জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বাজেট পাস

37

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে নির্দিষ্টকরণ বিল ২০১৯ পাসের মধ্য দিয়ে রবিবার জাতীয় সংসদে নতুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে। বাজেট পাসের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ আগামী ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্য অর্থবছরে সরকারের ব্যয় নির্বাহের জন্য ৬ লাখ ৪২ হাজার ৪৭৮ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকা সংযুক্ত তহবিল থেকে ব্যয় করার অনুমতি দিয়েছে। উল্লেখ্য, সরকারের ব্যালেন্স শীট অনুযায়ী এটি গ্রস বাজেট, যা পুরোপুরি ব্যয় হবে না; ব্যয় হবে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল গত ১৩ জুন ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার যে নিট বাজেট দিয়েছেন তা। সরকারের কিছু বাধ্যবাধকতার কারণে গ্রস বাজেটে অনেক ব্যয় দেখাতে হয়, যা ব্যয় হয় না। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে আজ সোমবার ১ জুলাই থেকে এই বাজেট বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। বাজেট পাস উপলক্ষে রবিবার সকাল ১০টায় স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে দেয়া বরাদ্দের অনুমোদন পেতে ৫৯ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা মোট ৫৯টি মঞ্জুরি দাবি সংসদে উত্থাপন করেন। দাবিগুলো নিষ্পত্তি শেষে বাজেট পাসের জন্য অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল নির্দিষ্টকরণ বিল ২০১৯ সংসদে পেশ করেন। উপস্থিত সদস্যরা কণ্ঠভোটে সর্বসম্মতিক্রমে অর্থমন্ত্রীর এই আইন অনুমোদনের মধ্যদিয়ে বাজেট পাস করে দেন। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদসহ সরকার ও বিরোধী দলের অধিকাংশ সদস্যই এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বাজেট বরাদ্দ কাটছাঁটের জন্য প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিরোধী দল বিএনপি ও গণফোরামের সদস্যরা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের উত্থাপিত ৫৭টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে ৪৮৪টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন। নিয়ম অনুযায়ী সব দাবির ওপর আলোচনার সুযোগ থাকলেও সময়স্বল্পতার কারণে সরকার ও বিরোধী দলের হুইপের মধ্যে সমঝোতা অনুযায়ী ৪টি মঞ্জুরি দাবির ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়। দাবিগুলো হলো- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়। এসব দাবির ওপর আনা ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেন জাতীয় পার্টির বেগম রওশন আরা মান্নান, মোঃ ফখরুল ইমাম, কাজী ফিরোজ রশীদ, রুস্তম আলী ফরাজী, পীর ফজলুর রহমান, বিএনপির হারুনুর রশীদ ও রুমিন ফারহানা এবং গণফোরামের মোকাব্বির খান। মূলত তাদের ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো হলো নীতি অনুমোদন, মিতব্যয় ও প্রতীক ছাঁটাই। এসব ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা সরকারের এই মন্ত্রণালয়, বিভাগগুলোর অনিয়ম ও দুর্নীতির সমালোচনা করেন। আলোচনা শেষে মঞ্জুরি দাবিগুলো কণ্ঠভোটে সংসদে গৃহীত হয়। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা আলোচনা শেষে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট পাস হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারী ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়িয়ে ইতিহাসের সর্ববৃহৎ বাজেট পেশ করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। বাজেট পাসের পর অর্থমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সন্ধ্যায় আয়োজিত নৈশভোজে যোগদানের জন্য সকল সংসদ সদস্যকে আমন্ত্রণ জানান। এর পর স্পীকার আগামী ৭ জুলাই রবিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত সংসদ অধিবেশন মুলতবি করেন।
অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল গত ১৩ জুন জাতীয় সংসদে ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করেন। প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয় গত ১৮ জুন থেকে। গত ১০ দিনে বাজেটের ওপর এবার রেকর্ডসংখ্যক সংসদ সদস্য আলোচনায় অংশ নেন। গত ২৯ জুন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শেষ হয়। প্রায় ৫২ ঘণ্টার এই আলোচনায় মোট ২৫৫ সদস্য অংশ নেন। এর মধ্যে সরকারী দলের ২২৭ এবং বিরোধী দলের ২৮ জন। গত বছর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের ওপর আলোচনা হয়েছিল প্রায় ৪৫ ঘণ্টা। ওই আলোচনায় সরকারী দলের ১৬৫ ও বিরোধী দলের ৪২ মিলে মোট ২০৭ সংসদ সদস্য অংশ নিয়েছিলেন। আলোচনা শেষে শনিবার ২৯ জুন সংসদে অর্থবিল-২০১৯ পাস হয়। যে বিলে করসংক্রান্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
নির্দিষ্টকরণ বিল পাসের মাধ্যমে সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত ৬ লাখ ৪২ হাজার ৪৭৮ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে সংসদের ওপর দায় এক লাখ ৬১ হাজার ৯৬৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এই টাকা অনুমোদনের জন্য সংসদ কর্তৃক কোন ভোটের প্রয়োজন হয় না। সরাসরি সংসদ এই টাকা অনুমোদন করে দেয়। অবশিষ্ট ৪ লাখ ৮০ হাজার ৫১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ভোটের মাধ্যমে সংসদে গৃহীত হয়।
সংসদে পাসকৃত এই বাজেটটি মূলত গ্রস বাজেট। বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও অন্যান্য খাতে বাজেটে সরকারের কিছু অর্থ বরাদ্দের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যা কখনও ব্যয় হয় না; যা বাজেটের আয়-ব্যয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে হিসাবে মেলানো হয়। এই বাধ্যবাধকতার কারণে এবারের বাজেটেও এক লাখ ১৯ হাজার ২৮৮ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকা বাজেটে অতিরিক্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা ব্যয় হবে না। ১৩ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী যে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করেছেন সেটাই ব্যয় হবে। সেটাই আগামী অর্থবছরের নিট বাজেট।
কৃষিকে বহুমুখীকরণ করতে হবে : কৃষি খাতে বরাদ্দের বিরুদ্ধে ছাঁটাই প্রস্তাব দিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ ও খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশ হলেও কৃষক উৎপাদিত ফসলের দাম পাচ্ছেন না। ধানের দাম না পেয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা কোথাও কোথাও ঘটেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপীরা নিয়ে গেলেও সামান্য ঋণ নেয়ার কারণে ৪৫ হাজার কৃষকের বিরদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। কৃষকদের ঋণ কখনও মওকুফ করা হয় না। অথচ ঋণখেলাপীদের বিরদ্ধে মামলা হয় না। সরকারকে কৃষকবান্ধব হতে হবে, মিলারবান্ধব নয়। কৃষকের ঋণের সুদ মওকুফ ও পর্যাপ্ত ভর্তুকি দিতে হবে।
জবাবে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব এবং নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বলেই উৎপাদন কয়েকগুণ বেড়েছে। এখনও ৪০ ভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশে রফতানি আয় অনেক বেশি। রফতানিকে বহুমুখী করতে না পারলে অর্থনীতি বিকশিত হবে না। কৃষিকে যদি বাণিজ্যকরণ করতে পারি তবে রফতানিকে বহুমুখী করতে পারব। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে সারের দাবি করায় ১৮ কৃষককে গুলি করে হত্যা করা হয়। বিদ্যুত চাইতে গেলে ২০ কৃষককে গুলি করে হত্যা করা হয়। বিশ্বের সকল দাতা সংস্থার বিরোধিতা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী কৃষিতে ভর্তুকি দিয়েছেন। দৃঢ়কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা ভর্তুকি নয়, আমরা কৃষিতে বিনিয়োগ করছি। গত ১০ বছরে সারের দাম এক টাকাও বাড়েনি। এ কারণে দেশ শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, উদ্বৃত্তের দেশ। সকল কৃষিপণ্য উৎপাদনে সারাবিশ্বে ঈর্ষনীয় স্থান অর্জন করে নিয়েছে বাংলাদেশ। