বাংলাদেশেও জঙ্গি হামলার চেষ্টা চলছে -প্রধানমন্ত্রী

56
ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ইনস্টিটিউট ও স্থাপনা সমূহের উদ্বোধন করে মোনাজাত করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজশাহীর উন্নয়নে সরকার পৃথকভাবে দৃষ্টি দিয়েছে। বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা ও রাজশাহীর মধ্যে সরাসরি বনলতা ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশেও জঙ্গি হামলার চেষ্টা চলছে মন্তব্য করে তিনি দেশবাসীকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা-রাজশাহী রুটে বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন ‘বনলতা এক্সপ্রেস’র উদ্বোধন করে রবিবার শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলোম্বোর দুটি গির্জা ও হোটেলে একযোগে বোমা হামলার প্রসঙ্গটি তোলেন। ওই হামলায় মৃতের সংখ্যা সাড়ে তিন শ’ ছাড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে শেখ হাসিনার ফুপাত ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিমের আট বছর বয়সী নাতি জায়ান চৌধুরীও রয়েছে। আহত হয়েছেন জায়ানের বাবা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে জঙ্গীবাদ শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী একটা সমস্যা। মাত্র কয়েকদিন আগেই শ্রীলঙ্কায় যে ঘটনা ঘটল তাতে আমরা বাংলাদেশের কয়েকজনকে হারিয়েছি। বাংলাদেশের শিশু জায়ানকে আমাদের হারাতে হয়েছে এই জঙ্গী সন্ত্রাসের কারণে। বাংলাদেশেও এই ঘটনা ঘটানোর অনেক চেষ্টা চলছে। তবে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশবাসীকেও এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে, যারা এর সঙ্গে জড়িত হবে তাদের খোঁজ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে জানাতে হবে।
ঢাকা-রাজশাহী বনলতা এক্সপ্রেস উদ্বোধন : প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজশাহীর উন্নয়নের দিকে আমরা আলাদাভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করছি। আমরা পদ্মা ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। রেল, নৌ এবং আকাশপথ যোগাযোগেরও উন্নয়ন দরকার। আমরা রাজশাহী, সৈয়দপুর ও বরিশালের বন্ধ বিমানবন্দর চালু করেছি। ঢাকা ও রাজশাহীর মধ্যে সরাসরি বনলতা ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এখন রেলপথ যেন প্রতিটি বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে সেই পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। তাহলে পিছিয়েপড়া এলাকাগুলোতে সহজে কাঁচামাল নিয়ে যাওয়া এবং উৎপাদিত পণ্য পাঠানো যাবে। নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে। তিনি বলেন, সামনে ঈদ আর জ্যৈষ্ঠ মাসের পাকা আম- দুটোই মাথায় রেখে আমরা বনলতা এক্সপ্রেস চালু করলাম। আশা করি, রাজশাহী থেকে আম আসবে। আর ঈদ করতে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরবে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী এই ট্রেন সার্ভিসের নাম রাখেন বনলতা এক্সপ্রেস। উদ্বোধনের পর বেলা ১১টা ৪৪ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে রাজশাহী ত্যাগ করে। প্রথম দিন যাত্রীরা বিনাটিকেটেই এই ট্রেনে যাত্রা করেন। এর মধ্য দিয়ে রাজশাহীবাসীর আরেকটি প্রাণের দাবি পূরণ হলো। ঢাকা-রাজশাহী যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন এক মাত্রা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে রেলকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখলাম। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশের বিভিন্নস্থানের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ করে রেখেছিল। আমরা সেসব রেল যোগাযোগ পর্যায়ক্রমে চালু করছি। রেলের জন্য আমরা নতুন নতুন বগি কিনেছি। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। আন্দোলনের নামে সরকারী সম্পদ ধ্বংস করেছে।
এদিকে এপারে রাজশাহীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রেলমন্ত্রী মোঃ নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেন, যে দেশ যত উন্নত সে দেশের রেল তত উন্নত। তিনি বলেন, রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম আমরা রেলের মাধ্যমে গোটা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। সেই পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচলকারী একটি ট্রেন যেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত যায় সেই পরিকল্পনাও আমরা ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছি। এ জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ ট্রেনে পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করছি।
উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনও। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, বিরতিহীন ট্রেন চালু, এটি যে কত বড় ভাগ্য! কত বড় পাওয়া তা আমি বলে বোঝাতে পারব না। ট্রেনটি চালু করার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু এমপি, রাজশাহী-৫ আসনের এমপি ডাঃ মনসুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের এমপি ডাঃ সালিম উদ্দিন আহমেদ শিমুল, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি আদিবা আনজুম মিতা, সাবেক এমপি আখতার জাহান, বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমান, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক খোন্দকার শহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। ভিডিও কনফারেন্স পরিচলনা করেন জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের। উল্লেখ্য, রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নির্বাচনী ইশতেহারে ঢাকা-রাজশাহী বিরতিহীন ট্রেন চালুর প্রতিশ্রুতি ছিল। সম্প্রতি বনলতা এক্সপ্রেসের জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে অত্যাধুনিক বগি আমদানি করা হয়। এতে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। প্রতিটি বগির দাম পড়ে সাড়ে চার কোটি টাকা। বনলতার ১২টি বগিতে প্রতিদিন ২ হাজার যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবেন। রেলপথ বিভাগ থেকেই এই ট্রেনে ভ্রমণকারীদের জন্য নিশ্চিত করা হবে খাবার। ট্রেনটি থেকে বছরে সরকারের আয় হবে ৩৭ কোটি টাকা। বনলতাই দেশের একমাত্র ট্রেন যা পরিবেশের কোন ক্ষতি করবে না। ট্রেনটিতে রয়েছে উড়োজাহাজের মতো বায়োটয়লেট। এ কারণে মলমূত্র রেললাইনের ওপর পড়বে না। রয়েছে রিক্লেনার চেয়ার ও স্লাবইডিং ডোর। আছে ওয়াইফাই সুবিধা। প্রতিটি বগিতে রয়েছে এলইডি ডিসপ্লে, যার মাধ্যমে স্টেশন ও ভ্রমণের তথ্য প্রদর্শন করা হবে। রয়েছে অজুখানা ও নামাজের স্থান। এছাড়া রয়েছে প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্দিষ্ট আসন। কিন্ত নেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোন ধরনের সিøপিং বার্থ। ট্রেনটি শুধু দিনেরবেলায় চলাচল করবে, তাই এর দরকার পড়ছে না আপাতত।
ট্রেনে মোট আসন সংখ্যা ৯২৭টি। বিরতিহীন ভ্রমণের জন্য অন্য ট্রেনের তুলনায় যাত্রীদের ১০ শতাংশ বেশি ভাড়া গুনতে হবে। সাধারণ শোভন চেয়ারের ভাড়া পড়বে ৩৭৪ টাকা। এসি চেয়ারের ভাড়া লাগবে ৭২২ টাকা। ৩৪৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবে চার ঘণ্টা ৪০ মিনিটে। অন্য ট্রেনের তুলনায় সময় বাঁচবে প্রায় দুই ঘণ্টা। ঘণ্টায় ট্রেনটির সর্ব্বোচ্চ গতিবেগ উঠবে ৯০ থেকে ৯৫ কিলোমিটার। ২৭ এপ্রিল থেকে সপ্তাহের শুক্রবার বাদ দিয়ে বাকি ছয়দিন ট্রেনটি ঢাকা-রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলাচল করবে। সকাল ৭টায় ট্রেনটি রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে পৌঁছবে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে। আর ঢাকা থেকে দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে যাত্রা শুরু করে রাজশাহী পৌঁছবে সন্ধ্যা ৬টায়।
বেলকুচি মৎস্য ডিপ্লোমা ও ভেটেরিনারি কলেজ উদ্বোধন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার আজগড়ায় প্রতিষ্ঠিত মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট ও সরকারী ভেটেরিনারি কলেজের উদ্বোধন করেছেন। দুপুর ১টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তিনি উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গঠনে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা দারিদ্র্যতাকে শূন্যের কোটায় এনে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত- সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। এ জন্য সুপ্রশিক্ষিত জনশক্তি ও আমিষের উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর বিশেষ দৃষ্টি রাখা হয়েছে। এরই ধারবাহিকতায় এসব প্রকল্প চালু করা হলো। প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে দক্ষ, প্রশিক্ষিত জনসম্পদ সৃষ্টির পাশাপাশি আমিষের উৎপাদনও বৃদ্ধি হবে। এ সময় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, সচিব মোঃ রইচ উল আলম ম-ল উপস্থিত ছিলেন। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শহীদ শামসুদ্দিন সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ হাবিবে মিল্লাত মুন্না, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন ম-ল, সাবেক মন্ত্রী ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফোরকান শিকদার।
কিশোরগঞ্জ মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট উদ্বোধন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদিন কিশোরগঞ্জ মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন। এ সময় কালেক্টরেট সম্মেলন কক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক মোঃ সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বলেন, ৫.৫ একর জায়গার ওপর কিশোরগঞ্জ মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটটি অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে জেলার প্রাণকেন্দ্রে খুবই দৃষ্টিনন্দনভাবে তৈরি হয়েছে। হাওড়, নদ-নদী এবং প্লাবনভূমিসমৃদ্ধ এ জেলায় বর্তমানে মাছের উৎপাদন ৭৮ হাজার ৪৮৩ মেট্রিক টন। অথচ এখানে মাছের চাহিদা হচ্ছে ৬৬ হাজার ৩২৮ মেট্রিক টন। এ জেলা মাছে উদ্বৃত্ত হচ্ছে ১২ হাজার ১৫৫ মেট্রিক। মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট স্থাপনের মাধ্যমে দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল সৃষ্টির মাধ্যমে এ অঞ্চলে মাছের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে অধিক মাছের উৎপাদনের মাধ্যমে আমাদের চাহিদার অতিরিক্ত মাছ বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। এ সময় গত ১০ বছরে কিশোরগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে বলেও জেলা প্রশাসক প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। কিশোরগঞ্জ মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা এই ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন।