স্পোর্টস ডেস্ক :
একদিকে ছিলেন বর্তমান বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে দুই বড় তারকার একজন লিওনেল মেসি। অন্যদিকে ইনজুরির কারণে ছিলেন না সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার নেইমার। সঙ্গত কারণেই কোপা আমেরিকা ফুটবলে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সেমিফাইনাল মহারণে মেসির দলকেই এগিয়ে রেখেছিলেন বোদ্ধারা!
কিন্তু কাগজে-কলমে এগিয়ে থাকলেও ময়দানী লড়াইয়ে পেলের দেশের ফুটবলারদের কাছে পাত্তাই পাননি দিয়াগো ম্যারাডোনার উত্তরসূরিরা। বলতে গেলে আর্জেন্টিনাকে বলে কয়ে ২-০ গোলে হারিয়ে চলমান ৪৬তম কোপা আমেরিকা ফুটবলের ফাইনালে নাম লিখিয়েছে স্বাগতিক ব্রাজিল। বুধবার সকালে ব্রাজিলের অন্যতম বড় শহর বেলো হরিজন্টের এস্টাডিও মিনেইরো স্টেডিয়ামে রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হয়ে গোল দু’টি করেন ইংলিশ ক্লাবে খেলা দুই ফরোয়ার্ড গ্যাব্রিয়েল জেসুস (ম্যানচেস্টার সিটি) ও রবার্টো ফিরমিনো (লিভারপুল)।
এর ফলে নেইমারকে ছাড়াই ব্রাজিল কোপা আমেরিকায় একযুগ অর্থাৎ ১২ বছর পর ফাইনালে উঠেছে। এই আসরে আটবারের চ্যাম্পিয়নরা সর্বশেষ শিরোপা জিতেছে সেই ২০০৭ সালে। পরের দুটি আসরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয়ার পর ২০১৬ সালে শতবর্ষী আসরে গ্রুপপর্ব থেকেই ছিটকে গিয়েছিল। এখন ১২ বছর পর শিরোপা পুনরুদ্ধারের হাতছানি বিখ্যাত হলুদ জার্সিধারীদের। এবার পুরো আসরেই ব্রাজিলের জমাট রক্ষণভাগ দৃষ্টি কেড়েছে সবার। এখন পর্যন্ত টাইব্রেকার বাদে ব্রাজিলের জালে কোন দল বল জড়াতে পারেনি। থিয়াগো সিলভার নেতৃত্বে ব্রাজিল ডিফেন্স সামলে চলেছেন অধিনায়ক দানিয়েল আলভেস, মারকুইনহোস, এ্যালেক্স সান্ড্রো, কাসেমিরোরা। সেই সঙ্গে গোলপোস্টে এ্যালিসন বেকার তো দুর্ভেদ্য দেয়াল সৃষ্টি করেছেন। কেন তাকে বর্তমানে বিশ্বসেরা গোলরক্ষক বলা হয় সেই প্রমাণ সেমিতেও রেখেছেন। মেসির একটি দুর্দান্ত ফ্রিকিক সেভ করা ছাড়াও পুরো ম্যাচে লিভারপুলে খেলা গোলরক্ষক ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। ম্যাচে আর্জেন্টিনার ফুটবলারদের তেমন খুঁজেই পাওয়া যায়নি! মেসিকে বাক্সবন্দী করে রাখায় অন্যরাও ছিলেন নিজেদের ছায়া। পুরো মাঠে শুধু এলোমেলো ছুটোছুটি করতে দেখা গেছে পাজেলা, পল, মার্টিনেজ, এ্যাগুয়েরোদের। ব্রাজিলের গোছানো ফুটবলের সামনে বেশিরভাগ সময়ই অসহায় দেখা গেছে লিওনেল স্কালোনির শিষ্যদের। যে কারণে প্রায়শই অযথা ফাউল করতে দেখা গেছে তাদের। সবচেয়ে বড় কথা, আর্জেন্টাইন ফুটবলারদের শারীরিক ভঙ্গিমাতেই কেমন যেন অসহায়ত্ব লক্ষ্য করা গেছে! শুরু থেকে ব্রাজিল গোছানো ফুটবল খেললেও ম্যাচের