তাযকিয়ায়ে নাফস ও রামাদান

66

মোঃ ফখরুল ইসলাম

মানুষ আশরাফুল মখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব। তাই মানুষ কেবল দেহ সর্বস্ব কোন জীব নয়। আবার মানুষ কেবল আত্মাসর্বস্বও নয়। সুষম দৈহিক অবয়বের সাথে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সুন্দর একটি আত্মাও দিয়েছেন। প্রতিটি মানুষের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা দুটি সত্ত্বা দিয়েছেন। দৈহিক বা জৈবিক সত্ত্বা এবং আত্মীক বা নৈতিক সত্ত্বা। মানুষের উন্নতি-অবনতি, সফলতা-ব্যর্থতা কেবল দৈহিক কিংবা কেবল আত্মীক দাবী পূরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং দেহ ও আত্মার সুষম উন্নয়নের মাধ্যমে যে মানবিক সত্ত্বার বিকাশ ঘটে তাই প্রকৃত মানুষ। ইতিহাস সাক্ষী যখন যারাই এ দুটি সত্ত্বার একটিকে অস্বীকার করেছেন তারাই মানুষকে অধ:পতনে নিয়ে গিয়েছেন। আত্মার দাবিকে অস্বীকার করে যারা মানুষকে শুধমাত্র একটি দেহ সর্বস্ব জীব ভেবেছেন তারাই বিশ্বকে উপহার দিয়েছেন আজকের এ বস্তুবাদী সভ্যতা যেখানে বস্তু আর ভোগই শেষ কথা। পক্ষান্তরে দেহের দাবীকে অস্বীকার করে শুধুমাত্র আত্মাকে লালন করে যারা মুক্তি খুঁজেছেন তথাকথিত বৈরাগ্যবাদ তাদেরই সৃষ্টি।
মানুষের দৈহিক সত্ত্বা : কালামে পাকে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন –“প্রত্যেক প্রাণীই মরণের স্বাদ ভোগ করবে (৩: আল ইমরান: ১৮৫)।” **এখানে নাফস শব্দটি প্রাণ, জীবন এ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ প্রত্যেক জীবেরই, হোক সে মানুষ বা পশু, তার একটি নাফস বা প্রাণ আছে এবং তাকে একদিন না একদিন মরণের স্বাদ নিতেইহবে। এ সত্ত্বার দিক থেকে মানুষ আর পশুর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এটাই জীবের দৈহিক সত্ত্বা। যে সমস্ত উপদান দিয়ে মানুষের দেহ তৈরী হয় সে একই উপাদান দিয়ে পশুর দেহও তৈরী হয়। আবার এ দেহের পুষ্টি সাধনের জন্য খাদ্য-পানীয় হিসেবে মানুষ সে সমস্ত উপাদানের উপর নির্ভর করে পশুও সেই একই উপাদানের উপর নির্ভর করে। পশুর দেহ যেমন ক্ষুধা পেলে খাবার চায়, তৃষ্ণা পেলে পানীয় চায়, ঠান্ডা লাগলে গরম চায়, গরম লাগলে ঠান্ডা চায় মানুষের দেহের দাবীও ঠিক তেমন। অর্থাৎ মানুষ আর পশুর উভয়ের দৈহিক সত্ত্বাটি একটি বস্তুসত্ত্বা। দৈহিক সত্ত্বার দিক থেকে মানুষ আর পশুর মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। দৈহিক সত্ত্বার বিভিন্ন দাবীকে আমরা বলি নাফসের খায়েশাত। তাই দৈহিক সত্ত্বাকে নাফস বা প্রবৃত্তি বলেও সম্বোধন করা হয়।