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণে প্রয়োজনে ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শিক্ষার মান অবশ্যই বাড়াতে হবে : শিক্ষা খাতে বরাদ্দের বিরোধিতা করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা বলেছেন, যখন একটি সরকার একদশক ধরে ক্ষমতায় থাকার পরও বিদেশ থেকে শিক্ষক আনতে চায়, সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার থাকে না। প্রাথমিক শিক্ষার মান বাড়াতে সরকার-বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি শিক্ষা উন্নয়ন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে বলেন, লন্ডনভিত্তিক একটি সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনের জরিপ অনুযায়ী, এশিয়ার শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপিন্সসহ কয়েকটি দেশ থাকলেও আমাদের দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই। শিক্ষার মান ক্রমেই কমে যাচ্ছে।
এসব অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেন, যারা (জিয়াউর রহমান) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রণক্ষেত্র করে, শিক্ষার্থীদের হাতে মাদক তুলে দেয়, হিজবুল বাহারে মেধাবী ছাত্রদের বিপথগামী করে। যারা এসব অনৈতিক কাজ করে তাদের কাছে নৈতিকতার ছবক নেয়া একটু হাস্যকরই মনে হয়। বিএনপি-জামায়াতের আমলে নিয়মবিরুদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এখন সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাচাই করার সময় এসেছে।
তিনি বলেন, আমরা রাষ্ট্র পরিচালনায় আছি। আর আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের সেই ক্ষমতার অপব্যবহার আমরা দেখেছি। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ একমাত্র বঙ্গবন্ধু সরকার করেছে আর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার করেছে। আর কেউ করেননি। বিএনপি-জামায়াতের আমলে কোথাও কোথাও এমপিওভুক্ত করা হলেও এমপিওভুক্ত করার ব্যাপারে তারা বৈষম্য করেছে। কোন কোন প্রভাবশালী মন্ত্রী নিজ এলাকায় একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেছেন। যেগুলোর মান ঠিক নেই, শিক্ষক নেই। তারা নিয়মের বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেছে। কাজেই অতীতের সকল এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মান যাচাই করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। শিক্ষার মান বাড়াতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন : স্বাস্থ্য খাতের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে ছাঁটাই প্রস্তাব দিয়ে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বলেন, বিএনপি আমলে ডাক্তাদের দলীয়করণের কারণে দেশের স্বাস্থ্য খাতের এই অবস্থা। চিকিৎসা নিতে মানুষ বিদেশে যাচ্ছে। সাত হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে বিদেশে চিকিৎসার জন্য। কিন্তু দেশেও ভাল চিকিৎসা হচ্ছে। তবে দেশের চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে মানুষ দরিদ্র হচ্ছে। সবাই ঢাকার কোন না কোন হাসপাতালে এ্যাটাচমেন্ট থাকে। এই এ্যাটাচমেন্ট বন্ধ করুন। মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি বন্ধ করুন।
জবাবে মন্ত্রী স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন তুলে ধরে বলেন, স্বাস্থ্য সেবা মানুষের দোড়গোড়ায় নিয়ে গেছে। বিএনপি কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছিল। সেখানে গুরু পালিয়েছে। আমরা ফের সেটা চালু করেছি। বাংলাদেশে রাতকানা রোগ নেই। টিকাদান শতভাগ অর্জিত হয়েছে। আমেরিকায় বর্তমানে গড় আয়ু ৭৮ বছর। ইনশাল্লাহ! আমরা দ্রুতই সেই পর্যায়ে উন্নীত হব। সরকারী খাতে ৩৫টি মিলে প্রায় ১০০টি মেডিক্যাল কলেজ। বিএনপি-জামায়াত আমলে ১৫টিও ছিল না। বিএনপি-জামায়াত শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট গঠন করে পোড়া মানুষকে চিকিৎসা দিয়ে বাঁচিয়েছেন। সকল রোগের চিকিৎসাই এখন বাংলাদেশে হচ্ছে। বেশিরভাগ মানুষই বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। একমাত্র ধনাঢ্য ব্যক্তি ছাড়া কেউ বিদেশে চিকিৎসা নিতে যায় না। ক্ষমতায় থাকতে খালেদা জিয়া-তারেক রহমানরা কখনও দেশে চিকিৎসা নেননি, তাদের মুখে চিকিৎসা নিয়ে কোন কথা মানায় না।
