স্পোর্টস ডেস্ক :
বিশ্বকাপের বড় ম্যাচে আজ মুখোমুখি হচ্ছে ভারত ও নিউজিল্যান্ড। আসরের শুরু থেকে আয়োজক ইংল্যান্ড, বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া এবং ব্যালান্সড ভারতকে বলা হচ্ছে অন্যতম ফেবারিট। অনেকের মতে, তিনটি দলই সেমির রেসে এগিয়ে থাকবে। অথচ টুর্নামেন্টের এ পর্যায়ে বেমালুম ভুলে যাওয়া নিউজিল্যান্ডই কিনা পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে! নিজেদের তিন ম্যাচের সবকটিতেই জিতেছে কেন উইলিয়ামসনের দল। ব্যাটে-বলে মাঠ মাতাচ্ছেন রস টেইলর, ম্যাট হেনরি, লোকি ফার্গুসনরা। অন্যদিকে ‘চোকার’ দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে দিয়ে মিশন শুরু করা বিরাট কোহলির ভারত অস্ট্রেলিয়াকেও নাস্তানাবুদ করে টগবগ করে ফুটছে। যদিও অসি বধের দিনে ইনজুরিতে পড়েছেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি হাঁকানো শিখর ধাওয়ান। দারুণ নৈপুণ্যে সেনাপতির কোহলির ভরসা হয়ে আছেন রোহিত শর্মা, মহেন্দ্র সিং ধোনি, যুবেন্দ্র চাহাল, জাসপ্রিত বুমরাহরা। নটিংহামে যথারীতি বৃষ্টি শঙ্কা মাথায় নিয়ে খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে তিনটায়।
ব্যাটিংয়ে তুখোড় বিরাট কোহলি, ওয়ানডতে রেকর্ড সর্বাধিক সেঞ্চুরির মালিক রোহিত শর্মা, অভিজ্ঞ মহেন্দ্র সিং ধোনি, প্রতিভাবান লোকেশ রাহুল, বিজয় শঙ্কর, কেদার যাদব, ধুরন্ধর অলরাউন্ডার হারদিক পান্ডিয়া, রবিন্দ্র জাদেজা, পেস আক্রমণে অবিশ্বাস্য সফল জাসপ্রিত বুমরাহ, চতুর ভুবনেশ্বর কুমারের সঙ্গে লেগস্পিনার যুবেন্দ চাহাল ও চায়নাম্যান কুলদীপ যাদবকে নিয়ে ভারতের লাইনআপ সত্যি দারুণ ব্যালান্সড। বিশ্বকাপ পুনরুদ্ধারের সামর্থ্য দলটার যে ভালমতোই রয়েছে, এবার আসরের শুরু থেকে কোহলিরা সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সাউদাম্পটনে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২২৭ রানে থামিয়ে দিয়ে তাদের জয়টা ছিল ৬ উইকেটের বড় ব্যবধানে। অল্প টার্গেটেও দুর্দান্ত সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন রোহিত শর্ম (১২২*)। বল হাতে একাই ৪ উইকেট নিয়েছিলেন লেগস্পিনার চাহাল। দুটি করে শিকার ভুবনেশ্বর ও বুমরাহর। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পরের ম্যাচটা ছিল ‘হাইভোল্টেজ’, বিশ্বকাপে উড়ে আসার মাস দুয়েক আগে ঘরের মাটিতে এই অসিদের কাছে ওয়ানডে-টি২০ দুটি সিরিজ হারের বদলাটা ঠিকই নিয়ে নেয় কোহলি বাহিনী। হাইস্কোরিং ম্যাচে ৩৬ রানে জয় পায় ভারত।
কেনিংটন ওভালে রোহিত (৭০ বলে ৫৭), ধাওয়ান (১০৯ বলে ১১৭), কোহলি (৭৭ বলে ৮২), ধোনি (১৪ বলে ২৭), পান্ডিয়ার (২৭ বলে ৪৮) চমৎকার ব্যাটিংয়ে ৫ উইকেটে ৩৫২ রানে বড় স্কোর গড়ে ভারত। জবাবে ৩১৬ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া। ধাওয়ানের ইনজুরির কারণে ওপেনিংয়ে আজ রোহিতের সঙ্গে দেখা যেতে পারে লোকেশ রাহুলকে। যিনি আগে থেকেই দলে ছিলেন। আর বিজয় শঙ্কর অথবা কেদার যাদবের কাউকে দিয়ে একাদশ পূর্ণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিজয় এগিয়ে থাকবেন। কারণ নটিংহামের মেঘলা আকাশে তার পেস বোলিংটাও কাজে লাগবে। যদিও আবহাওয়ার পূর্বাভাসের পুরো খেলা হবে কি না সেটি নিয়ে ঘোর সন্দেহ থাকছেই। এমন কন্ডিশনে আগে ব্যাট করতে হলে নিউজিল্যান্ডের দুর্দান্ত সব পেসারকে সামলাতে কোহলিদের বেগই পতে হবে। মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরির মাঝে খেলা হলেও প্রচ- ঠা-ার সঙ্গে থাকবে ঝোড়ো বাতাস। বাজে আবহাওয়ার কারণে ভারতীয় দল নেট প্র্যাকটিসও করতে পারেনি, ইনডোরে জিমে সময় কাটিয়েছে তারা। নিউজিল্যান্ডের নাম্বার ওয়ান পেসার ট্রেন্ট বোল্ট হুঙ্কার দিয়ে রেখেছেন।
বোল্ট বলেন, ‘আকাশের যা অবস্থা উইকেট যদি আর্দ্র থাকে তাহলে আমি সুইং দিয়ে ভারতীয় ব্যাটিংকে পরাস্ত করতে চাই। তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে রেখেছি।’ ইতোমধ্যে গতির ঝড় তোলা লোকি ফর্গুসন তো আরও এক ধাপ এগিয়ে, ‘আমরা জানি ভারতের প্রথমসারির ব্যাটিংটা খুব শক্তিশালী। ওরা বেশি সময় ক্রিজে থেকে বোলারদের ক্লান্ত করে দিতে চাইবে। কিন্তু আমরা তা হতে দেব না। আমরা শুরুর দশ ওভারের মধ্যে ভারতের টপঅর্ডারকে কাঁপিয়ে দিতে চাই। তাদের প্যাভিলিয়নে ফেরাতে পুরোপুরি প্রস্তুত। ধাওয়ান নেই, এটাও আমাদের জন্য বাড়তি সুবিধা।’ নিউজিল্যান্ড মিশন শুরু করেছিলে শ্রীলঙ্কাকে ১০ উইকেটে হারিয়ে। এরপর বাংলাদেশের বিপক্ষে অনেকটা নাটকীয়ভাবে ২ উইকেটের জয় পাওয়া কিউইরা আফগানিস্তানকে উড়িয়ে দিয়ে তুলে নেয় ৭ উইকেটের জয়।
নিউজিল্যান্ড গত বিশ্বকাপের রানার্সআপ। ২০১৫ সালে ফাইনালে উঠে প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারতে হয়েছিল কিউইদের। আধুনিক ক্রিকেটে সবসময়ই সমীহ জাগানিয়া দলটি আগের ১১ বিশ্বকাপে ছয়বারই সেমিফাইনালে খেলেছে! ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং সব মিলিয়ে দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ। ওপেনিংয়ে মার্টিন গাপটিল, কলিন মুনরো। টপঅর্ডারে অধিনায়ক উইলিয়ামসনের সঙ্গী ইনফর্ম রস টেইলর। শেষ ম্যাচে বলতে গেলে যিনি একাই বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছিলেন। সাবেক কিউই অধিনায়ক সেদিন খেলেছিলেন ৮২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান টম লাথামও প্রয়োজনে কম যান না। অলরাউন্ডার হিসেবে জিমি নিশাম, কলিন ডি গ্রান্ডহোম বেশ কার্যকর। স্পিনে মিচেল স্যান্টনার, ইশ সোধি। আর যেটির কথা আলাদা করে বলতে হয় সেটি নিউজিল্যান্ডের পেস আক্রমণ। ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরি, কলাম ফার্গুসনের পাশাপাশি চতুর্থ ও পঞ্চম পেসার হিসেবে আছেন নিশাম আর গ্রান্ডহোম। আইসিসি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে তিন নম্বরে নিউজিল্যান্ড। আগের ম্যাচে আফগানদের ১৭২ রানে গুড়িয়ে দেয়ার পথে নিশান নিয়েছিলেন ৫ উইকেট, ফার্গুসন ৪টি।
ভারত আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বরে, নিউজিল্যান্ড তিনে। ১৯৭৫ থেকে এ পর্যন্ত মুখোমুখি মোট ১০৬ ওয়ানডের ৫৫টিতে জয় ভারতের, নিউজিল্যান্ড ৪৫। টাই ১ ও পরিত্যক্ত হয় ৫ ম্যাচ। বিশ্বকাপ ইতিহাসে অবশ্য ৭ দেখায় ৪ জয়ে এগিয়ে নিউজিল্যান্ড, ভারতের জয় ৩। তবে মজার বিষয় গতবার ২০১৫ বিশ্বকাপে এবং তার আগেরবার ২০১১-এ দু-দলের মধ্যে কোন ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়নি। সবশেষ ২০০৩ বিশ্বকাপে ৭ উইকেটের জয় পেয়েছিল ভারত। দীর্ঘ ১৬ বছর পর ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের বড় ম্যাচে আজ বড় দু’দল কেমন করে, সেটি দেখতে মুখিয়ে সবাই।