ভারতের প্রতিপক্ষ আজ উইন্ডিজ

13

স্পোর্টস ডেস্ক :
পাঁচ ম্যাচে চার জয়, হার নেই। বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত এক। ৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয় স্থানে বিরাট কোহলির দল। ব্যতিক্রম কিছু না ঘটলে প্রত্যাশা মতো সেমির পথে এগোচ্ছে ভারত। কিন্তু কোহলিবাহিনী কী ফেবারিটের মতো খেলছে? বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দেয়ার পর সেটিই মনে হচ্ছিল। কিন্তু সর্বশেষ দুর্বল আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়টা এসেছে অনেকটা হারতে হারতে! আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাই কোহলিদের কেবল দুটি পয়েন্ট পেলেই চলবে না, তারা যে বিশ্বকাপ জিততে এসেছে দাপুটে নৈপুণ্যে সেটিও প্রমাণ করতে হবে। অন্যদিকে চার হারে সেমির আশা বলতে গেলে প্রায় শেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের। সেই অর্থে ৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের অষ্টম স্থানে থাকা জেসন হোল্ডারদের হারানোর কিছু নেই; আর নির্ভার ক্যারিবীয়রা যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে ১০৫ রানে গুটিয়ে গিয়ে সেটি দেখেছিল পাকিস্তান। সুতরাং বোলিং দুর্দান্ত হলেও ব্যাটিংয়ে অগোছালো মিডলঅর্ডার নিয়ে কিছুটা হলেও চিন্তা থাকবে ভারতের। বৃষ্টির শঙ্কা থাকছে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে। ওল্ডট্র্যাফোর্ডে খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে তিনটায়।
আসরে এ পর্যন্ত ভারতকে কেউ হারাতে পারেনি। জয়রথে চড়ে এগিয়ে চলেছে সুপার কোহলিবাহিনী। তাদের শুরুটা হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে দিয়ে। হেডিংলিতে দুর্দান্ত বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে ২২৭/৯-এ থামিয়ে দিয়ে ৪৮তম ওভারেই ভারত তুলে নেয় ৬ উইকেটের বড় জয়। সেঞ্চুরি হাঁকান রোহিত শর্মা (১২২)। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কোহলিবাহিনী কেমন করে সেটি দেখতে মুখিয়ে ছিল সবাই। এবারের আসরে যেটিকে বলা হচ্ছিল প্রথম ‘হাইভোল্টেজ’ ম্যাচ। কেনিংটন ওভালে সেদিন ৫ উইকেটে ৩৫২ রানের পাহাড় গড়ে ভারত। দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি হাঁকান শিখর ধাওয়ান (১১৭)। যদিও ইনজুরির কারণে এরপরই বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছেন এই তারকা ওপেনার। জবাবে শেষ বলে অলআউট অস্ট্রেলিয়া থামে ৩১৬ রানে। বড় ম্যাচে ৩৬ রানের দারুণ জয়ে দাপট অব্যাহত রাখে কোহলির দল। তিনটি করে উইকেট নেন দুই পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ ও ভুবনেশ্বর কুমার। তবে বৃষ্টির কারণে ভারত-নিউজিল্যান্ড আরেক ‘হাইভোল্টেজ’ ম্যাচটা পরিত্যক্ত হয়।
আর বহুল আলোচিত ম্যাচে চিরশত্রু পাকিস্তানকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেন লোকেশ রাহুল, রোহিত শর্মা, বিজয় শঙ্কর, হারদিক পান্ডিয়া, যুবেন্দ্র চাহালরা। এই ওল্ডট্র্যাফোর্ডেই রোহিতের (১৪০) টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির সুবাদে ৫ উইকেটে ৩৩৬ রানের বড় স্কোর গড়ে ভারত। জবাবে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ৪০ ওভারে পাকিস্তানের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩০২ রান। সরফরাজ আহমেদদের ২১২/৬-এ থামিয়ে দিয়ে ৮৯ রানের বড় জয়ে মাঠ ছাড়ে সুপার কোহলিবাহিনী। ধাওয়ানের অনুপস্থিতিতে সেদিন রোহিতের সঙ্গে ওপেনিং নেমে ৫৭ রানের দারুণ এক ইনিংস উপহার দেন লোকেশ রাহুল। তবে সমস্যা তৈরি হয় চার নম্বর পজিশন নিয়ে। কারণ ধাওয়ান-রোহিত ওপেন করায় রাহুল অথবা বিজয় শঙ্কর ওই পজিশনে বিকল্প ছিলেন। যদিও শুরুর ব্যাটসম্যানরা বড় স্কোর পাওয়ায় মাঝে দুটি ম্যাচে হারদিক পান্ডিয়াকে চারে খেলানো হয়। ফটকাটা তখন কাজেও লেগে গিয়েছিল। কিন্তু শুরুতে উইকেট পড়ে গেলে কাকে চারে খেলানো হবে? সেই প্রশ্নে দুর্বল আফগানিস্তান ম্যাচেই বড় পরীক্ষায় পড়ে ভারত।