মানুষের নৈতিক সত্ত্বা : পবিত্র কুরআন মজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন-“(স্মরণ করো,) যখন আমি ফেরেস্তাদের বলেছিলাম, আমি (অচিরেই) ছাঁচে ঢালা ঠনঠনে শুকনো মাটি থেকে মানুষ পয়দা করতে যাচ্ছি। অতঃপর যখন আমি তাকে পুরোপুরি সুঠাম করে নেবো এবং আমার রুহ থেকে (কিছু) তাতে ফুঁকে দেবো, তখন তোমরা তার সামনে সাজদাবনত হয়ে যাবে (১৫: হিজর: ২৮-২৯)।”এ আয়াত দুটি হতে জানা যায়, মানুষের দৈহিক সত্ত্বা তৈরীর পর আল্লাহ তায়ালা তাঁর রুহ হতে কিছু রুহ মানুষের দৈহিক সত্ত্বায় ফুঁকে দিয়েছেন। এ ফুঁকে দেয়া রুহই হচ্ছে মানুষের নৈতিক সত্ত্বা। একেই আমরা বিবেক বলি। এ থেকেই মানুষের ভালো মন্দের চেতনা। এটাই আসল মানুষ। এ রুহ বা বিবেক বা নৈতিক সত্ত্বার জন্যই মানুষের মধ্যে ভালো-মন্দের চেতনা বিদ্যমান। এ নৈতিক সত্ত্বার কারণেই চোর নিজেকে চোর বলে, ঘুষখোর নিজেকে ঘুষখোর বলে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করে। পশুর মধ্যে এ নৈতিক সত্ত্বা নেইবলেই তার মধ্যে ভালো-মন্দের চেতনা নেই, নেই ভালো-মন্দ মেনে চলার বাধ্যবাধকতা। আর এ নৈতিক সত্ত্বার কারণেই মানুষ আশরাফুল মখলুকাত।
মানুষের দৈহিক ও নৈতিক সত্ত্বার মধ্যে সম্পর্ক : যেহেতু মানুষের দৈহিক সত্ত্বার মধ্যে নৈতিকার কোন বালাই নেই সুতরাং তার দাবীরও শেষ নেই। যে কাজেই সে তার আরাম আয়েশ দেখবে সেটাই দাবী করে বসবে। এতে তার নিজের সার্বিক সত্ত্বার বা অন্য কারও বা সমাজের কোন ক্ষতি হচ্ছে কিনা তা বিবেচনা করার কোন গরজ তার নেই। পক্ষান্তরে দৈহিক সত্ত্বা বা নাফসের বা প্রবৃত্তির কোন দাবী নৈতিকতার পরিপন্থী হলে মানুষের নৈতিক সত্ত্বা বা বিবেক বা রুহ এর প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করে। শুরু হয় সুমতি আর কুমতির লড়াই, নাফস আর রুহের যুদ্ধ। এ যুদ্ধে যদি নাফস জয়ী হয় তবে মন্দ কাজটি সমাধা হয়ে যায় এবং মানুষ বিবেকের দংশনে জর্জরিত হয়। পক্ষান্তরে যদি রুহ জয়ী হয়ে তবে মন্দ কাজটি হয় না এতে বিবেক পরিতৃপ্ত হয়। অনুরূপভাবে বিবেকের তাড়নায় মানুষ কোন ভাল কাজ করতে উদ্যত হলে এতে নিজের কোন স্বার্থ নেইদেখে নাফস তার বিরোধিতা শুরু করে। এক্ষেত্রেও যদি নাফস জয়ী হয় তবে ভালো কাজটি সমাধা হয় না এবং মানুষ বিবেকের দংশনে জর্জরিত হয়। পক্ষান্তরে যদি রুহ জয়ী হয়ে তবে ভাল কাজটি হয়ে যায় এবং এতে বিবেক পরিতৃপ্তি লাভ করে। সুতরাং এটা সুস্পষ্ট যে, যার রুহ বা বিবেক বা নৈতিক সত্ত্বা তার নাফস বা প্রবৃত্তি বা দৈহিক সত্ত্বার উপর যতবেশী শক্তিশালী তার পক্ষে ততবেশী মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা বা ততবেশী ভাল কাজ করা সম্ভব। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শুধুমাত্র দ্বীনি ব্যাপার নয় আমরা দুনিয়াবী ব্যাপারেও দেখতে পাই যারা নিজেদের নাফসের একান্ত বাধ্যগত গোলামে পরিণত হয়ে যায়, তাদের দ্ধারা দুনিয়াবী কোন মহৎ কাজও সম্পাদিত হয় না।