বাংলাদেশ এখন দুর্যোগসহনীয় রাষ্ট্র : ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে বিরোদী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সদস্যরা বলেন, নারীদের প্রতি বৈষম্য কর হয় বরাদ্দ প্রদানে। এই বৈষম্য দূর করার দাবি জানান। বিশেষ বরাদ্দ নিয়ে স্বচ্ছতার প্রশ্ন আছে। বরাদ্দ প্রদানে দুর্নীতি হচ্ছে। সোলার প্রদানে বেশি দাম নেয়া হচ্ছে। একটি বিশেষ কোম্পানি থেকে সোলার নিতে বাধ্য করায় বেশি দাম নেয়া হয়। এতে অর্থের অপচয় হচ্ছে। শহরে সোলার কমিয়ে গ্রামে বরাদ্দ দেয়া উচিত। মন্ত্রীর প্রশংসা করে সদস্যরা বলেন, মন্ত্রণালয়ের সমস্যা অনেক। ডিসিদের কাছ থেকে তালিকা নিতে হয়। এতে সংসদ সদস্যদের অবমূল্যায়ন করা হয়। ঈদের সময় ত্রাণ দেয়া হয়। কিন্তু তালিকা অনুয়ায়ী দেয়া হয় না। দেয়া হয় স্লিপ অনুযায়ী। এতে অনিয়ম হয়। টিআর, কাবিখার বরাদ্দ যাতে সঠিকভাবে হয় তার নজরদারি করুন।
জবাবে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবেলায় বিশ্বে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন দুর্যোগসহনীয় রাষ্ট্র, প্রাকৃতিক দুর্যোগকে আমরা আর ভয় পাই না। বড় বড় দুর্যোগে মৃতের সংখ্যা আমরা নগণ্য পরিমাণে নামিয়ে আনতে পেরেছি। বিএনপি-জামায়াত সরকার ঘুমিয়েছিলেন বলে তাদের আমলে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ভয়াল প্রাকৃতিক দুর্যোগে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে, শত শত কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে। আসলে বিএনপি সরকার ছিল ঘুমন্ত।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে মানবিক আশ্রয় ও সাহায্য দিয়ে সারাবিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হেফাজতের ওপর ভর করে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার শত শত কোরান শরীফ পুড়িয়েছে, নির্বাচন ঠেকানো ও আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তাদের মুখে সমালোচনা মানায় না। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার আরও তিনশটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করবে। মানুষের সঙ্গে প্রাণী সম্পদ রক্ষায় আরও ৫শ’টি মুজিব কেল্লা নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। গৃহহীনদের জন্য ৩ হাজার দুর্যোগসহনীয় ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। জাপানের মতো বাংলাদেশকেও দুর্যোগসহনীয় দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
বাজেটে খাতওয়ারি বরাদ্দ : খাতওয়ারি বরাদ্দের মধ্যে অর্থ বিভাগের ব্যয় ২ লাখ ২৬ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। ব্যয়ের দিক থেকে সবচেয়ে কম রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে, ২৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। প্রতিরক্ষায় বরাদ্দ ৩২ হাজার ৫২০ কোটি টাকা এবং স্থানীয় সরকার বিভাগে ৩৪ হাজার ২৪১ কোটি টাকা। জাতীয় সংসদ খাতে ৩২৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় খাতে ৩ হাজার ৫২৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ২৪১ কোটি টাকা, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ২ হাজার ৯৪১ কোটি, সরকারী কর্মকমিশন খাতে ১০২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। অর্থ বিভাগ, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কার্যালয় খাতে ২৩৮ কোটি ২২ লাখ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে ২ হাজার ৮৯৯ কোটি ৪৭ লাখ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে ৩ হাজার ৪১ কোটি ৫৬ লাখ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ খাতে ১৬ হাজার ৩২ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
