কাজিরবাজার ডেস্ক :
হজ্বযাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা না করার জন্য হাবের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, তারা আল্লাহর মেহমান। তাদের সর্বোচ্চ সম্মান, মর্যাদা ও সেবা নিশ্চিত করতে হবে। হজ্বযাত্রীরা নিজের টাকায় হজ্বে যান, তারা কারও দয়ায় হজ্বে যান না। বরং হজ্বযাত্রীদের মাধ্যমে আপনারা ব্যবসা করেন।
রাষ্ট্রপতি মঙ্গলবার রাজধানীর আশকোনায় হজ্ব কার্যক্রম ২০১৯ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমাদের দেশে হজ্ব ব্যবস্থাপনায় বেসরকারী হজ্ব এজেন্সিগুলোর ভূমিকা বিশাল। কারণ হজ্বযাত্রীদের ৯৫ শতাংশের বেশি হজ্ব এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে সৌদি আরবে গমন করেন। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, অনেক এজেন্সি যেসব সুযোগ সুবিধার কথা বলে তাদের মক্কা-মদীনায় নিয়ে যান, ওখানে যাওয়ার পর তা আর রক্ষা করেন না। ফলে হাজীদের অবর্ণনীয় দুর্দশার মধ্যে পড়তে হয়। আবার অনেক সময় দেখা যায়, হজ্বযাত্রীদের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে একটি অসাধু চক্র সটকে পড়ে। সব কিছু পরিশোধ করেও হজ্ব যাত্রীগণ যখন তাদের হজ্বযাত্রায় অনিশ্চয়তা দেখেন তখন তারা বাধ্য হয়েই অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেন। শেষ সময়ে সরকারের হস্তক্ষেপে সেসব হজ্বযাত্রীদের হজ্বে পাঠাতে হয়েছে। এহেন কার্যক্রম দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করে। হাজীদের সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণা মোটেই কাম্য নয়। তিনি উপস্থিত হাব নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে অনুরোধ করে বলেন, মক্কা-মদীনায় অবস্থানকালীন সময়ে হাজী সাহেবানদের যাতে কোন ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হতে না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আপনাদের মনে রাখতে হবে, হজ্ব যাত্রীরা কারোর দয়া বা করুণার বিনিময়ে হজ্বে যান না। বরং হজ্বযাত্রীদের মাধ্যমে আপনারা ব্যবসা করেন। তাই ব্যবসার নামে প্রতারণা করবেন না। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এখন থেকে কোন ব্যক্তি বা এজেন্সি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ ধরনের কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে সরকার কঠোর হতে পিছপা হবে না।
একই সঙ্গে তিনি হজ্ব ব্যবস্থাপনায় সম্পৃক্ত সরকারী কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর দায়িত্ব পালনে অবহেলা অনিয়ম দুর্নীতি পরিলক্ষিত হলে তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি হজ্বযাত্রীদের বাংলাদেশের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, হজ্ব উপলক্ষে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভ্রাতৃপ্রতিম হাজীদের সঙ্গে আপনাদের সাক্ষাত হবে। ভ্রাতৃত্বের এ মহামিলন পরস্পরের মধ্যে সম্প্রীতি সৌহার্দ্যরে বন্ধন সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আপনার শুভেচ্ছা দূত হিসেবে বাংলাদেশকে তুলে ধরবেন। আপনাদের আচার আচরণ কথা বার্তায় কেউ যাতে কষ্ট না পায় আমাদের সম্পর্কে যাতে কোন নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি না হয় সে দিকে বিশেষ খেয়াল রাখবেন।
মোঃ আবদুল হামিদ হজ্বযাত্রীদের কাছে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি ও কল্যাণের জন্য দোয়া চেয়ে বলেছেন, আপনারা বিশ্বমানবতার মুক্তি ও কল্যাণের জন্য দোয়া করবেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট শেখ আব্দুল্লাহ, স্থানীয় সংসদ সদস্য এডভোকেট সাহারা খাতুন, সচিব শাহাদাত হোসেন তসলিম, বিমান সচিব মুহিবুল হক, ধর্ম সচিব আনিসুর রহমান ও ঢাকার সৌদি দূতাবাসের হারাকান হুয়াইদি বিন শুয়াইয়াহ।
বিমানমন্ত্রী এডভোকেট মাহবুব আলী বলেছেন, এ বছর বিমানের সব টিকিট আগাম বিক্রি হয়ে গেছে। হাজীদের জন্য অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ অপারেট করা হবে।
ধর্মপ্রতিমন্ত্রী এডভোকেট শেখ আব্দুল্লাহ বলেছেন, অবিশ্বাস্য প্রচেষ্টায় এবার ঢাকা এয়ারপোর্টেই জেদ্দা এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশান করা হবে। এজন্য সৌদি টিম ইতোমধ্যে ঢাকায় এসে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। এতে হাজীদের আর জেদ্দায় দুর্দশার শিকার হতে হবে না। হাব মহাসচিব শাহাদত হোসেন তসলিম বলেছেন, বাহাত্তর সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বন্ধুপ্রতিম ভারতের সহায়তায় সাড়ে ছয় হাজার হজ্বযাত্রীকে সৌদি পাঠিয়ে হজ্বের কার্যক্রম শুরু করেন। আজ তারই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে হজ্বযাত্রীর সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ২৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এটা বিশাল অর্জন। এতে প্রমাণিত হয় দেশের আর্থ সামাজিক ও ধর্মীয় চেতনা কতটা সমৃদ্ধ হয়েছে।