নাফসের প্রকারভেদ : নাফস আর রুহের এ লড়াইয়ের উপর ভিত্তি করে পবিত্র কুরআনে নাফসকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. নাফসে মুলহামা : এটা হচ্ছে নাফসের জন্মগত নিরপেক্ষ অবস্থান। পবিত্র কুরআনের ইরশাদ “শপথ মানব প্রকৃতির এবং যিনি তার যথাযথ বিন্যাস স্থাপন করেছেন তাঁর। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাকে তার পাপ ও (পাপ থেকে) বেঁচে থাকা (-র বিশেষ জ্ঞান) প্রদান করেছেন (৯১: শামস: ৭-৮)।”এ আয়াতে ‘ফাআলহামাহা’ শব্দটি এসেছে ‘এলহাম’ থেকে। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা জন্মগতভাবেই মানুষের সত্ত্বায় কোনটি ভালো ও কোনটি খারাপ এবং খারাপ থেকে বেঁচে থাকার জন্য বিশেষ জ্ঞান এলহাম করে দিয়েছেন। এজন্য আমরা দেখতে পাই যে অপরাধ বা পাপ কাজ করে সেও এটা স্বীকার করতে চায় না অথবা মানুষ এটা জানুক এটা সে চায় না। এটাই হচ্ছে মানব সত্ত্বার স্বভাবজাত অবস্থা। এর মাধ্যমে মানুষ পাপ-পুণ্য, ভালো-মন্দ, সুকৃতি-কুকৃতির অনুভূতি লাভ করেছে। নাফসে মুলহালামার ক্ষেত্রে নাফস আর রুহ পরস্পর পরস্পরের অবস্থানে নিরপেক্ষ থাকে। কেউ কারও দিকে ঝুকে পড়ে না।
২. নাফসে লাওয়ামা : লাওয়ামাহ শব্দটি ‘লাওমাতুন’ থেকে উৎপন্ন। লাওমাতুন মানে তিরস্কার, গালি, ধমক, নিন্দা, ভর্ৎসনা। অর্থাৎ কখনো যদি রুহের মোকাবেলায় নাফস জিতে যায় এবং খারাপ কাজটি সংঘটিত হয়ে যায় তখন রুহ নাফসকে তিরস্কার করে, ধমক দেয়, ভর্ৎসনা করে, অনুশোচনা করে। কুরআন মজিদের ভাষায় -“আমি শপথ করছি সে নাফসের, যে (ত্রুটি বিচ্যুতির জন্যে) নিজেকে ধিক্কার দেয় (৭৫: ক্বিয়ামাহ: ২)।”এ হচ্ছে নাফস আর রুহের লড়াইয়ের সেই অবস্থা যাতে কখনও নাফস জিতে যায় আবার কখনও রুহ জিতে যায়।নাফসে মুলহালামার ক্ষেত্রে নাফস আর রুহ পরস্পর পরস্পরের অবস্থানে নিরপেক্ষ থাকে। কেউ কারও দিকে ঝুকে পড়ে না। কিন্তু এক্ষেত্রে রুহ নাফসের উপর প্রভাব বিস্তার করতে চায়। গাণিতিকভাবে বললে আমরা বলতে পারি, নাফসে লাওয়ামার ক্ষেত্রে এ প্রভাব ১% থেকে শুরু হয়ে ৯৯% পর্যন্ত হয়ে থাকে। একক কোন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এ প্রভাব যদি ৫০% এর বেশী হয় তবে রুহ জিতে যায় আর তার কম হলে রুহ হেরে যায়। যে রুহ ১% ক্ষেত্রে নাফসকে পরাজিত করতে সক্ষম হয় তার নাফসও নাফসে লাওয়ামাহ। আবার যে রুহ ৯৯% ক্ষেত্রে নাফসকে পরাজিত করতে সক্ষম হয় তার নাফসও নাফসে লাওয়ামাহ। এ লড়াইয়ে যে রুহ অধিকাংশ ক্ষেত্রে জয়ী হতে সক্ষম হয়, আখেরাতে তারই নেকীর পাল্লা ভারী হওযার এবং নাজাতের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
