টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ ॥ সরকারি চাকুরেদের বেতন বাড়লেও দুর্নীতি কমেনি

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রায় শতভাগ এবং ক্ষেত্র বিশেষে তার চেয়েও বেশি বেতন বাড়লেও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে দুর্নীতির প্রবণতা কমেনি বলে জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ শাখা টিআইবি।
রবিবার রাজধানীতে এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এ কথা জানায় সংস্থাটি।
আওয়ামী লীগ সরকারের গত আমলে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন শতকরা ১২৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কর্মকর্তাদের গাড়ি, বাড়ির জন্য স্বল্প সুদে ঋণ, সন্তানদের শিক্ষা ভাতা, নববর্ষের উৎসব ভাতাসহ আনুসঙ্গিক নানা সুযোগ সুবিধাও বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার আশার কথা তুলে ধরে বলেছেন, কর্মীরা জনগণের জন্য সৎভাবে কাজ করবে।
তবে টিআইবি বলছে, সরকারি চাকুরেদের দুর্নীতি কমার কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতির প্রমাণ মেলেনি গবেষণায়।
গবেষণাটি ছিল ‘জন প্রশাসনে শুদ্ধাচার: নীতি ও চর্চা’ বিষয়ে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের পাশাপাশি প্রতিবেদনে জনপ্রশাসনের নিয়োগ, পদোন্নতি, ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা), চুক্তিভিত্তিক নিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।
টিআইবির কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মহুয়া রউফ বলেন, ‘রাজনৈতিক ও অন্যান্য প্রভাবের কারণে জাতীয় শুদ্ধাচারের কোনো কোনো কৌশলের চর্চা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। যা প্রশাসনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’
শুদ্ধাচার কৌশলে জনপ্রশাসন সম্পর্কিত ১১টি কৌশলের মধ্যে পাঁচটির চর্চা সন্তোষজনক হলেও তিনটি এখনো শুরুই হয়নি বলেও জানানো হয় অনুষ্ঠানে।
মহুয়া রউফ বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জনপ্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রবণতা বেড়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে যোগ্যতা নয়, ক্ষমতাসীনদের পছন্দ প্রাধান্য পাচ্ছে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সরকারি কর্মচারী আইনে গ্রেপ্তার সম্পর্কিত একটি ধারার সমালোচনা করে বলেন, এই ধারাটি দুর্নীতি প্রতিরোধে বাধার সৃষ্টি করবে। তাই তারা এই ধারাটি বাতিল করে আইনের সংশোধন চান।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলে প্রশাসন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রসমূহের মধ্যে যেগুলোতে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিমূলক ইতিবাচক প্রণোদনা দেওয়ার অঙ্গীকার ছিল, সেক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা অভূতপূর্ব। কিন্তু সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেশাগত উৎকর্ষ বৃদ্ধি, অনিয়ম-দুর্নীতির ক্ষেত্রে বা দায়িত্ব পালনের ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্টদের বিচারের আওতায় আনা জবাবদিহিতা নিশ্চিতে যেসব আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো আছে সেগুলো শক্তিশালী করতে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলে যেসব দিকনির্দেশনা বা কৌশল ছিল তা বাস্তবায়ন হয়নি বা কোনো ধরনের অগ্রগতি হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কাজেই আমরা একদিক থেকে যেমন সার্বিকভাবে অগ্রগতি হচ্ছে বিবেচনায় সন্তোষ প্রকাশ করতে পারি, অন্যদিকে বাস্তবে শুদ্ধাচার কৌশলের প্রত্যাশিত সুফল পাওয়া এখনো সুদূর পরাহত রয়েছে।’
টিআইবির পরিচালক রফিকুল হাসান, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পারভিন হাসান, উপদেষ্টা সুমাইয়া খায়ের প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।