির প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। গেল রমজান মাসে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কম্পিউটার বিভাগে ৬ মাসের কোর্সে ভর্তি হয়। সে দুই ভাই বোনের মধ্যে ছোট ছিল। তার একমাত্র বড় বোন ছাবেরা খানম উর্মিও সিলেট এমসি কলেজের অনার্স ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী। গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ আছর লক্ষ্মীপাশা ইউপির কোনাচর শাহজালাল আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে তানভির হোসেন তুহিনের জানাযা সম্পন্ন হয়। জানাযায় নামাজ পড়ান-নিহতের চাচা মাওলানা জয়নাল আবেদীন। পরে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার তুহিনের এ্যাম্বুলেন্সবাহী লাশ ময়না তদন্ত শেষে দুপুর ২টায় বাড়ীতে পৌছার পর দেখা যায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। তুহিনের মমতাময়ী মা ও বোনের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। তাদের কান্নায় চোখ ভিজে উঠে স্বজন ও সমবেদনা জানাতে আসা মানুষের। সহপাঠিদের ছুরিকাঘাতে তুহিনের মৃত্যুতে পুরো বাড়ি স্তব্ধ হয়ে গেছে! পরিবারের সদস্যরা সবাই মুষড়ে পড়েছেন। অকালে বুকের ধন হারিয়ে দিশেহারা তার বাবা-মা ও বোন। তবে নিহত তুহিনের বাবা মানিক মিয়া দেশে নেই। এ ঘটনায় নিহত তুহিনের কয়েকজন (সহপাঠি) ঘনিষ্ঠ বন্ধুও গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় আহত হওয়া একই ইউনিয়নের শ্রীবহর গ্রামের মৃত মাতাব মিয়ার ছেলে জিহাদ আহমদের জ্ঞান ফিরার পর বিকাল সাড়ে ৪টায় বন্ধু তুহিনের লাশ দেখতে এসে কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যান। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার জ্ঞান ফিরেনি।