কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভারতে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে ভোটের লড়াই শেষ, অপেক্ষা শুধু ফল ঘোষণার। বুথ ফেরত জরিপ বলছে, টানা দ্বিতীয়বারের মতো নিরঙ্কুশ জয়ে ক্ষমতায় বসছে নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। তবে, একে ‘ স্রেফ কল্পনা’ উল্লেখ করে আগাম ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে বিরোধী দলগুলো। তবে বুথ ফেরত জরিপের ফল প্রকাশের পর থেকে বিরোধীদের মহাজোট গঠনের প্রচেষ্টায় ভাটা পড়েছে। এদিকে জরিপে বিজেপির ফের ক্ষমতায় আসার আভাস মেলায় চাঙ্গা হয়ে উঠেছে ভারতের শেয়ার বাজার।
রবিবার শেষ পর্বের ভোটগ্রহণ শেষে বিভিন্ন বুথ ফেরত জরিপের ফলে বলা হয়, বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক এ্যালায়েন্স (এনডিএ) বিশাল ব্যবধানে জিতে ভারতে সরকার গঠন করবে। জরিপগুলোর ফল অনুযায়ী, এনডিএ সর্বোচ্চ ৩৬৫ ও সর্বনিম্ন ২৪২ আসনে জিতবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গড়ে এনডিএর হাতে আসছে ২৯৫ আসন, যেখানে ভারতে সরকার গঠন করতে প্রয়োজন হয় ২৭২ আসন। বুথ ফেরত জরিপের এ ফলকে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপি। এ নিয়ে দলের নেতা-কর্মী, সমর্থকদের অভিনন্দনও জানিয়েছে দলটি। তবে, বিরোধী দলগুলো বলছে, বুথ ফেরত জরিপে খুশি হওয়ার কিছু নেই। কারণ, অতীতে বেশ কয়েকবার এর ফল ভুল প্রমাণিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক টুইট বার্তায় বলেছেন, বুথ ফেরত জরিপের গুঞ্জন বিশ্বাস করি না। গুঞ্জন চলাকালে হাজারো ইভিএম বদলে দেয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সব বিরোধী দলগুলোকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তৃণমূল সভানেত্রী। তিনি বলেন, আমি সব বিরোধী দলগুলোকে শক্ত ও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অনুরোধ জানাই। সবাই এক হয়ে এ যুদ্ধে লড়তে হবে। বুথ ফেরত জরিপের ফলে বিশ্বাস নেই কংগ্রেস নেতা শশী থারুরেরও। উদাহরণ হিসেবে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় সাম্প্রতিক নির্বাচনে ৫৬টি বুথ ফেরত জরিপ ভুল হওয়ার কথা উল্লেখ করে এক টুইট বার্তায় বলেন, আমার বিশ্বাস, সব বুথ ফেরত জরিপই ভুল। ভারতে অনেকেই সরকারের ভয়ে জরিপ কর্মকর্তাদের কাছে সত্যটা বলেন না। এজন্য ২৩ তারিখ চূড়ান্ত ফলের জন্য অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল কংগ্রেসের সঙ্গে। এছাড়া বিভিন্ন রাজ্যে আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গেও হাড্ডাহাডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গিয়েছিল। তবে সাত পর্বের ভোট শেষে দেখা যাচ্ছে, সে ধারণা অনেকটাই ভুল। সংসদে একক আধিপত্য দেখাতে যাচ্ছে বিজেপি। বলা হয়, উত্তর প্রদেশে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তারাই সরকার গঠন করে। এ রাজ্যের ৮০টি আসনের মধ্যে ২০১৪ সালে বিজেপি ৭১টি আসনে জিতে ক্ষমতায় বসেছিল। বেশিরভাগ বুথ ফেরত জরিপে দেখা যাচ্ছে, এবারের নির্বাচনেও ৩৮-৬৮টি আসনে জিতবে বিজেপি। তবে, নিয়েলসন-এবিপি ও নিউজ এক্স-নেটার বুথ ফেরত জরিপে বলা হয়েছে, উত্তর প্রদেশে ৪০টির বেশি আসনে হারবে বিজেপি। নিয়েলসন-এবিপির দাবি, এনডিএ রাজ্যটিতে মাত্র ২২টি আসন পাবে। নিউজ এক্স- নেটা বলছে, এ জোট ৩৩টি আসন পেতে পারে। শুধুমাত্র এ দু’টি বুথ ফেরত জরিপেই বলা হয়েছে, বিজেপি জোট সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠা নাও পেতে পারে।
বিরোধীদের মহাঐক্যের প্রচেষ্টায় হোঁচট : বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে মহাঐক্যের যে প্রচেষ্টা চলছিল, বুথ ফেরত জরিপে ক্ষমতাসীনদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার আভাস মেলায় তা বাধার মুখে পড়েছে। বিজেপিবিরোধী মহাজোট সরকার গঠনের লক্ষ্য নিয়ে তৎপর ছিল বিরোধীরা। শেষ দফার ভোটগ্রহণের আগেই কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু বিজেপিবিরোধী জোট গঠনকে সর্বাগ্রে স্থান দেয়ার কথা জানান। ঐক্য প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে নির্বাচনী ফল ঘোষণার (২৩ মে) ২ দিন আগে ২১ মে বিরোধী দলগুলোর বৈঠকের দিন নির্ধারণ করা হয়। তবে রবিবার শেষ ধাপের নির্বাচনের পর প্রকাশিত বুথ ফেরত জরিপে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আবারও বিজয়ী হওয়ার আভাস মিলেছে। জরিপের ফল প্রকাশের একদিনের মাথায় বহুজন সমাজ পার্টি নিশ্চিত করল, ২১ তারিখের ওই বৈঠকে মায়াবতী অংশ নিচ্ছেন না। এর আগে ইউপিএ জোট নেতা সোনিয়া গান্ধী ও কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর বৈঠকের কথা জানা গিয়েছিল। তবে সোমবার বহুজন সমাজবাদী পার্টির নেতা সতিশ চন্দ্র মিশ্র বলেছেন, ‘এদিন মায়াবতীর দিল্লীতে কোন কর্মসূচী বা বৈঠক নেই। তার লক্ষেèৗতে থাকার কথা রয়েছে।’
চমক অপেক্ষা করছে চূড়ান্ত ফলে : কংগ্রেস : ভারতের লোকসভা নির্বাচনের বুথফেরত জরিপে বিজেপির ফের ক্ষমতায় আসার ইঙ্গিতে এখনই হাল ছাড়তে রাজি নয় বিরোধীদল কংগ্রেস। দলটি বলছে জরিপে নয়, বরং চমক অপেক্ষা করছে চূড়ান্ত ফলে। ২৩ মে প্রকাশিতব্য আনুষ্ঠানিক ফল প্রকাশ হলেই উল্টো চমকে যাবে বিজেপি। কংগ্রেসের মুখপাত্র রাজীব গৌদা বলেন, দয়া করে ২৩ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আপনাদের আমরা চমকে দেব। তিনি বলেন, দেশের মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করছে এবং মানুষ তাদের মতামত প্রকাশ করছে না।