কাজিরবাজার ডেস্ক :
মাহে রমজানুল মোবারকের আজ ১৫তম দিবস। দেখতে না দেখতে আমরা এ মাসের অর্ধেক পথ পাড়ি জমিয়েছি। এ মাসে জাকাত প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতে শামিল। এ জন্য সামর্থ্যবানদের উচিত কোন কোন খাতে জাকাত প্রদান করলে তাদের এ দান যথার্থ হবে তা জেনে নেয়া। কারণ যে কোন পথে বা পাত্রে জাকাতের মতো বিশেষ ফরজ প্রদেয় প্রদান করলে তা আদায় হয় না। উল্লেখ্য, কুরআন মজিদে মানুষের আয়ের তুলনায় তার ব্যয়ের খাতের প্রতি বেশি মনোযোগ দেয়া হয়েছে। কেননা বিভিন্ন মাল একত্রিত করা ক্ষমতাসীনদের জন্য সহজ ব্যাপার। কিন্তু বাস্তবত কঠিন হলো তা সঠিক খাতে ব্যয় করা এবং তাদের দেয়া যারা প্রকৃতই হকদার। এ কারণে কুরআন মজিদে জাকাত আদায়ের খাত নির্দিষ্টকরণ কোন শাসকের মতো বা ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়নি। সুরা তওবার ৬০নং আয়াতে জাকাত প্রদানের জন্য ৮টি খাতকে সুনির্ধারিত করে দেয়া হয়। ইরশাদ হচ্ছে : এই সাদকাসমূহ মূলত ফকির ও মিসকিনদের জন্য আর তাদের জন্য যারা এতদসংক্রান্ত কাজে নিযুক্ত এবং তাদের জন্য যাদের মন জয় করা হলো উদ্দেশ্য। সেই সঙ্গে এটি গলদাসের মুক্তিদানে ও ঋণ ভারাক্রান্তদের সাহায্যে আল্লাহর পথে ও পথিক মোসাফিরদের কল্যাণে ব্যয় করার জন্য এটি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ফরজ….।
উল্লেখ্য, ১. ফকির বলতে ওই সকল লোককে বুঝায়, যাদের কিছু না কিছু সম্পদ আছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা যথেষ্ট নয়। তাদের সহযোগিতার ওপর নির্ভর করতে হয়। জীবিকা অর্জনে অক্ষম ব্যক্তি, পঙ্গু, এতিম শিশু, বিধবা, স্বাস্থ্যহীন, দুর্বল, বেকার এবং যারা দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার এমন লোককে সাময়িকভাবে জাকাতের খাত থেকে সাহায্য করা যেতে পারে।
২. মিসকিন বলতে ওইসব সম্ভ্রান্ত দরিদ্র লোককে বুঝায় যাদের সম্পদ বলতে কিছুই নেই এবং যারা ভীষণ অভাবগ্রস্ত থাকা সত্ত্বেও সম্মানের ভয়ে কারও কাছে হাত পাতে না। হাদিসে মিসকিনের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে : ‘যে ব্যক্তি তার প্রয়োজন মোতাবেক সম্পদ পায় না অথচ আত্মসম্মানের ভয়ে সে এমনভাবে চলে যে, তাকে অভাবী বলে বুঝাও যায় না, যাতে লোকেরা তাকে আর্থিক সাহায্য করতে পারে।’ (বুখারী ও মুসলিম)।
৩. জাকাতের জন্য নিয়োজিত কর্মচারীবৃন্দ : যারা জাকাত আদায় করে, রক্ষণাবেক্ষণ করে, বণ্টন করে ও হিসেব পত্র রাখে তারা আর্থিক সঙ্গতি সম্পন্ন হলেও জাকাত থেকে তাদের বেতন দেয়া যাবে।
৪. মন জয় করার উদ্দেশ্য : ইসলামী সমাজের শক্তি বৃদ্ধির জন্য যাদের মন জয় করা আবশ্যক হয়েছিল তাদের মুআল্লাফাতুল কুলুব বলা হয়েছিল, এসব লোক কাফির বা দুর্বল চিত্তের মুসলমান উভয় প্রকারই ছিল। ইসলামের প্রাথমিক যুগে এ জাতীয় লোককে জাকাত দেয়া হতো। তারপর ইসলাম শক্তিশালী হওয়ার পর এ নিয়ম চিরদিনের জন্য রহিত করে দেয়া হয়।
৫. যে গোলাম তার মনিবের সঙ্গে এ মর্মে চুক্তি করেছে যে, এ পরিমাণ অর্থ দিলে তাকে আযাদা করে দেয়া হবে, এমন গোলামকে বলে মুকাতাব। আযাদির মূল্য পরিশোধের জন্য মুকাতাবকে জাকাত দেয়া যেতে পারে।
৬. যারা ঋণের বোঝায় পিষ্ট, নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম, তাদের জাকাত দিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে সাহায্য করা যাবে।
৭. ‘ফি সাবিলিল্লাহ’ অর্থ আল্লাহর পথে জিহাদ। জিহাদ শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। ইসলামের প্রচার ও প্রসার এবং কুফরী ব্যবস্থাকে দুরীভূত করে ইসলামী ব্যবস্থা কায়েমের জন্য সকল প্রচেষ্টাই জিহাদ। সে চেষ্টা মুখের দ্বারা, কলমের দ্বারা, তরবারি দ্বারা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে হতে পারে। ইসলামের খিদমতে নিয়োজিত এরূপ ব্যক্তিকে জাকাত থেকে সাহায্য করা যাবে।
৮. অসহায় প্রবাসী পথিক : কোন ব্যক্তি সফরে গিয়ে অসহায় অবস্থায় পড়লে বা যাত্রাপথে আর্থিক বিপদে পড়লে সাময়িকভাবে তাকে জাকাতের অর্থ প্রদান করা যাবে।
আসুন এ মোবারাক মাসে যথার্থভাবে জাকাত প্রদানের হক আদায় করে গরিব জনসাধারণকে স্বাবলম্বী করে তুলি, গড়ি একটি স্বনির্ভর সমাজ।