কাজিরবাজার ডেস্ক :
শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার মাস্টারমাইন্ড জাহরান হাশিম অন্তত দুই বছর ভারতের বসবাস করেছিল। দেশটির বহুল প্রচারিত দৈনিক ‘দ্য হিন্দুর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, স্বল্প পরিচিত জঙ্গি সংগঠন এনটিজে (ন্যাশনাল তাওহিত জামায়াত যেসব উগ্রবাদী বার্তা প্রচার করত তার অধিকাংশই হাশিমের দেয়া। এদিকে এই হামলায় জড়িত সন্দেহে শ্রীলঙ্কার দুটি জঙ্গি গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনা। খবর দ্য হিন্দু ও ডেকানক্রনিকল অনলাইনের। শনিবার এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা দেশটির ন্যাশনাল তাওহিদ জামায়াত (এনটিজে) ও জামাতি মিল্লাথু ইব্রাহিমকে জরুরী ক্ষমতাবলে নিষিদ্ধ করার কথা জানান। এক সপ্তাহ আগে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোসহ তিনটি শহরে চালানো ওই ভয়াবহ হামলায় ২৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হন। শ্রীলঙ্কার সরকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এর আগে কর্তৃপক্ষ স্বল্প পরিচিত ওই দুটি গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ করার জোরালো পদক্ষেপ নিতে পারেনি কারণ তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রমাণ ছিল না। বোমা হামলার সন্দেহভাজন মূল পরিকল্পনাকারী জাহরান হাশিম এনটিজে অথবা এর একটি দলছুট অংশের নেতৃত্ব দিত বলে পুলিশের বিশ্বাস। অপরদিকে জামাতি মিল্লাথু ইব্রাহিম আরও কম পরিচিত দল হলেও এর সদস্যরা ওই বোমা হামলায় একটি ভূমিকা পালন করেছিল বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে। ওই হামলাগুলোর দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট। তবে নিজেদের দাবির স্বপক্ষে গোষ্ঠীটি কোন প্রমাণ দাখিল করেনি। গত সপ্তাহের বোমা হামলার পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো ১শ’ জনকে আটক করেছে। এদের মধ্যে সিরীয় ও মিসরীয়সহ বিদেশীরাও রয়েছেন। নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নতির পাশাপাশি তল্লাশি অভিযান চালাতে ভারত মহাসাগরের দ্বীপ দেশটি জুড়ে প্রায় ১০ হাজার সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে শ্রীলঙ্কার পূর্ব উপকূলের আমপারা জেলার সাইন্থামারুথুর এলাকার একটি বাড়িতে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের সময় গোলাগুলির সূত্রপাত হয়। এতে আত্মঘাতী ভেস্ট পরা তিন ব্যক্তি ও ছয় শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়। এখানে গোলাগুলিতে বোমা হামলার প্রধান সন্দেহভাজন জাহরানের স্ত্রী ও মেয়ে আহত হয়েছেন বলে জাহরানের বোন জানিয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে এ বন্দুকযুদ্ধেরও দায়ও শনিবার স্বীকার করেছে আইএস। জঙ্গিগোষ্ঠীটির বার্তা সংস্থা আমাক জানিয়েছে, ওই রাতে তাদের তিন সদস্য তাদের আত্মঘাতী ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটানোর আগে কয়েক ঘণ্টা ধরে শ্রীলঙ্কান পুলিশের সঙ্গে বন্দুক লড়াই করছে।
এ হামলার ঘটনায় ১৭ পুলিশ সদস্য নিহত বা আহত হয়েছে বলে গোষ্ঠীটি দাবি করেছে। তবে নিজেদের দাবির স্বপক্ষে কোন প্রমাণ দেয়নি তারা। পৃথক আরেকটি অভিযানে জাহরানের গাড়ি চালককে আটক করা হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে পুলিশ জানিয়েছে। ওই একই এলাকার অন্য একটি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বোমা তৈরির উপকরণ, বহু জেলিগনাইট স্টিক, কয়েক হাজার বল বিয়ারিংসহ আইএসের একটি পতাকা ও কয়েকটি ইউনিফর্ম পাওয়া গেছে।
এদিকে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া আপাতত ভারতীয়দের শ্রীলঙ্কা ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে ভারত। শনিবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত সতর্কতা জারি করে। আর শ্রীলঙ্কা গেলে দেশটির ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। শ্রীলঙ্কা সফররত ভারতীয়দের জন্য কয়েকটি হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে। এর আগে অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের আপাতত শ্রীলঙ্কা সফরে সতর্ক করে। দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার মূল পরিকল্পনাকারী জাহরানের বাড়ি শ্রীলঙ্কার কাত্তানকুড়ি এলাকায়। এলাকাটি মুসলমান অধ্যুষিত। এখানেই ২০১১ সালে এনটিজে নামে সংগঠনটি গড়েন জাহরান। ৩৩ বছর বয়সী জাহরান হাশিম সবার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখত। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে হাশিম সবার থেকে বড়। জাহরানের বোন মাদানিয়া বলেছেন, গত ১৮ এপ্রিলের পর থেকে হাশিমের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি। আমি জানি না তারা কোথায় আছে। তিনি জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের পর থেকে জাহরান ধর্ম নিয়ে অন্যরকম ভাবতে শুরু করে। জাহরান বলত, শুধু মুসলিমদের জন্যই গোটা বিশ্ব। সে অন্য ধর্মাবলম্বীদের বিপক্ষে ছিল। সেই বছরেই একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে হাশিমের গোষ্ঠী এনটিজে সংগঠনের গুলির লড়াই হয়। তারপর থেকে আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে যায় হাশিম।