ওসমানীনগর থেকে সংবাদদাতা :
ওসমানীনগরে উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ঠিক মতো অফিসে না আসার অভিযোগ উঠেছে। ফলে প্রতিদিন উপজেলা প্রশাসনে বিভিন্ন সেবা নিতে আসা লোকজন সেবা না পেয়ে নানা হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। একাধিক অফিসের কর্তা ব্যাক্তিরা নানা অযুহাতে সপ্তাহে ৪/৫ দিন অফিসে তালা ঝুঁলিয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত কাজে বাসা বাড়িতে অবস্থান করেন বলে জানা গেছে। দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা চলে আসলেও তা যেন দেখার কেউ নেই। ভুক্তভোগীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল ওসমানীনগর উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা সরেজমিনে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসেনর বিভিন্ন দপ্তর পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পান।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে গিয়ে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত গোয়ালাবাজার ইউনিয়ন অফিসস্থ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অফিসে, দুপুর ১২টার পর্যন্ত তাজপুর বাজারস্থ পরিসংখ্যান ও দারিদ্র্য বিমোচন অফিসে তালা ঝুলতে দেখা যায়। সকাল ১০টা ৪০মিনিটে উপজেলা প্রশাসনের ভবনে থাকা উপজেলা মৎস্য ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিস তালাবদ্ধ দেখতে পাওয়া যায়। তবে পৌনে ১১টার দিকে উপজেলা নবাগত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল মমিন মিয়াকে হিসাব রক্ষণ অফিসে পাওয়া যায় এবং ১১টার দিকে সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা সানাউল হক সানিকে অফিসে আসতে দেখা যায়।
একই ভাবে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে একজন এমএলএসএস ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি। অন্যান্যরা ছুটিতে রয়েছে বলে জানান এমএলএসএস আলমগীর। একই সময়ে উপজেলা এলজিইডি অফিসে গিয়েও হিসাব সহকারি ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে পৌনে ১১টার দিকে অফিস সহকারি সাবেকুন নাহারকে প্রবেশ করতে দেখা যায়। ১১টা ৪৩ মিনিটের সময় তাজপুর কদমতলাস্থ উপজেলা খাদ্য গুদামে গিয়ে একজন নিরাপত্তা প্রহরি ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি। উপ খাদ্য পরিদর্শক মূর্শেদা বেগম অফিসে আসেননি বলে নিরাপত্তা প্রহরি সেলিম মিয়া সাংবাদিকদের জানান। দুপুর ১২টায় তাজপুর বাজারস্থ উপজেলা তথ্য অফিসে গিয়েও তথ্য কর্মকর্তা লাকিমা খাতুনকে পাওয়া যায়নি। তিনি বাইরে রয়েছেন বলে জানা যায়।
উপজেলা পরিস্যংখান অফিসের জুনিয়র পরিসংখ্যান সহকারি মোশাহিদ আলী বলেন, আমাদের অফিসে স্টাফে মাত্র দুজন। একজন ছুটিতে রয়েছেন। আমি অফিসের কাজে বালাগঞ্জে ছিলাম।
উপ-খাদ্য পরিদর্শক মূর্শেদা বেগম জেলার সভায় অংশ গ্রহণের জন্য অফিসে আসেননি বলে জানান।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফাহিমা খানম বলেন, ফিল্ডে কাজে থাকায় আমি বাইরে আছি। জনবল না থাকায় অফিস তালাবদ্ধ রাখতে হয়।
অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী এসআর কিবরিয়া বলেন, সময় মতো অফিসে না আসা গুরুতর অপরাধ। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
উপজেলা অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফাতেমাতুজ জহুরা বলেন, অফিসে জনবল কম এবং দু’জন ছুটিতে রয়েছেন। তবে সার্ভেয়ার সাহেব অফিসে থাকার কথা। তবে সার্ভেয়ার হযরত আলী বলেন, সাংবাদিকদের পরিদর্শনকালে বাথরুমে ছিলেন বলে জানান।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাশরুফা তাসলিম বলেন, অফিসে জনবল কম। একজন ছুটিতে রয়েছেন এবং আমি ফিল্ডে কাজে ছিলাম। অপরজন হয়তো অফিস তালা দিয়ে নিচে গিয়েছিল।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিষয়টি আমি দেখছি।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ তাহমিনা আক্তার বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সকল দপ্তরে জনবল সংকট রয়েছে। তবে সরকারি কোন অফিস তালাবদ্ধ রাখা ঠিক নয়। এমনটি হয়ে থাকলে আগামী সমন্বয় কমিটির সভায় বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করবো।