কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে প্রবাসী বাংলাদেশী বিশেষ করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের এসব ষড়যন্ত্র কার্যকরভাবে মোকাবেলা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার সন্ধ্যায় ফিনল্যান্ডের রাজধানীতে প্রবাসীদের দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা লেখক মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি-জামায়াত চক্রটি দেশটির বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে ও অপপ্রচার চালিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।’তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিশেষ করে প্রবাসী আওয়ামী লীগ কর্মীদের এসব অপপ্রচারের ‘সমুচিত জবাব’ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। হেলসিঙ্কি হোটেলে অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ এবং ফিনল্যান্ড আওয়ামী লীগ তাঁর সম্মানে এ সংবর্ধনার আয়োজন করে।
ত্রিদেশীয় সফরের শেষ পর্যায়ে পাঁচ দিনের সফরে শেখ হাসিনা এখন ফিনল্যান্ড রয়েছেন। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের অবৈধভাবে অর্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করার কারণে আর্থিকভাবে ভাল রয়েছে।
তিনি বলেন, তারা এখন দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে লবিস্ট নিয়োগের জন্য অর্থ ব্যবহার করছেন।
প্রধানমন্ত্রী বিদেশে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের সাফল্য তুলে ধরার জন্য প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘যারা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সফল হবেন তারা দলের মধ্যে সঠিকভাবে মূল্যায়ন পাবেন।’
তিনি অপপ্রচার মোকাবেলা করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার লক্ষ্যে তাদের বর্তমানে যেখানে বসবাস করছেন সেখানে জন প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক গড়ে তোলার পরামর্শ দেন।
বক্তৃতার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, হাজার হাজার মানুষ তাদের পূর্বপুরুষদের বাড়িতে গিয়ে ঈদের আনন্দ উৎসবে যোগ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ঈদের যাত্রায় লোকজন প্রায় জ্যাম মুক্ত রাস্তায় ভ্রমণ করতে সক্ষম হয়েছেন। যাত্রীদের জন্য রেল, নদী এবং আকাশ পথে যোগাযোগের জন্য ভাল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার দেশের উন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করছে এবং জনগণ তার সুবিধা পেতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, ‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণে আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি’। বঙ্গবন্ধু দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশকে খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশ হিসেবে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু ২০০১ সালে যখন বিএনপি-জামায়াত চক্র ক্ষমতায় আসে তখন দেশটি আবার খাদ্য-ঘাটতির দেশে পরিণত হয়।
তিনি বলেন, দেশের গ্যাস একটি দেশের কাছে বিক্রি করার জন্য ‘মুচলেকা’ দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসেছিল।
বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে নির্মম সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালে পাঁচবার দুর্নীতিতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের দুর্বৃত্তায়ন ১/১১ রাজনৈতিক পরিবর্তন ডেকে এনে দুই বছরের জন্য সামরিক সমর্থিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী অন্তর্বর্তীকালীন মেয়াদে তার দেশে প্রত্যাবর্তন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রচারাভিযানে প্রবাসীদের সহযোগিতার কথা স্মরণ করেন এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের অবদান স্বীকার করেন। তিনি বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে ব্যাপক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটেছে এবং ‘দুর্ভিক্ষ, ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসের’ ভাবমূর্তি মুছে ফেলেছে, যা বাংলাদেশকে ‘বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে তুলে ধরেছে।
সামাজিক নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের জন্য তার সরকারের পদক্ষেপগুলো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে ক্ষুধার্ত ও গৃহহীন বলে কোন ব্যক্তি থাকবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার শিল্প উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান করার জন্য দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে।
তিনি উল্লেখ করেছেন যে, তার সাম্প্রতিক টোকিও সফরকালে, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ৪০টি সরকারী উন্নয়ন সহায়তা চুক্তি (ওডিএ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। চারটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রদেয় ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা শহরে অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে তাঁর প্রস্তাবের ভিত্তিতে রোহিঙ্গা বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ সভাপতি নজরুল ইসলাম, ইউকে শাখার আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ ও ফিনল্যান্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আলী রামজান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
প্রবাসীদের দাবির জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফিনল্যান্ড ও নরওয়েতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্বার্থে হেলসিঙ্কিতে কনস্যুলেট অফিস স্থাপনের প্রস্তাব সরকার বিবেচনা করবে।