ওড়িশায় ফণী আঘাতের পর দুর্বল হয়ে পড়ে ॥ মধ্যরাতের পর খুলনা সাতক্ষীরা অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ ॥ উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টি

50
ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সিলেটে বিরূপ আবহাওয়ায় দিন ভর বৃষ্টি।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ওড়িশার স্থলভাগে আঘাত হানার পর শক্তি খুইয়ে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় ফণী। দুর্বল অবস্থায় শনিবার মধ্যরাতের পর থেকে দেশের খুলনা, সাতক্ষীরা অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে থাকে। এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলায় ঝড়োহাওয়া বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দেশের উপকূলে প্রবেশের পর এটি আরও

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের ছামাউরাকান্দির হাওর থেকে ধান কেটে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন কৃষকরা। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ছবিটি ক্যামেরাবন্দী করেছেন আমাদের নিজস্ব স্টাফ ফটোগ্রাফার রেজা রুবেল।

দুর্বল হয়ে পড়বে। এর প্রভাবে আজ শনিবার সারাদেশে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়ে পড়ায় দেশে এর প্রভাবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নেই বলে জানা গেছে। আজ দেশের ভেতরে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে এটি আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।
এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে শুক্রবার মধ্যরাতে। এ সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল বলেন, ফণীর সতর্কতা জারির পর বিকেল পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে ১২ লাখ ৪০ হাজার ৭৯৫ জনকে। ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান বলেন, দুর্যোগ পরিস্থিতির জন্য যে প্রস্তুতি আছে, আশা করি আমরা সফলভাবে মোকাবেলা করতে পারব। কোন প্রাণহানি হবে না বলে আমাদের প্রত্যাশা।
এদিকে ফণীর প্রভাবে আজ সারাদেশে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে বন্যা, পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি বিবেচনা করে শুক্রবার এক বিশেষ বার্তায় বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতীয় অঞ্চলসমূহের কতিপয় স্থানে আগামী ৭২ ঘণ্টায় ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হতে পারে। এর প্রভাবে ওই অঞ্চলগুলোর প্রধান নদীগুলো, বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, সুরমা, কুশিয়ারা, কংস, যাদুকাটা, তিস্তা নদীর পানির পৃষ্ঠ আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দ্রুতত বৃদ্ধি পেতে পারে। কোথাও কোথাও বিপদসীমা অতিক্রম করে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ওড়িশায় আঘাতের পরই এটা দুর্বল হতে থাকে। প্রায় ২শ’ কিলোমিটার বেগে এটি ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানলেও রাত ৮টায় এই রিপোর্ট লেখার সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার ছিল। যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টির পার্শ¦বর্তী এলাকার নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। ফলে মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ৯টা বাজার কিছু আগে ওড়িশা উপকূলে ১৯৫ কিলোমিটার বেগে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় ফণী। ফলে ওই এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিসহ ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দুপুরের পর এটি ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। আবহাওয়া অফিসের হিসাব অনুযায়ী শুক্রবার সন্ধ্যার পর এটি ওড়িশা পশ্চিমবঙ্গের মাঝামাঝি অবস্থান করছিল। গভীর রাতে এটি বাংলাদেশের উপকূলে প্রবেশ করে।
আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, ওড়িশায় আঘাতের পর ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হতে থাকে এবং সাধারণ ঝড়ের রূপ নিয়ে এটি বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করে। ফলে উপকূলীয় এলাকায় এর প্রভাবে ব্যাপক ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশে প্রবেশ করে এটি খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট যাশোর কুষ্টিয়া, রাজশাহী, ফরিদপুর, ঢাকা হয়ে মেঘালয়ের দিকে চলে যাবে।
এদিকে শুক্রবার সকালে ঘূর্ণিঝড় ফণী ওড়িশায় আঘাত করলেও এর অগ্রভাগের প্রভাবে সকাল থেকেই দেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ে হাওয়া বয়ে যেতে থাকে। দুপুরের পর থেকে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটসহ উপকূলীয় জেলায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত শুরু হয়। জোয়ারের পানি স্বাভাবিক উচ্চতার চেয়ে ২ ফুট বেশি প্লাবিত হয়ে পড়ে। অনেক স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে। দ্বীপ এলাকার সঙ্গে মূল ভূখন্ডের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও বাগেরহাটের শরণরখালা বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ফণীর অগ্রভাগের প্রভাবে শুক্রবার দুপুর থেকেই খুলনায় ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারে নদীর পানির উচ্চতা কয়েক ফুট বেড়ে যাওয়ায় কয়রার হরিণখোলা, ঘাটাইল, পাইকগাছার দেলোটি ইউনিয়নের কালীনগর, গড়াইখালী ইউনিয়নের কুমখালী এলাকায় নদীভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
এদিকে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়টি ওড়িশায় আঘাতের ফলে সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে ওড়িশাঞ্চলজুড়ে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। অনেক স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বন্যার খবর পাওয়া গেছে। আগ থেকে ঘূর্ণিঝড় সতর্কতায় ভুবনেশ্বর বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হয়। এদিকে আশঙ্কা, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত মোকাবেলায় কলকাতার বিমানবন্দর আজ সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ফণীর ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে মহান আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল বাদ জুম্মা হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ মসজিদে দোয়ার একাংশ।

ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আসার আশঙ্কায় দেশের বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকেই সারাদেশে নৌচলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার দেশের অভ্যন্তরের সব রুটেই নৌচলাচল বন্ধ ছিল। এর ফলে চলমান এইচএসসি পরীক্ষায়ও পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ ব্যাপক প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে। উপকূলীয় ১৯ জেলায় লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে ফণী মোকাবেলায় সার্বিক কার্যক্রম মনিটর করা হচ্ছে। ফণীর প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে গাছচাপা পড়ে বাগেরহাটে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
আবহাওয়া অফিস শুক্রবার বেলা তিনটায় তাদের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে, ভারতের ওড়িশা উপকূল ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর, উত্তর-পূর্ব অগ্রসর এবং কিছুটা দুর্বল হয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আকারে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি বিকেল ৩টায় মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৬০ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৬০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ৩ মে মধ্যরাত নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছায়। তবে খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শুক্রবার সকাল থেকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুরু হয়েছে। ফলে মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৭ নম্বর নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। অপর দিকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এতে আর উল্লেখ করা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
সাতক্ষীরা : ঘূর্ণিঝড় ফণী আতঙ্ক চলছে জেলাজুড়ে। আশাশুনির কুড়ি কাউনিয়া এলাকায় জরাজীর্ণ বাঁধ উপচে এলাকায় পানি ঢুকেছে। উপকূলজুড়ে দুপুর থেকে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। রাতে জোয়ারের পানি আর ফণীর তান্ডবে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছে উপকূলবাসী। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার অফিসে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। এসব উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে সতর্ক সংকেত হিসেবে লাল পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এছাড়া পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত জেলার সকল সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে কর্ম এলাকায় থাকতে বলা হয়েছে।
খুলনা : ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাব খুলনা মহানগরীসহ জেলার উপকূলীয় উপজেলা এলাকায় শুক্রবার দুপুর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। কখনও মাঝারি আবার কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। বিকেলে অবশ্য আকাশে মেঘ থাকলেও বৃষ্টি হয়নি। তবে মৃদু বাতাস বয়ে যায়। নদ-নদীতে জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। এর আগে সকাল থেকে খুলনার উপকূলীয় উপজেলার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করে প্রশাসন। পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য মাইকিংও করা হয়।
বাগেরহাট : শরণখোলা উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্রবল বেগে গ্রামের মধ্যে পানি ঢুকছে। পানির চাপে বগি, সাতঘরসহ কমপক্ষে ৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বলেশ্বর নদীর পানি বাড়ায় এবং তীব্র ঢেউয়ের আঘাতে শুক্রবার দুপুরে এ বাঁধটি ভেঙ্গে যায়। এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণীর হাত থেকে রক্ষা পেতে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে শুরু করেছে বাগেরহাটবাসী। শুক্রবার বিকেল থেকেই প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া শুরু করেছে এ এলাকার মানুষ। ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বাগেরহাট সদর উপজেলায় ঝড়ের সময় গাছ ভেঙ্গে চাপা পড়ে শাহিনুর ওরফে রমিচা বেগম (৫০) নামে এক নারীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
বরিশাল : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বরিশালে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। শুক্রবার দুপুর দুইটার দিকে দমকা হাওয়ার সঙ্গে শুরু হয় বৃষ্টি। আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢেকে যায়। কিছুক্ষণ মাঝারি বৃষ্টি হওয়ার পর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও হাল্কা বাতাস অব্যাহত রয়েছে। নদীতেও পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। হঠাৎ বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় রাস্তায় থাকা মানুষজন দ্রুত নিরাপদস্থানের দিকে ছুটতে শুরু করে। এদিকে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর বরিশালের উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে ফণী আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত এসব মানুষ ছুটছেন আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে।
বরগুনা : ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে জেলার উপকূলীয় এলাকায় বেলা ১২টার দিকে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বইছে। এর মধ্যেই বেলা পৌনে ১টার দিকে ৬০ থেকে ৮০ কি, মি. বেগে হঠাৎ করে একটা দমকা হাওয়া বয়ে যায়। এ সময় এলাকার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। নদ-নদীতে জেয়ারের পানি ৩ থেকে ৪ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভোলা : ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েকদফা বৃষ্টি ও মাঝারি ঝড়ো বাতাস হয়েছে। তবে মাঝে মধ্যে রোদ ও বৃষ্টিপাত হয়েছে। দুপুরের পর থেকে ভোলার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে ঝড়োবাতাস বয়ে যায়। তবে এতে কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া না গেলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।
ঝালকাঠি : ঝালকাঠিতে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে পানির চাপে বিষখালী নদী তীরের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। দুপুরের পর কাঁঠালিয়া সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব এলাকার লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও জেলার নদ-নদীগুলোর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দুই-তিন ফুট বেড়েছে।
কলাপাড়া : ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে লালুয়ার চারিপাড়া, চৌধুরীপাড়া, নয়াকাটা, পশুরবুনিয়া, বানাতিপাড়াসহ সাত গ্রামের মানুষ অস্বাভাবিক জোয়ারের প্লাবনের শিকার হয়। তারা চারিপাড়া ও বানাতিবাজার সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেয়। সন্ধ্যায় আশ্রয় নেয়া মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।