রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান

11

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোতে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তাদের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কক্সবাজার ও আশপাশের এলাকার স্থানীয় মানুষ চরম দুর্দশাগ্রস্ত দিন কাটাচ্ছে। অথচ এই ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়কে কাজে লাগিয়ে কিছু বড় শক্তি নানাভাবে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করে এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরির অপচেষ্টাও করা হচ্ছে। সম্প্রতি একজন মার্কিন কংগ্রেসম্যান মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করার যে প্রস্তাব করেছেন, সে প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা শান্তিতে বিশ্বাসী। সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী। কারো ভূখণ্ড আমাদের চাই না।’ কংগ্রেসম্যানকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত প্রস্তাব না করে সংকট সমাধানে ভূমিকা রাখুন।’ সাম্প্রতিক চীন সফর সম্পর্কে জানাতে গত সোমবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি মানবিক কারণে। এখন আমরা চাই উপযুক্ত পরিবেশে প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান হোক। চীন আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করতে তারা সম্ভাব্য সব কিছু করবে।’
কংগ্রেসম্যান ব্রাডলি শেরমান যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলসংক্রান্ত সাবকমিটির চেয়ারম্যান। তিনি কিভাবে এমন প্রস্তাব করেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থ জবাবই দিয়েছেন। এর আগে মিয়ানমারও এই প্রস্তাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সম্প্রতি গ্যাসের যে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে শিল্পায়ন হচ্ছে। শক্তির চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়েছে। প্রবৃদ্ধি দুই সংখ্যায় নিয়ে যেতে হলে এবং জনসংখ্যার কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হলে আরো শিল্পায়ন প্রয়োজন। পাইপলাইনে কারো কাছ থেকে গ্যাস আনার সুযোগ নেই। তাই বাধ্য হয়ে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। ৬১ টাকা ১২ পয়সা দরে এলএনজি আমদানি করে ৯ টাকা ৮৯ পয়সায় দিচ্ছি। দাম বাড়ানোর পরও ১০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। তিনি প্রশ্ন করেন, তাহলে আমাদের সামনে উপায় কী? এলএনজি আমদানি বন্ধ করে শিল্পায়নকে থামিয়ে দেওয়া? অবকাঠামোসহ নানা খাতে যে উন্নয়ন হচ্ছে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া?’ প্রতিবেশী দেশ ভারতে গ্যাসের দাম কম বলে যে অপপ্রচার রয়েছে, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতে আবাসিকে এক ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩০-৩৭ টাকা, শিল্পে ৪০-৪২ টাকা এবং সিএনজির দাম ৪৪ টাকা।
আমরা চাই রোহিঙ্গা সমস্যার ন্যায়সংগত ও যুক্তিযুক্ত সমাধান। দেশে উন্নয়নের যে গতি সূচিত হয়ে তাকে আরো ত্বরান্বিত করতে হবে। অন্যদিকে জনগণের ওপর যেন অযৌক্তিক চাপ সৃষ্টি না হয় সেদিকেও প্রয়োজনীয় দৃষ্টি রাখতে হবে।