সাউদাম্পটনে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে মাত্র ২২৪ রান করে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। অধিনায়ক বিরাট কোহলি (৬৭) ও মিডলঅর্ডারে কেদার যাদব (৫২) ছাড়া কেউ বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। দুই ওপেনার রোহিত এবং রাহুল আউট হন ৩০ ও ১ রান করে। মিডলঅর্ডারে বিজয় শঙ্কর (২৯) আর অভিজ্ঞ মহেন্দ্র সিং ধোনিও (২৮) ইনিংস বড় করতে পারেননি। দু’জনই ছিলেন ভীষণ রকমের স্লো। ধাওয়ানের পরিবর্তে ঋষভ পন্থকে উড়িয়ে নেয়া হয়েছে, রিজার্ভ বেঞ্চে আছেন দীনেশ কার্তিক। তবু মনে হয় না এক ম্যাচের ব্যর্থতায় তাদের কেউ আজ একাদশে ঢুকে পড়বেন। তবে অল্প পুঁজি নিয়েও ভারতের জয়ের রূপকার মোহাম্মদ শামি। ভুবনেশ্বর কুমারের ইনজুরিতে বিশ্বকাপে প্রথম সুযোগটাই দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন তিনি। হ্যাটট্রিকসহ নিয়েছেন ৪ উইকেট। সুতরাং ভুবি শতভাগ ফিট না হলে আজও হয়তো একাদশে থাকবেন শামি। ছন্দে আছেন পেস বোলিংয়ের বড় তারকা জাসপ্রিত বুমরা। ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন তিনিই।
দুই স্পিনার যুবেন্দ্র চাহাল, কুলদীপ যাদবের সঙ্গে অলরাউন্ডার হারদিক পা-িয়াও চমৎকার বোলিং করছেন। ভারত তাই আজ একই দল নিয়ে মাঠে নামতে পারে। অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপটা শুরু হয়েছিল স্বপ্নের মতো। নিজেদের প্রথম ম্যাচে আরেক ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ দল পাকিস্তানকে মাত্র ১০৫ রানে গুটিয়ে দিয়ে হৈচৈ ফেলে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিল ক্যারিবীয়রা। তুলে নিয়েছিল ৭ উইকেটের বড় জয়। কিন্তু এরপর ধারবাহিক ব্যর্থ ক্যারিবীয়দের একে একে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, বাংলাদেশের কাছে হার ১৫ রান, ৮ ও ৭ উইকেটে। মাঝে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটা বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। সর্বশেষ নিউজিল্যান্ডকে বাগে পেয়েও জিততে পারেনি তারা। ওল্ডট্র্যাফোর্ডে সেদিন ক্রেইগ ব্রেথওয়েটের অতিমানবীয় সেঞ্চুরির পরও ৬ বল আগে ৫ রানে হেরেছিল উইন্ডিজ। অথচ জেসন হোল্ডারের দলে আছেন ক্রিস গেইল, শাই হোপ, শিমরন হেটমায়ার, নিকোলাস পুরানের মতো হার্ডহিটার সব উইলোবাজ।
১৯৭৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত মুখোখি ১২৬ ওয়ানডের ৬২টিতে জিতে এগিয়ে ভারত, উইন্ডিজের জয় ৫৯। টাই ২ ও পরিত্যক্ত ৩। আর ৮ দেখায় ৫ জয়ে বিশ্বকাপেও এগিয়ে ভারতীয়রা। ক্যারিবীয়দের জয় সেখানে ৩টি। ১৯৯২ বিশ্বকাপের পর কখনই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হারেনি ভারত। তারও পর এবার কোহলির দল হট-ফেবারিট। দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলছে তারা। সেমির পথে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কেন তারা ভাল দল, আজ সেটিও প্রমাণ করতে হবে তারকা খচিত দলটিকে। ওল্ডট্রাফোর্ডে মাঝে মধ্যে বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও ম্যাচ একেবারে পরিত্যক্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।