অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ক্রমেই এগোচ্ছে। অর্থনীতি ও সমাজ বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অগ্রগতি কখনো স্থায়ী হবে না, যদি না একই সঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি নিশ্চিত করা যায়। পৃথিবী দ্রুত এগোচ্ছে। প্রযুক্তির প্রসার অকল্পনীয় দ্রুততায় বাড়ছে। জীবনযাত্রার ধরন বদলে যাচ্ছে। আর এসব পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। সে কারণেই জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ এক নতুন প্রজন্ম আমাদের গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু বাস্তবে কী দেখছি? আমাদের শিক্ষা যেন ক্রমেই মানহীন হয়ে পড়ছে। স্কুলগুলোতে ঠিকমতো পড়াশোনা হয় না। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের মনোযোগ কমে যাচ্ছে। ফুলেফেঁপে উঠছে কোচিং বাণিজ্য। শিক্ষকদের মান নিয়েও রয়েছে অনেক প্রশ্ন। আছে শিক্ষক স্বল্পতা। বিজ্ঞজনরা শিক্ষাঙ্গনের এই দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে অনেক পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু বাস্তব চিত্রের তেমন কোনো হেরফের হচ্ছে না। এ অবস্থায় শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। গত কয়েক বছরে শিক্ষাঙ্গনের অবকাঠামো উন্নয়নে অনেক কাজ হয়েছে। এবার বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ অনেক বাড়ানো হয়েছে। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, সরকার আগামী পাঁচ বছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় পৌনে দুই লাখ শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিতে যাচ্ছে। এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ। এই নিয়োগ যাতে স্বচ্ছ হয় এবং একমাত্র যোগ্যতাই যেন প্রাধান্য পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
অতীতে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ ছিল। যোগ্যতার চেয়ে অর্থই সেখানে প্রাধান্য পেত। আমরা আশা করতে পারি, সামনের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় সেসব অপছায়া দেখা যাবে না। এ জন্য সরকারকে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। আর শুধু নিয়োগ দিলেই হবে না, যাঁরা নিয়োগ পাবেন, যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাঁদের আদর্শ শিক্ষক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাঁরা যেন সত্যিকার অর্থেই একজন আদর্শ শিক্ষকের মন-মানসিকতা নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে বিদ্যমান দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষায় অডিও-ভিজ্যুয়াল শিক্ষণসামগ্রীর ব্যবহার বাড়াতে হবে। খেলাধুলা ও সংস্কৃতিচর্চার সুযোগ বাড়াতে হবে। মোদ্দা কথা, শিক্ষাকে আনন্দময় করা এবং শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ যাতে বাড়ে তেমন করে শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়নে বর্তমান সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে এবং নিচ্ছে, তাতে আমরা আশাবাদী হচ্ছি। এখন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাটা সবচেয়ে জরুরি। একই সঙ্গে শিক্ষার বিদ্যমান দুর্বলতা চিহ্নিত করে সেগুলো কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নিতে হবে।