কাজিরবাজার ডেস্ক :
অবশেষে দলীয় নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। শুক্রবার ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ (টোরি) পার্টি প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। বহুল আলোচিত বেক্সিট ইস্যুতে একটি ফলপ্রসূ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারার দায় মাথায় নিয়ে পার্টি প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন টেরেসা মে। তবে একজন নয়া নেতা নির্বাচন না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাবেন তিনি। আগামী মাসের শেষের দিকে ব্রিটেনে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হতে পারে। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসহ অপর ১১ জন কনজারভেটিভ এমপিকে প্রধানমন্ত্রী পদের সম্ভাব্য তালিকায় রাখা হয়েছে। শুক্রবার কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বের কাছে পাঠানো ব্যক্তিগত চিঠিতে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার আবেদন করেন ব্রিটেনের এই দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী। তবে এর জন্য কোন সরকারী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেনি দলটি।
২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত এক গণভোটে ব্রেক্সিটের (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে আসা) পক্ষে রায় আসার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মে। গত তিন বছর ব্রেক্সিট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ রাত ১১টায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ ত্যাগের কথা ছিল যুক্তরাজ্যের। ব্রেক্সিট পরবর্তীকালে ইইউ’র সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কের শর্ত নির্দিষ্ট করে তৈরি হয় ব্রেক্সিট চুক্তি। এ চুক্তি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস করানোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও টেরেসা মে তিন দফায় তা হাউস অব কমন্সে পাস করাতে ব্যর্থ হন। তবে ইইউ নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ব্রেক্সিট বিলম্বিত করতে সমর্থ হন তিনি। ব্রেক্সিট ইস্যুতে নিজ দলের পার্লামেন্ট সদস্যদের পাশাপাশি বিরোধী দলের সদস্যদের রাজি করানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলেও শেষ পর্যন্ত তাতে সফলতা পাননি টেরেসা মে। এ অবস্থায় গত মাসের শেষের দিকে নাটকীয়ভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। ওই ঘোষণায় তিনি ৭ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের কথা জানান। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। নতুন নেতা নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকলেও ব্রেক্সিট প্রশ্নে তার কোন নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। টেরেসা মে’র স্থলাভিষিক্ত হওয়ার দৌড়ে ১১ জন কনজারভেটিভ এমপি থাকলেও সোমবারের মধ্যে কয়েকজন ঝরে পড়তে পারেন। সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন।
টোরি প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চলতি সপ্তাহে শেষবারের মতো ডি-ডে ল্যান্ডিংয়ের অনুষ্ঠানে সফররত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্মানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন টেরেসা মে। দলীয় প্রধানের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া প্রসঙ্গে মে’র মুখপাত্র বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব সামলাবেন মে। তার উত্তরসূরি রানী এলিজাবেথের সঙ্গে দেখা করে প্রধানমন্ত্রী পদে না আসা পর্যন্ত মে দায়িত্বে থাকবেন। এ সময় টেরেসা মে শুধু অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলতে পারবেন। তবে তিনি ব্রেক্সিট ইস্যুতে কোন প্রকার মন্তব্য করবেন না।
গত মে মাসে দেয়া পদত্যাগের ঘোষণায় টেরেসা মে বলেছিলেন, তিনি না পারলেও তার উত্তরসূরি হয়তো পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট ইস্যুতে সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের সমঝোতা কেবল তখনই সম্ভব যখন বিতর্করত সবপক্ষ আপোস করতে রাজি হবে’। আবেগপূর্ণ ভাষায় তিনি তখন আরও বলেছিলেন, ‘অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই আমি আমার কাজ ছেড়ে দেব কিন্তু যে সম্মান আমি নিয়ে যাচ্ছি তা সারাজীবন ধরে রাখব। ব্রিটেনের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলাম কিন্তু অবশ্যই শেষ নারী প্রধানমন্ত্রী হব না’। ব্রেক্সিট ইস্যুতে নিজের নেয়া পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, কোন খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে আমি কিছু করিনি।