ছাত্রলীগের সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ ॥ পুনর্মিলনীতে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী

94

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রাচীন দল আওয়ামী লীগ থেকেও এক বছরের অগ্রজ হচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতার আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আজ ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বাংলা ও বাঙালির স্বাধীনতা ও স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্যেই মূল দল আওয়ামী লীগের জšে§র এক বছর আগেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া গৌরব ও ঐতিহ্যের এ ছাত্র সংগঠনটি। গৌরব, ঐতিহ্য ও সংগ্রামের ৭২ বছরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রলীগ তিন দিনব্যাপী কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৬টায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সকল সাংগঠনিক কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৭টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কেক কাটা হবে।
এদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগ পুনর্মিলনীর আয়োজন করেছে। পুনর্মিলনীতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এই অনুষ্ঠানে থাকার কথা রয়েছে ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতাকর্মীদের। এতে সভাপতিত্ব করবেন সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সঞ্চালনা করবেন দলটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। পুনর্মিলনীতে সাবেক সকল সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও সদ্য অব্যাহতি পাওয়া কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানীকে দাওয়াত দেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। তার নেতৃত্বেই ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে আনুষ্ঠানিকভাবে এর যাত্রা শুরু হয়। তৎকালীন তরুণ নেতা শেখ মুজিবের প্রেরণা ও পৃষ্ঠপোষকতায় একঝাঁক মেধাবী তরুণের উদ্যোগে সেদিন যাত্রা শুরু করে ছাত্রলীগ। ৭২ বছরে ছাত্রলীগের ইতিহাস হচ্ছে জাতির ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, মুক্তির স্বপ্ন বাস্তবায়ন, স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনা, গণতন্ত্র প্রগতির সংগ্রামকে বাস্তবে রূপদানের ইতিহাস। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সংগ্রামে ছাত্রলীগ নেতৃত্ব দিয়েছে এবং চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে।
১৯৪৯ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল হিসেবে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগে’র আত্মপ্রকাশ ঘটে, যা পরে আওয়ামী লীগ নাম ধারণ করে এ দেশের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়। এ প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বাঙালী জাতির ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বাহান্নর ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাঙালীর ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, ৫৪’র সাধারণ নির্বাচনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ পরিশ্রমে যুক্তফ্রন্টের বিজয় নিশ্চিত, ৫৮’র আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা, ৬৬’র ৬ দফা নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া, ৬ দফাকে বাঙালী জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পাক শাসকের পদত্যাগে বাধ্য করা এবং বন্দীদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করা, ৭০’র নির্বাচনে ছাত্রলীগের অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখসমরে ছাত্রলীগের অংশগ্রহণ, স্বাধীনতাপরবর্তী সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্রে উত্তরণসহ প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগের অসামান্য অবদান দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পরে জাতীয় রাজনীতিতেও নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এখনও দিয়ে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বর্তমান জাতীয় রাজনীতির অনেক শীর্ষনেতার রাজনীতিতে হাতেখড়িও হয়েছে ছাত্রলীগ থেকে। উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও প্রাচীন ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭২তম বার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শনিবার পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান ছাড়াও আগামী ৬ জানুয়ারি সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাশে বটতলায় ছাত্রলীগের উদ্যোগে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী পালন করা হবে। ৭ জানুয়ারি সকাল ১০টায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ এবং বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতার সামনে দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।