গ্রীষ্মকালীন ছুটি

74

মিনহাজ উদ্দীন শরীফ

দশম শ্রেণীর ছাত্র কাঞ্চন। স্কুল ছুটি তাই দিব্যি হেঁটে বাড়ি ফিরছে কাঞ্চন; রাস্তায় হাবু-ডাবুর সাথে দেখে। হাবু সামনে এসে বলে কাঞ্চন এতো বেহুঁশ হয়ে হাঁটছো কেনো? কাঞ্চন জবাব দিলো কই নাতো! আমি তো ধীরে ধীরেই হাঁটছি হাবু ভাইয়া। এই ফাঁকে ডাবু বললো মনে হচ্ছে তোমার স্কুল আজ একটু আগেই ছুটি হয়ে গেছে? কাঞ্চন বললো জ্বি ভাইয়া এখন তো গ্রীষ্মকাল তাই ‘গ্রীষ্মকালনীন ছুটি’ দিয়েছে সাত দিনের। হাবু বললো এই সাতদিন তুমি কিভাবে স্কুলে না গিয়ে থাকবা? তুমি তো আবার ঝড়-তুফান কিছু মান না স্কুলে যাওয়ার বেলা। কাঞ্চন; হাবু ভাইয়ের কথা শুনে চুপ হয়ে গেছে; কারণ কাঞ্চনের পক্ষে স্কুলে না গিয়ে সাতদিন কোনো ভাবেই কাটানো সম্ভব নয়। হাবু-ডাবু দু’ভাই কাঞ্চনের মন খারাপ দেখে বলে। দুরু পাগলা মন খারাপের কি আছে? আমরা আছি ; তোমার বন্ধু রবিন আছে; সবাই মিলে খুব মজা করে সাতদিন পার করে দেবো। এই বলে হাবু-ডাবু দু’ভাই গ্রামের সরু রাস্তা ধরে চলে গেলো নিজেদের কাজে। বই-খাতা ভর্তি ব্যাগটা কাঁধে করে কাঞ্চন ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে বাড়ির পথ ধরে হাঁটছে। কাঞ্চনের স্কুলটা বেশি দূরে না মাত্র দশ মিনিট লাগে। এইজন্য কাঞ্চন হেঁটে যায় আবার হেঁটেই চলে আসে নিত্যদিন এভাবে। বাড়ি ফেরার পথে গ্রামের বাজার; মন্দির; মসজিদ; খেলার বিশাল একট মাঠ ও চোখে পড়ে। কাঞ্চন দুপুর ২.৩০ মিনিটে বাড়িতে গেলে। গিয়ে দেখে কাঞ্চনের মা-জননী বারান্দায় খাবার নিয়ে বসে আছে। কাঞ্চনের মুখটা দেখে কাঞ্চনের মা-জননী বলে আমার চাঁদ বাবার মুখটা আজকে এমন দেখাচ্ছে কেনো? মুখে নাই হাসি! কাঞ্চন খোকা তোমার কি হয়েছে আমার কাছে বলো? কাঞ্চন বলে কিছু হয়নি মাগো এই যে আমাদের স্কুল গ্রীষ্মকালনী ছুটি দিয়েছে সাতদিনের এজন্যই একটু খারাপ লাগছে আর কিছু না বিশ্বাস করো। এ কথা শুনে কাঞ্চনের মা হাসতে হাসতে বেঁহুশ! বলে আমার পাগল ছেলে কয় কি! অন্য ছেলেমেয়েরা বলে স্কুল সারাবছর বন্ধ থাকলে খুব ভালো এবং অনেক মজা হবে। বাবা-মায়ের বকুনি শুনতে হবে না এইসব ভেবে মরে।
আর আমার ছেলে স্কুল ছুটি দিলে কেঁদে মরে! কাঞ্চন শোন খোকা তোমার স্কুল ছুটি দিয়েছে। তাতে কি হয়েছে? তুমি তোমার রুটিন অনুযায়ী বাড়িতে পড়বা তাইলেই আর কোনো সমস্যা হবে না। মায়ের এই কথায় কাঞ্চনের ‘মনে একটু শান্তি ফিরে এলো। কাঞ্চন জানে মায়ের কথা কখনো বৃথা হয় না। তারপর কাঞ্চনের মা বললো হাত মুখ ধোয়ে ভাতটা খেয়ে আমাকে একটু মুক্তি দেও তো খোকা। মায়ের কথা মতো কাঞ্চন হাত মুখ ধোয়ে এলো। তারপর খেতে বসলো। শাকসবজি আর ডিম, দুধ দিয়ে খেয়ে হন্য হয়ে উঠে যায়। মাকে বললো একটু বাহিরে যাবো রবিনের সাথে দেখা করতে। মা বললো সন্ধ্যার আগে ঘরে ফিরতে হবে কিন্তু না হলে বাবা বকুনি দিবে। কাঞ্চন মাকে বললো আচ্ছা সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসবো। এই বললো ঘর থেকে বাহির হলো। রবিনদের বাড়ি কাঞ্চনদের বাড়ি থেকে মাত্র পনের মিনিট যেতে লাগে। তাই কাঞ্চন হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলো রবিনদের বাড়ি। গিয়ে দেখে রবিন পদার্থ বিজ্ঞান পড়ছে খুব মনোযোগী হয়ে! কাঞ্চন এই দৃশ্য থেকে ভীষণ বিস্মিত হয়েছে! কারণ রবিন কখনো ঠিকমত স্কুলে এবং বাড়িতে বই পড়া পছন্দ করতো না। কিন্তু আজ সেই রবিন মনোযোগ দিয়ে বই পড়েছে। তবে “সময়ে সাথে মানুষ বদলে যায়” আজ প্রমাণিত কাঞ্চন বলছে। কাঞ্চন কাছে গিয়ে বললো দোস্ত এই দৃশ্যটাই অনেক দিন ধরে দেখার ছিলো। আর সেটা দেখাও হলো। আমি খুব খুশি হয়েছি তোকে বই পড়তে দেখে। রবিন বললো কাঞ্চন দোস্ত তোর কথাই বসে বসে ভাবছিলাম। দেখ’না এই পদার্থ বিজ্ঞানের “পঞ্চম অধ্যায়টা আমার বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। তুই একটু বুঝিয়ে দে’না দোস্ত? কাঞ্চন বললো ও এই ব্যাপার এটা কোনো সমস্যা নয় দোস্ত। তোকে ১ ঘন্টা লাগবে পানির মতো বুঝিয়ে দিতে। রবিন খুব খুশি হয়ে কাঞ্চনকে বললো শুরু কর তাইলে। কাঞ্চন; রবিনকে ভালো ভাবে এভাবে -সেভাবে ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে পড়াচ্ছে। আর মাঝেমধ্যে প্রশ্ন করে দেখেছে রবিন মনোযোগী কি না। অবশেষে কাঞ্চন অধ্যায়টা শেষ করলো। রবিন বললো দোস্ত এখন আমি পারবো। তোকে অনেক ধন্যবাদ অফুরন্ত।
কাঞ্চনের কষ্ট বৃথা যায়নি তাহলে! তখন প্রায় সূর্য ডুবে-ডুবে ভাব। তাই কাঞ্চন বাড়িতে ফিরে আসার জন্য রবিনের থেকে বিদায় নিলো। তারপর বাড়িতে এসে শুনে হাবু-ডাবু দু’ভাই এসেছিলো কাঞ্চনের খোঁজে। কাঞ্চনকে না পেয়ে ; কাঞ্চনের মায়ের কাছে বলে গেছে হাব-ডাবু দু’ভাই এক সাপ্তাহের জন্য মামার বাড়িতে বেড়াতে গেছে। কাঞ্চনের এ’কথা শুনে মনে হচ্ছিলো পায়ের নিচ থেকে মাটি সড়ে গেছে। কারণ কাঞ্চনকে তারা দু’ভাই আশ্বাস দিয়েছিলো কাঞ্চনের সাথে এই সাতদিন ঘুরাঘুরি; খেলাধুলা;করে কাটাবে এখন সেটা আর হবে না। এই জন্য কাঞ্চনের মন খুব খারাপ। কারো সাথে কথা বলে না; ঠিক মতো পড়তে বসে না;খাওয়া দাওয়া ও করে না এভাবে বেশ পাঁচ-ছয় দিন কেটে গেলো। ঐ দিকে রবিন কাঞ্চনের জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করে, কিন্তু কাঞ্চনের দেখা মিলে না। একদিন রবিন কাঞ্চনদের বাড়িতে এসে কাঞ্চনের খোঁজ করে কাঞ্চনের মায়ের কাছে। তারপর কাঞ্চনের ‘মা’ রবিনের কাছে সবকিছু খুলে বলে। রবিন সম্পূর্ণ বিষয়টা বুঝে কাঞ্চনের কাছে গিয়ে বলে দোস্ত একটা নিউজ আছে! কাঞ্চন প্রথম বার কথা বলিনি! কিছুক্ষণ পরে বলে রবিন বল নিউজ টা কী? রবিন বললো স্কুল তো আগামী রবিবারে খুলবে। কাঞ্চন বলে দোস্ত মজা করা বন্ধ কর না। রবিন বলে ধ্যাত আমি মজা করছি না। সত্যিই’রে আগামী রবিবারে স্কুল খুলবে কারণ আগামী শনিবার আমাদের স্কুল ছুটির শেষ দিন! কাঞ্চন শুনতে পেয়ে বলে সত্যি বলছিস! রবিন বলে হ্যাঁ রে হ্যাঁ। কাঞ্চন খুশির ঠেলায় নাচতে শুরু করে দিয়েছে। শনিবার দিন’টা কাঞ্চন কোনো ভাবে কষ্ট করে কাটিয়েছে। আর রবিবারে স্কুলে যাবে গিয়ে স্যার; বন্ধু; বান্ধবদের সাথে দেখা হবে আড্ডা হবে উল্লাস হবে। ঐসব ভেবে শনিবার রাতে কাঞ্চনের চোখের ঘুম হারাম। ভোর হতেই না হতে কাঞ্চন স্কুলে যাওয়ার জন্য বই; খাতা; ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছে। তারপর মাকে সালাম করে নয়টা তিরিশে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে রওয়ানা দিলো। পরিশেষে স্কুলে গিয়ে সবার সাথে দেখা হলো কথা হলো। কাঞ্চনের মুখে হাসি ফিরে এলো। তারপর থেকে কাঞ্চন এভাবেই নিত্যদিন স্কুলে যাওয়া আসা করে।