৩. নাফসে মুৎমাইন্নাহ : ‘এতমিনান’ শব্দ থেকে মুৎমাইন্নাহ শব্দটি গঠিত। এতমিনান মানে প্রশান্তি, নিশ্চিন্ততা, স্থিরতা ইত্যাদি। নাফসে মুৎমাইন্নাহর অবস্থা হল, ১০০% ক্ষেত্রেই নাফস রুহের কাছে হেরে গেছে। রূহ গ্রহণ করবে না নাফস এমন কোন দাবী করার সাহসই করে না। নাফস নিশ্চিত হয়ে গেছে যে, সে আর রুহকে পরাজিত করতে পারবে না। নাফসে মুৎমাইন্নার পরিণতি সম্পর্কে কুরআনে পাকে বলা হয়েছে এভাবে “হে প্রশান্ত আত্মা ! তুমি তোমার মালিকের কাছে ফিরে যাও সন্তুষ্টিচিত্তে ও তাঁর প্রিয়ভাজন হয়ে, অতঃপর তুমি আমার প্রিয় বান্দাদের দলে শামিল হয়ে যাও, (আর) প্রবেশ করো আমার (অনন্ত) জান্নাতে (৮৯: ফজর: ২-৩০)।”
৪. নাফসে আম্মারাহ : নাফসে আম্মারাহ হচ্ছে নাফসে মুৎমাইন্নার ঠিক বিপরীত। এক্ষেত্রে ১০০% ভাগ ক্ষেত্রেই নাফস বিজয়ী। এখানে রূহের কোন প্রভাবই নেই। নাফস এখানে পুরো স্বেচ্ছাচারী। ‘আমর’মানে হুকুম। আম্মারাহ মানে হুকুমকারী। হুকুমদাতা নাফস সব সময় দাবী জানাতেই থাকে। অবিরাম হুকুম করতে থাকে এটা চাই, ওটা চাই, এখনই দাও। নাফসের যেহেতু নৈতিক চেতনা নেই, সেহেতু সে মন্দ কাজের হুকুম দিতেই থাকে। অর্থাৎ যে ব্যক্তির নাফস সব সময়ই রুহের সাথে লড়াইয়ে বিজয়ী হয় এবং রুহ কোনো সময়ই নাফসকে ঠেকাতে পারে না, সে ব্যক্তির নাফসই হল নাফসে আম্মারাহ। কুরআন পাকে হযরত ইউসুফ (আ.) এর জবানীতে এ নাফসের বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে এভাবে “আমি আমার ব্যক্তি সত্ত্বাকেও নির্দোষ মনে করি না, অবশ্যই (মানুষের) প্রবৃত্তি মন্দের প্রতিই প্ররোচণা দিতে থাকে, অবশ্য তার কথা আলাদা যার প্রতি আমার রব দয়া করেন, নিঃসন্দেহে আমার রব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (১২: ইউসুফ: ৫৩)।”
তাযকিয়ায়ে নাফস : তাযকিয়ায়ে নাফস মানে আত্মার পরিশুদ্ধীকরণ। এই যে, নাফসের বিভিন্ন বিবর্তন, এক্ষেত্রে একটি নাফসকে তার মুলহামা অবস্থান থেকে ক্রমান্বয়ে লাউয়ামাহ, লাউয়ামাহ থেকে মুৎমাইন্নাহ পর্যায়ে উন্নীতকরণ এবং কোন অবস্থায়ই তাকে আম্মারাহ পর্যায়ে নামতে না দেয়ার যে ধারাবাহিক ও নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা, তাকেই বলে তাযকিয়ায়ে নাফস বা আত্মার পরিশুদ্ধীকরণ। আর মানুষের সকল ধরণের সফলতা-ব্যর্থতা, উন্নতি-অবনতি সবই নির্ভর করে এ তাযকিয়ায়ে নাফসের উপর। এ কথাই কুরআনে পাকে বলা হয়েছে এভাবে “যে ব্যক্তি (নিজেকে) পরিশুদ্ধ করে নিয়েছে, সে অবশ্যই সফলকাম হয়েছে এবং সে নিজের মালিকের নাম স্মরণ করেছে অতঃপর সে নামাজ আদায় করেছে (৮৭:আ‘লা:১৪-১৫)।”