প্রথম সুযোগটি পেয়েছিলেন আর্জেইন্টান মিডফিল্ডার লিওনার্দো পারেডেস। ৩০ গজ দূর থেকে তার দুর্দান্ত শট ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক এ্যালিসনের মাথার ওপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। ১৯ মিনিটে আলভেসের দুর্দান্ত প্রচেষ্টায় এগিয়ে যায় ব্রাজিল। ফিরমিনোর দিকে বল বাড়িয়ে দেয়ার আগে আলভেস তিনজন আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়কে পরাস্ত করেন। লিভারপুল ফরোয়ার্ড ফিরমিনোর ডানদিকের নিখুঁত ক্রসে অনেকটা ফাঁকায় দাঁড়ানো জেসুস আলতো ছোঁয়ায় বল জালে জড়ান (১-০)। ৩০ মিনিটে মেসির ফ্রিকিক থেকে সার্জিও এ্যাগুয়েরোর হেড বারপোস্টে লেগে প্রতিহত হয়। এরপর মেসির পাস থেকে এ্যাগুয়েরোর শট মারকুইনহোস দক্ষতার সঙ্গে না ফেরালে আর্জেন্টিনা তখনই সমতা ফেরাতে পারতো। কিছুক্ষণ পর মেসি ডানদিকে দু’জনকে পরাস্ত করে গোলে শট নিলেও ব্যর্থ হন। বিরতির পর ম্যাচে ফিরতে ব্রাজিলের ওপর শুরু থেকেই চাপ সৃষ্টি করতে থাকে আর্জেন্টিনা। এ্যাগুয়েরোর পাস থেকে লটারো মার্টিনেজের বাম পায়ের ভলি সহজেই আটকে দেন এ্যালিসন। ৬৬ মিনিটে মেসির ফ্রিকিক দারুণ দক্ষতায় লুফে নেন ব্রাজিল কিপার। এর মধ্যে কোচ স্কালোনি মিডফিল্ডার মার্কোস এ্যাকুনার পরিবর্তে উইঙ্গার এ্যালেঞ্ঝল ডি মারিয়াকে মাঠে নামান। কিন্তু ডি মারিয়াকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। ৭১ মিনিটে কাউন্টার এ্যাটাক থেকে দু’জন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে জেসুস বল বাড়িয়ে দেন ফিরমিনোকে। নিখুঁত পাস থেকে ঠা-া মাথায় বল জালে জড়াতে ভুল করেননি লিভারপুল তারকা (২-০)। মূলত এই গোলের পর আর্জেন্টিনার ম্যাচে ফেরার স্বপ্ন নস্যাৎ হয়ে যায়।
ম্যাচ শেষে ব্রাজিল অধিনায়ক দানি আলভেস বলেন, লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে এটি আরেকটি ধাপ। এবারের আসরে যে ধরনের লক্ষ্যস্থির করা হয়েছে তার সবকিছুই আমরা অর্জন করতে পারছি। অনেকেই আমাদের নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমাদের নিজেদের ওপর, নিজেদের পরিকল্পনা ও কঠোর পরিশ্রমের ওপর বিশ্বাস ছিল। দিনে দিনে আমরা যে স্বপ্নের বীজ বুনছি এখন সময় এসেছে তার ফল ভোগ করার। ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা জেসুস বলেন, আমি জানতাম গোল পাব। এই আত্মবিশ্বাস ছিল আমার। অন্যদিকে আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা এমন একটি দল যাদের অবশ্যই ফাইনালে যাওয়া উচিত ছিল। এটা আমাদের প্রাপ্য ছিল। কিন্তু কখনও কখনও ফুটবলে খুবই অন্যায্য কিছু ঘটনা ঘটে। এর মধ্য দিয়ে আর্জেন্টাইন বস রেফারিং নিয়ে নিজের অসন্তোষের কথা জানান।