কাজিরবাজার ডেস্ক :
ব্রিটিশ আমলে তৈরি রেলপথ ও সেতু দিয়েই শত বছর পরও সচল রয়েছে দেশের রেল যোগাযোগ। অনেক সেতু সংস্কার করে কোনোমতে টিকিয়ে রেখে রেল যোগাযোগ চালু রাখা হলেও মাঝে-মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। রেলপথে প্রায় ৯০ শতাংশ সেতু-কালভার্টের আয়ুষ্কাল শতকের কোটায় হওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই ছুটছে ট্রেন।
রেলওয়ের তথ্যমতে, দেশের দুই হাজার ৯২৯ কিলোমিটার রেলপথে ছোট-বড় সেতু রয়েছে তিন হাজার ১৪৩টি। এর মধ্যে ৩২৬টি বড় সেতু (৬০ ফুট বা তার বেশি) ও ছোট সেতু রয়েছে দুই হাজার ৮১৭টি। ১৯৩০-১৯৩৫ সালের মধ্যে এসব সেতুর প্রায় ৯০ শতাংশ নির্মাণ করা হয়। সেই হিসাবে অধিকাংশ সেতুর বয়স বর্তমানে ৮০-১০০ বছর। ফলে এসব সেতুর মেয়াদ অনেকটা উত্তীর্ণ। স্বাধীনতার আগে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত দেশে রেলপথ নির্মিত হয় দুই হাজার ৮৫৮ দশমিক ২৩ কিলোমিটার। স্বাধীনতার পর নির্মাণ করা হয় মাত্র ৯৭ দশমিক তিন কিলোমিটার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রিটিশ আমলে তৈরি হওয়ায় এসব সেতু শত বছরেও ঠিক আছে। যদিও একটি স্থাপনার আয়ুষ্কাল ধরা হয় ১০০ বছর। ব্রিটিশ আমলের স্থাপনা বলেই এখনো টিকে আছে। বর্তমান সময় তৈরি হওয়ার ২০-৩০ বছর পরই অচল হয়ে যায় যেকোনো স্থাপনা। তারা বলছেন, এখনই রেলপথে নতুন সেতু তৈরি না হলে যেকোনো সময় থমকে যাবে রেল যোগাযোগ।
একটি জরিপে দেখা যায়, রেলপথে তিন হাজার ১৪৩টি ছোট-বড় সেতুর মধ্যে বর্তমানে ৪০২টি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বছরের পর বছর সেতুগুলোর সংস্কার না করার কারণে রেল চলাচলে ক্রমাগত ঝুঁকি বাড়ছে।
ঝুঁকিপূর্ণ সেতুতে রেল কর্তৃপক্ষ ট্রেন চালকদের স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম গতিতে ট্রেন চালানোর নির্দেশ দিয়ে থাকেন। স্বাভাবিক নিয়মে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৪৫-৭০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানোর কথা থাকলেও শুধুমাত্র ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ট্রেনচালকরা ঘণ্টায় ১০-১৫ কিলোমিটার গতিতে এসব সেতু পার করেন।
সূত্র বলছে, রেলের ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর সংস্কার ও নতুন করে নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্প হাতে নিলেও শিগগিরই তা আলোর মুখ দেখছে না। সেতু নির্মাণের বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন অনেকে।
তথ্য মতে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এখন পর্যন্ত রেলওয়ের উন্নয়নে প্রায় ৫০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা ইঞ্জিন-কোচ বৃদ্ধি, ব্রডগেজ লাইন তৈরিতে খরচ করা হয়েছে। যদিও সেই সুফল এখনো মিলছে না। তবে নতুন সেতু নির্মাণে বিশেষভাবে কোনো প্রকল্প হাতে নেয়া হয়নি।
জানতে চাইলে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৗশলী মো. আবদুল জলিল বলেন, মন্ত্রী ব্যস্ত আছেন। এ বিষয়ে পরে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।