কদমতলীর ৫ রেস্টুরেন্টে পরিবহন শ্রমিকদের হামলা ॥ কুমারগাঁও বাস টার্মিনালে হোটেল বন্ধ করলেন মুসল্লিরা

28

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর দক্ষিণ সুরমা কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে রমজান মাসের জন্য চালু করা ৫টি হিন্দু রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা। হিন্দুদের জন্য রেস্টুরেন্ট খুলে মুসলামানদের কাছে খাবার বিক্রির অভিযোগে এই হামলা চালানো হয় বলে জানা গেছে।
গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াই টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। কৃষ্ণ দাস, সুজন দাস ও রঙ্গলাল দাসসহ ৫ ব্যক্তি বাস টার্মিনালের ভেতরে পর্দা দিয়ে আড়াল করা এই ৫টি রেস্টুরেন্ট হামলা চালায়। তবে টাংগিয়ে রাখা লাল কাপড়ে হিন্দু হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের ব্যানারে লেখা রয়েছে ‘মাহে রমজান এর পবিত্রতা রক্ষার স্বার্থে মুসলিম ভাইদের দিনের বেলায় এসব হোটেলে প্রবেশ নিষেধ’।
এছাড়া গতকাল শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর কুমারগাঁও বাস টার্মিনালে রমজান মাসে দিনের বেলায় হোটেলে খাবার সামগ্রী পরিবেশন করায় কয়েকটি হোটেল বন্ধ করে দেন মুসল্লিরা।
জানা গেছে, কদমতলী বাস টার্মিনালের কয়েকটি রেস্টুরেন্টে রমজান মাসে পর্দা টাংগিয়ে হিন্দু শ্রমিকদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। তবে মুসলমান পরিবহণ শ্রমিকদের অভিযোগ, হিন্দুদের জন্য চালু রাখা এসব রেস্টুরেন্টে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছে খাবার বিক্রি করা হয়। এমন অভিযোগে শুক্রবার জুমার নামাজের পর একদল শ্রমিক হামলা চালিয়ে রেস্টুরেন্টের সামনে টানানো পর্দা টেনে খুলে ফেলেন। এসময় রেস্টুরেন্টের মালিক ও ক্রেতাদের তারা শাসান।
একটি রেস্টুরেন্ট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কৃষ্ণ দাস বলেন, গত ২৫ বছর ধরে আমি রমজানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের জন্য রেস্টুরেন্ট চালাচ্ছি। কখনো এমন হামলার ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, রেস্টুরেন্টে শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনই খাবার খেয়ে থাকেন। কিন্তু না বুঝে পরিবহন শ্রমিকরা শুক্রবার হামলা চালিয়েছেন।
সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ শামসুল হক মানিক বলেন, হিন্দু রেস্টুরেন্টের নামে পর্দা টাংগিয়ে মুসলমানদের খাওয়ানো হচ্ছিল। তাই তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। পর্দা না টাংগিয়ে রেস্টুরেন্ট খোলা রাখতে তাদেরকে বলা হয়েছে। যাতে ভেতরে কারা খাবার খাচ্ছে তা লোকজন দেখতে পারে।
দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ফজল বলেন, রেস্টুরেন্টে হামলা চালানোর কোনো অভিযোগ এখনও পাইনি।
এদিকে, গতকাল শুক্রবার কুমারগাঁও বাস টার্মিনাল এলাকায় কয়েকটি হোটেল বন্ধ করে দিয়েছেন মুসল্লিরা। জুম্মার নামাজের পর স্থানীয় শেখপাড়া মসজিদের মুসল্লিরা বের হয়ে হোটেলগুলো বন্ধ করে দেন। তাদের দাবি, রমজান মাসে দিনের বেলায় এসব হোটেলে খাবার সামগ্রী পরিবেশন করা হচ্ছিল। তাতে রমজানের পবিত্রতা বিনষ্ট হচ্ছে। এ কারণে তারা হোটেল মালিকদের অনুরোধ জানিয়ে দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় স্থানীয় কাইয়ুম এবং সুজন নামের দুজন হোটেল বিক্রেতা প্রকাশ্যে খাবার বিক্রি করছিলেন। এজন্য মুসল্লিরা ওই দুই দোকানের জিনিসপত্র ফেলে দেন এবং ভাঙচুরও করেন।
স্থানীয় মুরব্বিরা জানান, রমজানের আগে বাজারের হোটেল ব্যবসায়ীদের দিনের বেলায় খাবার পরিবেশন না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। এরপরেও তারা খাবার বিক্রি করছিলেন। এ কারণে জুমার নামাজের পর মুসল্লিরা হোটেলগুলো বন্ধ করে দেন।