“নিঃসন্দেহে মানুষের মধ্যে সে-ই সফলকাম যে (পাপ থেকে দুরে থেকে) তাকে পরিশুদ্ধ করেছে আর যে (ব্যক্তি পাপে নিমজ্জিত হয়ে)তাকে কলুষিত করেছে সে ব্যর্থ হয়েছে (৯১:আশ শামস:৯-১০)।” আর এজন্যই বিশ্বনবী (সা.) কে যে মিশন দিয়ে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছিল তার উল্লেখযোগ্য দফা ছিল এ তাযকিয়ায়ে নাফস। কুরআন পাকের কমপক্ষে চারটি জায়গায় কাছাকাছি ভাষায় মহানবী (সা.) এর যে তিনটি মিশনের কথা বলা হয়েছে তার মধ্য উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এ তাযকিয়ায়ে নাফস। গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য আমরা সূরার ধারাবাহিকতায় আয়াত চারটি এখানে উল্লেখ করছি। “হে আমাদের রব ! তাদের (বংশের) মধ্যে তাদের নিজেদের মাঝ থেকে তুমি (এমন) একজন রাসূল পাঠাও, যে তাদের কাছে তোমার আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করবে, তাদের তোমার কিতাবের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা শিক্ষা দেবে, উপরন্তু (তা দিয়ে) সে তাদের পবিত্র করে দেবে (হে আল্লাহ, তুমি আমাদের দোয়া কবুল করো); অবশ্যই তুমি মহাপরাক্রমশালী, পরম কুশলী (২: বাকারা: ১২৯)।”“(সঠিক পথের সন্ধান দেয়ার জন্য) আমি এভাবে তোমাদের কাছে তোমাদের মাঝ থেকেই একজনকে রাসূল করে পাঠিয়েছি, যে ব্যক্তি (প্রথমত) তোমাদের কাছে আমার আয়াত সমূহ তেলাওয়াত করবে, (দ্বিতীয়ত) সে তোমাদের (জীবন) পরিশুদ্ধ করে দেবে, (তৃতীয়ত) সে তোমাদের আমার কিতাব ও (তার অন্তর্নিহিত) জ্ঞান শিক্ষা দেবে, (এর সাথে) সে তোমাদের এমন বিষয় সমূহের জ্ঞানও শেখাব, যা তোমরা কখনো জানতে না (২: বাকারা: ১৫১)।” “আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই মোমেনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মাঝ থেকে একজন ব্যক্তিকে রসূল করে পাঠিয়েছেন, যে তাদের কাছে আল্লাহর কিতাবের আয়াতসমূহ পড়ে শুনায় এবং (সে অনুযায়ী) সে তাদের জীবকে পরিশুদ্ধ করে, (সর্বোপরি) সে তাদের আল্লাহর কিতাব ও (তাঁর গ্রন্থলব্ধ) জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়, যদিও এরা সবাই ইতিপূর্বে স্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল (৩: ইমরান: ১৬৪)।” “তিনিই সেই মহান সত্ত্বা, যিনি (সাধারণ জনগোষ্ঠীর) নিরক্ষর (লোকদের) মাঝে থেকে তাদেরই একজনকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন, যে তাদের আল্লাহর আয়াতসমূহ পড়ে শোনাবে, তাদের জীবনকে পবিত্র করবে, তাদের (আসমানী) কিতাবের কথা ও (সে অনুযায়ী দুনিয়ায় চলার) কৌশল শিক্ষা দেবে, অথচ এ লোকগুলোই (রাসূল আসার) আগে (পর্যন্ত) এক সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল (৬২: জুমুয়া: ২)।”এ চারটি আয়াতে আল্লাহতায়ালা রাসূলের (সা.) তিনটি মিশনের কথা গুরুত্ব বিবেচনায় বার বার উল্লেখ করেছেন। আর তা হলো –১. তেলাওয়াতে আয়াত, ২. তাযকিয়ায়ে নাফস, ৩. তালীমে কিতাব ও হিকমত। এ থেকে আমরা তাযকিয়ায়ে নাফসের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি। (অসমাপ্ত)