কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচদিনের সরকারী সফরে চীনের উদ্দেশে আজ সোমবার বিকেলে ঢাকা ছাড়ছেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের আমন্ত্রণে এই সফরকালে তিনি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দেবেন। সফরকালে বেজিংয়ে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং ও প্রেসিডেন্ট শি জিংপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরকালে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে আটটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
প্রধানমন্ত্রীর এবারের চীন সফরে রোহিঙ্গা ইস্যু প্রাধান্য পাবে। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে (তাদের প্রত্যাবাসনে) বেজিং একটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে সবাই আশা করছে। এদিকে সফরকালে বাংলাদেশ এবং চীন অর্থনৈতিক, বিদ্যুত, তথ্য প্রযুক্তি এবং পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে ৮টি চুক্তি স্বাক্ষর করবে। আজ চীনের দালিয়ানে তিন দিনব্যাপী ‘ডব্লিউইএফ এ্যানুয়েল মিটিং অব দ্য নিউ চ্যাম্পিয়ন্স-২০১৯’ শুরু হবে। যা ডব্লিউইএফ সামার দাভোস নামেও পরিচিত। সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘লিডারশিপ ৪.০- সাকসিডিং ইন এ নিউ এরা অব গ্লোবাইজেশন।’ লিয়াওডং রাজ্যের দালিয়ান উত্তর পূর্ব এশিয়ার ব্যবসা এবং অর্থনৈতিক কেন্দ্র এবং উত্তর চীনের হংকং হিসেবেও সুপরিচিত।
প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট (বিজি ১৭২০) আজ সোমবার বিকেলে দালিয়ানের উদ্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবে। ফ্লাইটটি ২ জুলাই স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে লিয়াওনিং প্রদেশের দালিয়ানের দালিয়ান ঝৌশুজি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা শেষে আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রা সহকারে প্রধানমন্ত্রীকে শাংগ্রি-লা হোটেলে নিয়ে যাওয়া হবে। দালিয়ান সফরকালে তিনি এ হোটেলেই অবস্থান করবেন। আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী দালিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে অনুষ্ঠেয় ডব্লিউইএফ সামার দাভোস সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দালিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে বিশ্ব অথনৈতিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লস শোয়াবের কার্যালয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাত করবেন এবং বিকেলে ‘কো-অপারেশন ইন দ্য প্যাসিফিক রিম’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন। বিকেলে দালিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে শোয়াবের দফতরে অনুষ্ঠেয় ‘কো-অপারেশন ইন দ্য প্যাসিফিক রিম’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
আগামী ৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রী চীন সরকারের সরবরাহকৃত একটি বিশেষ ভাড়া করা ফ্লাইটে স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় বেজিংয়ের উদ্দেশে দালিয়ান ত্যাগ করবেন। একই দিন ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে বেজিং ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে পৌঁছবে। বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রীকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে দিয়ায়োতাই স্টেট গেস্ট হাউসে নিয়ে যাওয়া হবে। চীনের রাজধানীতে সফরকালে শেখ হাসিনা এই হোটেলেই অবস্থান করবেন। বিকেলে তিনি বেজিংয়ের লিজেনডাল হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের এক সংবর্ধনা ও নৈশভোজে যোগ দেবেন। ৪ জুলাই সকালে শেখ হাসিনা স্বাগত অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং গ্রেট হল অব দ্য পিপলে বীরদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পরে তিনি চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন এবং গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত এক ভোজসভায় অংশ নেবেন। একই দিন বিকেলে শেখ হাসিনার সিসিপিআইটিতে চীনা ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে একটি বিজনেস গোল টেবিল বৈঠকে অংশ নেবেন। ৫ জুলাই সকালে প্রধানমন্ত্রীর চাইনিজ থিংক ট্যাংক ‘পাঙ্গোয়াল ইনস্টিটিউশন’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ব্যক্তব্য রাখার কথা রয়েছে। চীনের বিভিন্ন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা শেখ হাসিনার সঙ্গে তার হোটেল স্যুটে দেখা করার কথা রয়েছে এবং এনপিসির চেয়ারম্যান লি ঝাংশুর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বিকেলে শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দিয়াওইয়ুতাই রাষ্ট্রীয় অতিথিশালায় এক বৈঠকে মিলিত হবেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একই স্থানে চীনা প্রেসিডেন্টের আয়োজিত একটি ভোজসভায় অংশ নেবেন।
চীন সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী বেজিং ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় ৬ জুলাই বেলা ১১টায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন এবং একই দিন বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টা ৩৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পৌঁছবেন। ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’স এ্যানুয়াল মিটিং অব দ্য নিউ চ্যাম্পিয়নস ২০১৯-এ অংশ নিতে ডালিয়ানে আগামী সপ্তাহে বিভিন্ন দেশ থেকে ১ হাজার ৮শ’র বেশি প্রতিনিধি অংশ নেবেন। এদের মধ্যে সরকার প্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান, ব্যবসায়ী নেতা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ ও বিভিন্ন অঙ্গনের শিল্পীরাও থাকবেন। সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বিশ্বের পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ, আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও কারিগরি সঙ্কটের সঙ্গে কিভাবে খাপ খাওয়ানো যায় তার একটি নতুন কৌশলগত উপায় সম্পর্কে নিজ নিজ মতামত ব্যক্ত করবেন।