খোশ আমদেদ মাহে রমজান

25

কাজিরবাজার ডেস্ক :
পবিত্র মাহে রমজানের আজ ২৪তম দিবস। পবিত্র মাহে রমজানে সিয়াম সাধনার পাশাপাশি মুমিন মুসলমানরা আরও বহুবিধ নফল ইবাদত বন্দেগীতে অভ্যস্ত হয়ে উঠে। এ সময় মনমানসিকতাও থাকে অনুকূলে। নফল ইবাদত যেমন তাহাজ্জদ নামাজ, কোরান তেলাওয়াত, তাসবিহ তাহলিল, দরুদ ইস্তেগফার, দান সদকা প্রভৃতি। নফল ইবাদত হচ্ছে কলব ও হৃদয়ে আল্লাহ পাকের মহব্বত ও প্রেম মজবুত করার এবং তার করুণা, রহমত ও সন্তুষ্টি অর্জনের এক বিরাট অবলম্বন। সে যুগে কোন কোন সাহাবি রাসূলুল্লাহ (স.)-এর খেদমতে এসে জান্নাতে তার সাহচর্য প্রার্থনা করতেন। আল্লাহর রাসূল (স.) তখন তাদের অধিক নফল ইবাদত ও অধিক সিজদা চর্চার উপদেশ দিতেন।
রাসূলুল্লাহ (স.)-এর খাদিম আবু ফারাস বিন কুআইব আসলামী (ইনি আহলে সুফ্ফার অন্তর্ভুক্ত মহান সাহাবাদের একজন) থেকে বর্ণিত আছে : ‘আমি রাতে রাসূলুল্লাহ (স.)-এর কাছে থাকতাম এবং অজু ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতাম। একদিন তিনি ইরশাদ করলেন, কিছু প্রার্থনা কর। আমি আরজ করলাম, জান্নাতে আপনার সাহচর্য প্রার্থনা করছি।’
তিনি ইরশাদ করলেন, এছাড়া আর কিছু নয়?
আমি বললাম: আমি শুধু এটাই চাই। ’
তিনি ইরশাদ করলেন, তাহলে অধিক সিজদা (তথা অধিক নামাজ) দ্বারা আমার সাহায্য কর।’
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, একবার ফজরের নামাজের সময় নবী কারীম (স.) হযরত বিলাল (রা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে বিলাল! আমাকে তোমার সেই আমলট্রি কথা বল, যার বদৌলতে তুমি জান্নাত আশা করতে পার। কেন না আমি মি’রাজের সময় তোমার মৃদু পদধ্বনি শুনতে পেয়েছি।’
হযরত বিলাল (রা.) উত্তর করলেন, ওহে প্রিয় রাসূল (স.) আমার এমন কোন্ আমল আছে যার ফলে জান্নাতের আশা করা যেতে পারে। অবশ্য দিনে রাতে আমি যখনই অজু করি সে অজুু দ্বারা যতদূর সম্ভব নামাজ পড়ে নিই। – (বুখারী)।
কলবের মলিনতা দূর করে রুহ ও আত্মার শুদ্ধি অর্জন, উর্ধ জগতের সঙ্গে গভীর প্রেমময় সম্পর্ক স্থাপন এবং হিদায়াতের জ্যোতি ও তাজাল্লি লাভের ক্ষেত্রে যে জিনিসটি সবচেয়ে কার্যকর ও সহায়ক ভূমিকা পালন করে সেটা হচ্ছে যতœ ও নিষ্ঠাসহ ফরজ নামাজ আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে অধিকমাত্রায় নফল নামাজ ও অধিকমাত্রায় নফল ইবাদতে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। বুখারী শরীফে বর্ণিত এক হাদীসে হযরত রাসূলে কারীম (স.) ইরশাদ করেছেন:
তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে এরূপ দেখতে পাবে যেরূপ এ (চাঁদ) দেখতে পাচ্ছ। এটা দেখতে পাওয়ার ব্যাপারে তো তোমাদের মনে কোন সন্দেহ নেই। অতএব, যদি এটা সম্ভব হয় যে, তোমরা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সালাত কিছুতেই নষ্ট হতে দেবে না তবে তা অবশ্যই কর। এরপর তিনি এই আয়াত তেলাওয়াত করলেন: আপন প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা কর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে।’
আজকের সমাজচিত্র এমন যে, নফল নামজ, ইবাদত-বন্দেগির দিকে মুসলমানদের ঝোঁক তো খুবই কম; এমনকি ফরজ ইবাদতসমূহ পালনেও চরম অবহেলা ও গাফিলতি। শুধু জু’মার দিনের জুমা’র নামাজের কথাই ধরি। শুধু দুই রাকাত ফরজ নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে যাওয়া আজকের যুবক শ্রেণীর ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। ওই দুই দুই রাকাত শুরু হওয়ার একটু আগে মাত্র খুৎবার শেষ দিকে তারা মসজিদে প্রবেশ করে এবং ফরজ সালাতের সালাম ফেরানোর সঙ্গে সঙ্গে হুড়মুড় করে মসজিদ হতে বেরিয়ে এসে রাস্তা ঘাটে আড্ডা জমায়।
অথচ হাদিস শরীফে জুম্মা’র দুই রাকাত ফরজ সালাতের আগে এবং পরের সুন্নত নামাজগুলো আদায়ের জোর তাগিদ এসেছে এবং অফুরন্ত ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। রহমত মাগফিরাত নাজাতের মাস মাহে রমজান আমাদের সামনে। এ সুন্দর মৌসুমে আমাদের মন ও মনন সুন্দর করতে হবে। নফল ইবাদত বলতে যা বোঝায় তার অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে। যেমন পাঞ্জেগানা ফরজ নামাজের পাশাপাশি তৎসংশ্লিষ্ট অন্যান্য সুন্নাত ও নফল নামাজসমূহ, আওয়াবীন ও তাহাজ্জদ নামাজ প্রভৃতি, তেলাওয়াত, তাসবীহ তাহলিল, মসজিদ মাদ্রাসা মানুষ ও সৃষ্টির সেবা, পিতামাতা ও ময়মুরুব্বির খেদমত, নিজের অধিনস্থ সন্তান সন্ততি ও স্ত্রী পরিজনকে উপরোক্ত সৎ গুণাবলিতে অভ্যস্থ করে তোলা। এ সময় স্কুল-কলেজের সাধারণ শিক্ষা কিছুটা শিথিল করা হয়, আমাদের সন্তানদের এ সুযোগে মক্তব ও দীনি শিক্ষার দিকে সংশ্লিষ্ট করতে পারি। আল্লাহ আমাদের আন্তরিকতার সঙ্গে দীনের আমলসমূহ আঞ্জাম দেয়ার তাওফিক দান করুন।