তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের অভিমত ॥ স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের দাম বাড়ায় ধাক্কা খাবে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’

19

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বাজেটে স্মার্টফোনের আমদানি শুল্ক ও ইন্টারনেটের দাম বাড়ানোর কারণে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অন্তরায় সৃষ্টি হবে। বাজেট ঘোষণার আগে স্মার্টফোন আমদানি শুল্ক ছিল ১০ শতাংশ। নতুন বাজেটে তা ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এতে স্মার্টফোনের দাম অনেক বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে ফিচার ফোনের দাম কমবে। অথচ ফিচার ফোন দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় না। দেশে অল্পদিনের মধ্যে ৫ জি ফোন চালুর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। থ্রিজি, ফোরজি ও ৫জি সেবা পেতে হলে স্মার্টফোন ছাড়া গ্রাহকসেবা নিতে পারবেন না। তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য যে ফোন সেটের দরকার তার দাম বাড়ানো হচ্ছে। আর যে ফোনের দরকার নেই সেই ফোনের দাম কমানো হয়েছে। এটা একেবারেই উল্টো মনে করছেন তারা। বরং ফিচার ফোনের দাম বাড়িয়ে স্মার্টফোনের দাম কমানো উচিত ছিল। এতে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে কিছুটা ধাক্কা লাগবে।
তথ্যপ্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন বলেন, সরকারের ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে সবার আগে প্রয়োজন সবার হাতে স্মার্টফোন তুলে দেয়া। ইন্টারনেট সহজলভ্য করা। মোবাইলে কথা বলার চেয়ে বর্তমানে ডেটার ব্যবহার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাজেটে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট দু’টোরই দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে করে গ্রামের সাধারণ মানুষের পক্ষে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট কেনা কঠিন হবে। সরকারের অঙ্গীকার সবার হাতে ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়া। কিন্তু ইন্টারনেটের দামও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে গ্রামের মানুষের সঙ্গে শহরের মানুষের বৈষম্য আরও বাড়বে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে হলে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের দাম কমাতেই হবে। তা না হলে গ্রামের মানুষ ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।
বিষয়টি নিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তিনি এর আগে ইন্টারনেটের দাম কমানোর জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ হাতে নিয়েছিলেন।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, আইসিটি খাতের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ সেলুলার ফোন উৎপাদন ও সংযোজনে রেয়াতি সুবিধা প্রদানের কারণে স্থানীয় পর্যায়ে ৫-৬টি সেলুলার ফোন উৎপাদন ও সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এ খাতে বিদ্যমান সুবিধা অব্যাহত রেখে সেলুলার ফোন উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কতিপয় যন্ত্রাংশের আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব করেছেন। আমদানি পর্যায়ে ফিচার ফোন ও স্মার্টফোনে বর্তমানে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রযোজ্য রয়েছে। ফিচার ফোন কম দামের বলে নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষ ব্যবহার করেন। স্মার্টফোন ব্যবহার করে উচ্চবিত্তরা। তাই স্মার্টফোনে ২৫ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৯ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। আইসিটি খাতের সম্প্রসারণে প্রয়োজনীয় নীতিগত সহায়তা দেয়ার কথা বলেন তিনি।
তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ফিচার ফোনের দাম বাড়িয়ে স্মার্টফোনের দাম কমানো উচিত ছিল। কারণ, সরকার সবার দোরগোড়ায় ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বাজেটে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের দাম বাড়ানোর ঘোষণার সঙ্গে সরকারের আগের ঘোষণা সাংঘর্ষিক বলে মনে করেন তিনি। এটা উল্টো চিত্র বলেই মনে হচ্ছে। সরকার ২০২১ সালের আগেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছে। কিন্ত মাঝপথে এসে ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের দাম বাড়ানোর কারণে ডিজিটাল বাংলাদেশ কিছুটা হলেও ধাক্কা খাবে। এটা সরকারের পলিসির সঙ্গে যায় না। গত দুই বছরে নতুন জেনারেশন ফোনের ব্যবহার অনেক বেড়েছিল। এই বাজেটের পরে তা কমে আসবে।
মোবাইল ফোন অপারেটররা ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলেছে। প্রস্তাবিত কর হার পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে বাংলালিংক ও রবি।
প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় বাংলালিংক জানিয়েছে, গ্রাহকদের ‘স্বার্থ রক্ষায়’ যে বিষয়গুলো উত্থাপন করে আসছিলেন তারা,বাজেটে তার কোন প্রতিফলন নেই। এ নিয়ে তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। মোবাইল ফোন সিম কার্ডে সেবায় সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ এবং সিমের ওপর কর দ্বিগুণ বাড়িয়ে ২০০ টাকা করার প্রস্তাব ডিজিটাল সেবার ওপর প্রভাব ফেলবে। স্মার্টফোনকে উচ্চবিত্তদের ব্যবহারযোগ্য পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এ কারণে স্মার্টফোনের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ফোরজি সেবা চালু হবার পর থেকে দেশের জনসাধারণের মধ্যে স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ছে। কারণ, সব শ্রেণীর মানুষ বিভিন্ন ডিজিটাল সুবিধা ব্যবহারের মাধ্যম হিসেবে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। এখন তা ব্যাহত হবে।