খোশ আমদেদ মাহে রমজান

100

কাজিরবাজার ডেস্ক :
পবিত্র মাহে রমজানের আজ নবম দিবস। আগামীকাল শেষ হয়ে যাচ্ছে রহমতের সুসংবাদবাহী প্রথম দশক। রমজানের প্রতিটি দিবস, প্রতিটি মুহূর্ত বরকতের এবং শিক্ষার। রমজান মাস সংযমের মাস। বরকতের মাস। প্রবৃত্তিকে দমন করার মাস। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন : ‘যখন রমজানের আগমন ঘটে, তখন বেহেস্তের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, দোযখের দরজাগুলো বন্ধ হয়ে যায় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলবদ্ধ করে রাখা হয়।’ এ একটি মাসের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথে সীমাহীন অগ্রগতি লাভ করেন, অপশক্তির হামলা থেকে আত্মার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। রোজার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে লোভ-লালসা থেকে দূরে থেকে ইমানকে সজীব রাখা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ কারণেই মুসলমানদের জন্য রোজার মাসের রোজা ফরজ করেছেন। কিন্তু রমজান এলেই দেখা যায়, দিবা ভাগে খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করা থেকে যে বিরতি পালন করা হয়, ইফতার এবং ইফতারের পর রাতে তা যেন সুদে আসলে উসুল করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। সারাদিন উপবাসের পর ইফতার এবং রাতে খেতে হবে এবং সূর্যাস্তের পর খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে কোন বাধাও নেই। কিন্তু সবকিছু যেমন সীমার ভেতর থেকে করতে হয়, তেমনি রোজা ভঙ্গ করার পরে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও কিছুটা সংযম পালন করলে দেশ ও জাতি উপকৃত হয়। এটি ইসলামের শিক্ষা এবং মাহে রমজানের সিয়াম সাধনারও মর্ম।
কেননা সবার জানা আছে যে, মাছ এবং তরিতরকারি ছাড়া চাল, ডাল, মাংস, দুধ, ফলমূল ইত্যাদি খাদ্যসামগ্রীর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার খাদ্যসামগ্রী আমদানি করতে হয়। তবুও দেখা যায়, রমজান মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে এক শ্রেণীর লোক বেহিসেবী হয়ে ওঠেন।
এই বেহিসেবিপনার প্রক্রিয়া দেখা যায় বাজারে, সব কিছুর দামে থাকে অসহনীয় উর্ধগতি, সক্রিয় হয় ভেজালকারী ও কালোবাজারি মজুদদাররা। রমজান এলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য যেন কোন বাঁধনই মানতে চায় না। এক লাফে আকাশে চড়ে বসার মওকা ছাড়তে চায় না কোন খাদ্য বস্তুই। পাশাপাশি জামা কাপড়সহ অন্যান্য পণ্যও তাল মিলিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম চড়াতে থাকে। মাহে রমজানে কেন এ সামাজিক দুরবস্থা! অথচ রমজানে এমন হওয়া কাম্য ছিল না। রমজান এসেছে শুদ্ধির জন্য, পরম সাম্য সুন্দর ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। তাই রোজাদারকে সে শুদ্ধিতে অবতীর্ণ হতে হবে। আর যারা এ মৌসুমে খাদ্য সঙ্কট সৃষ্টি করে ইবাদত ও ইবাদতকারীর শান্তি বিঘিœত করে, তারা কখনো দুনিয়া ও আখিরাতে লাঞ্ছনা থেকে মুক্তি পাবে না। যদিও তারা মনে করছে তারা খুবই চালাক এবং লাভবান। হুজুর আকরাম (স.) বলেই ফেলেছেন : মান গাস্সা ফালাইছা মিন্না – যে বা যারা প্রতারনা করে সে আমার দলভুক্ত হতে পারে না।’
সূরা হুদের কিছু স্থান জুড়ে বর্ণিত হয়েছে হযরত শোয়াইব (আ) ও তার জাতির কথা। এতে মাদায়েন জাতির ধ্বংসের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে মাপে কম দেয়াকে। আরবীতে একে বলা হয় তাতফীফ। ওয়াইলুল্লিল মুতাফ্ফিফীন আয়াতে তাদের জন্য কঠোর শাস্তির বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ওলামায়ে উম্মতের ইজমা বা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুসারে এটি সম্পূর্ণ হারাম বা অবৈধ। হজরত শোয়াইব (আ) বলেন : হে আমার কওম! আল্লাহর বন্দেগী কর। তিনি ছাড়া আমাদের কোন মাবুদ নেই। আর পরিমাপে ও ওজনে কম দিও না, আজ আমি তোমাদেরকে ভাল অবস্থায়ই দেখছি, কিন্তু আমি তোমাদেরকে এমন একদিনের আজাবের আশঙ্কা করছি যে দিনটি পরিবেষ্টনকারী। আর হে আমার জাতি! ন্যায়-নিষ্ঠার সঙ্গে সঠিকভাবে পরিমাপ কর ও ওজন দাও এবং লোকদের জিনিসপত্রের কোনরূপ ক্ষতি করো না, আর পৃথিবীতে ফ্যাসাদ করে বেড়াবে না।
তারা বলে : ‘ওহে শোয়াইব (আ)! আপনি যা বলেছেন তার অনেক কথাই আমরা বুঝিনি। আমরা তো আপনাকে আমাদের মধ্যে দুর্বল ব্যক্তি মনে করি। আপনার ভাই-বন্ধুরা না থাকলে আমরা আপনাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করতাম। আমাদের দৃষ্টিতে আপনি কোন মর্যাদাবান ব্যক্তি নন।’ (এরপর ক্রমেই) আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও সর্বশ্রোতার হুকুম এলো। আমি শোয়াইব (আ) ও তার সঙ্গী ইমানদারগণকে নিজ রহমতে রক্ষা করি। আর পাপীষ্টদের ওপর বিকট গর্জন পতিত হলো। ফলে ভোর না হতেই তারা নিজেদের ঘরে উপুড় হয়ে পড়ে রইল। যেন তারা সেখানে কখনো বসবাসই করেনি…।’- (সূরা হুদ)।
আল্লাহ পাক যেন আমাদেরকে এ ধরনের আযাব থেকে পানাহ দেন। রক্ষা করেন ভয়াবহ সুনামি থেকে। আর এজন্য অবশ্যই আমাদেরকে তাওবা করতে হবে। চলতে হবে সৎভাবে।