পাশাপাশি পরিকল্পনা বিভাগে ১ হাজার ২৩১ কোটি লাখ, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে ১৪৯ কোটি ১০ লাখ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে ৩৭৫ কোটি ৩৪ লাখ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ৬৩২ কোটি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৬২০ কোটি ৫৩ লাখ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে ৩৮ কোটি ৩২ লাখ, আইন ও বিচার বিভাগে ১ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা ধরা হয়। জননিরাপত্তা বিভাগে বরাদ্দ ২১ হাজার ৯২৩ কোটি ১৭ লাখ, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগে ৩৫ কোটি ৩৮ লাখ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ২৪ হাজার ৪১ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে ২৯ হাজার ৬২৪ কোটি ৯০ লাখ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় খাতে ১৬ হাজার ৪৩৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা খাতে ১৯ হাজার ৯৪৪ কোটি ৩০ লাখ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৯৩০ কোটি ৩৯ লাখ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ৬ হাজার ৮৮১ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ৭৮৪ কোটি ৭৯ লাখ ৭০ হাজার, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ৩১৩ কোটি ৪৮ লাখ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ৬ হাজার ৬০৩ কোটি ৮৪ লাখ, তথ্য মন্ত্রণালয়ে ৯৮৯ কোটি ১৫ লাখ এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫৭৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ হাজার ৩৩৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৪৮৯ কোটি ১২, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগে ২ হাজার ৪৪৯ কোটি ৪৭ লাখ, শিল্প মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৫৫৫ কোটি ৯১ লাখ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে ৮০০ কোটি ১৬ লাখ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে ১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৭৯ লাখ, কৃষি মন্ত্রণালয়ে ১৪ হাজার ৫৩ কোটি ৪০ লাখ এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় খাতে ২ হাজার ৯৩২ কোটি ৩৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় খাতে ১ হাজার ৪৯৬ কোটি ৩১ লাখ, ভূমি মন্ত্রণালয় খাতে ১ হাজার ৯৪৩ কোটি ৮০ লাখ ৮৮ হাজার, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৭ হাজার ৯৩২ কোটি ৪৫ লাখ, খাদ্য মন্ত্রণালয়ে ১৭ হাজার ১৫২ কোটি ৯৯ লাখ ৮৭ হাজার এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৯ হাজার ৮৭১ কোটি ৫১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
এছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে ২৯ হাজার ২৭৪ কোটি ৮ লাখ, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ১৬ হাজার ৩৫৭ কোটি ৯০ লাখ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ৮৩২ কোটি ৭৭ লাখ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ৪২৬ কোটি ৩৪ লাখ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ৪৬০ কোটি ৯১ লাখ, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ১৯৪ কোটি ৪৮ লাখ ৩২ হাজার, বিদ্যুত বিভাগ ২৬ হাজার ৬৪ কোটি ৬৯ লাখ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৪ হাজার ৫৫৩ কোটি ৪৮ লাখ, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ৫৯০ কোটি ৯৪ লাখ, দুর্নীতি দমন কমিশন খাতে ১৪০ কোটি ১৭ লাখ এবং সেতু বিভাগে ৮ হাজার ৫৬৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে ৭ হাজার ৪৫৩ কোটি ৬০ লাখ, সুরক্ষা সেবা খাতে ৩ হাজার ৬৯৪ কোটি ৯২ লাখ ২৪ হাজার এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে বরাদ্দ ৫ হাজার ৭৮৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।