নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর তিন হাজার ২শ’ কোটি টাকার সহায়তা ঘোষণা

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রাণঘাতী করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জারি করা বিধিনিষেধের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের মানুষের সহায়তায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার পাঁচটি নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। প্রথম দফা করোনা মহামারীর ধাক্কা সামলে দেশের অর্থনীতি যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সহায়তায় সোয়া এক লাখ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দিয়েছিল। তার সঙ্গে এবার নতুন পাঁচটি প্যাকেজ যুক্ত হওয়ায় মোট সহায়তার পরিমাণ এক লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেল। করোনার অতি সংক্রামক ডেল্টা ধরনের বিস্তারে দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই হু হু করে বাড়তে থাকায় গতবারের মতো এবারও লকডাউনের বিধিনিষেধ আরোপ করতে হয়েছে সরকারকে। এপ্রিলে এক দফা লকডাউন চলার পর গত ১ জুলাই থেকে দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
পবিত্র পবিত্র ঈদুল আযহা সামনে রেখে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সকল বিধিনিষেধ শিথিল করা হলেও ২৩ জুলাই সকাল থেকে ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত আবারও আগের মতো বিধিনিষেধ কার্যকর হবে। সংক্রমণ এড়াতে এই বিধিনিষেধের মধ্যে যানবাহন এবং জনসাধারণের চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা, যাদের প্রতিদিনের আয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়।
তাছাড়া মহামারীর শুরুর পর গত ষোল মাসের মধ্যে অর্ধেক সময় পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় এ খাতের উদ্যোক্তারা বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কর্মীদের বেতন দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। এসব দিক বিবেচনা করেই নিম্ন আয়ের মানুষের সহায়তায় তিন হাজার দুশ’ কোটি টাকার নতুন পাঁচটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত নতুন পাঁচটি প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে- লকডাউনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এক লাখ ৩৭ হাজার ৩৮৯ জন দিনমজুর, ২ লাখ ৩৫ হাজার ৩৩ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫০ হাজার ৪৪৫ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং ১ হাজার ৬০৩ জন নৌপরিবহন শ্রমিকদের জন্য জনপ্রতি নগদ আড়াই হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তার জন্য ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এ প্যাকেজের আওতায় দেশের মোট ১৭ লাখ ২৪ হাজার ৪৭০ জন নিম্ন আয়ের মানুষ সরকার থেকে এ সহায়তা পাবেন।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দ্বিতীয় দফা প্যাকেজের মধ্যে শহর এলাকার নিম্নআয়ের জনসাধারণের সহায়তার লক্ষ্যে ২৫ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত ১৪ দিন ৮১৩টি কেন্দ্রে বিশেষ ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বরাদ্দ ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এতে ২০ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ১৪ হাজার মেট্রিক টন আটা বরাদ্দ করা হয়েছে।
তৃতীয় দফা প্রণোদনা অনুযায়ী ৩৩৩ নম্বরে জনসাধারণের অনুরোধের প্রেক্ষিতে খাদ্য সহায়তা দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে ১০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ করা হয়েছে।
চতুর্থ দফা প্রণোদনার মধ্যে রয়েছে- গ্রামীণ এলাকার কর্মসৃজনমূলক কার্যক্রমে অর্থায়নের জন্য পল্লী সংস্থান ব্যাংক ও পিকেএসএফ-এর মাধ্যমে ঋণ সহায়তা দিতে (৪ শতাংশ সুদে) ইতিপূর্বে প্রদত্ত ৩ হাজার ২শ’ কোটি টাকার অতিরিক্ত আরও এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত পঞ্চম দফা প্রণোদনার আওতায়- পর্যটন খাতের হোটেল, মোটেল, থিম পার্কের জন্য কর্মচারীদের বেতন/ ভাতা পরিশোধের লক্ষ্যে ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে ৪ শতাংশ সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ সহায়তা দিতে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, করোনা মহামারীর ধাক্কা সামলাতে সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ চাহিদা অনুযায়ী বাড়ানো হবে বলে আগেই জানানো হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, গতবছর ঘোষিত ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত চলবে। এ বছর, আগামী বছরও চলবে। যদি প্রয়োজন হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, উনি আরও প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে আসবেন।
গতবছর সরকারের ঘোষিত ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজে বরাদ্দ ধরা হয়েছিল এক লাখ ২৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬টি প্যাকেজের ৪০ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা সরাসরি বাজেট থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়। এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে বাস্তবায়ন হয় এর ৭০ শতাংশের কাছাকাছি।
আগের ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে ছয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক বাস্তবায়ন করছে। সেখানে বরাদ্দ প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা পুরো প্যাকেজের ৭০ শতাংশ। অবশিষ্ট ৩০ শতাংশের ৩৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে, তার মুনাফা ও ভর্তুকি বাবদ বছরে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বাজেট থেকে দেয়া হবে বলে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।