দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিএনপির নির্বাচিত সাংসদের কেউ কেউ শপথ নিতে পারেন

18

কাজিরবাজার ডেস্ক :
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত ৬ সদস্যের শপথ নেয়ার সময় শেষ হচ্ছে আর মাত্র ৬ দিন পর। সংবিধান অনুসারে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে শপথ না নিলে তাদের আসনগুলো শূন্য হয়ে যাবে। বিএনপি হাইকমান্ড এখনও শপথ না নেয়ার পক্ষে। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচিত ৬ জন প্রকাশ্যে শপথ না নেয়ার কথা বললেও এদের মধ্যে কেউ কেউ ভেতরে ভেতরে সরকারী দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তাই শেষ পর্যন্ত ৬ জনের মধ্যে কেউ কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দিতে পারেন।
এদিকে লন্ডন থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচিত ৬ জন যেন শপথ নিয়ে সংসদে না যান সে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি নির্বাচিত ৬ জনের সঙ্গেই পৃথক পৃথকভাবে কথা বলে দলের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তারা সবাই তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলার সময় শপথ না নেয়ার কথা বললেও তাদের এখন কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। দলে তারেক রহমানের অনুসারী ক’জন তরুণ নেতা তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন। আর তারাও বিষয়টি আঁচ করতে পেরে সাবধানে পা ফেলছেন।
অভিজ্ঞ মহলের মতে, তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে নজরদারির মাধ্যমে কাউকে তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বিরত রাখা যায় না। তাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত ৬ জনের মধ্যে যদি কেউ শপথ নিয়ে সংসদে যেতে চায় তাহলে কেউ তাদের আটকে রাখতে পারবে না। আর সংসদে একবার যোগ দিলে বিএনপি আপত্তি জানালেও তাদের সংসদ সদস্য পদ বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই বিএনপি হাইকমান্ডও ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এ ৬ জনকে নিয়ে চরম টেনশনে রয়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির দলীয় ফোরামে বেশ ক’বার সংসদে যোগ দেয়া না দেয়ার বিষয়টি আলোচনায় স্থান পায়। দলের বেশিরভাগ নেতা সংসদে যোগ না দেয়ার পক্ষে অবস্থান নেয়। যদিও দল থেকে নির্বাচিত ৬ জনসহ কিছু নেতা সংসদে যোগ দেয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। তবে তারা আগে থেকেই বলে আসছে দলীয় হাইকমান্ড চাইলেই কেবল তারা সংসদে যোগ দেবে। এমন পরিস্থিতিতে কারাবন্দী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের দিন দিন অবনতি হতে থাকলে তাঁর প্যারোলে মুক্তির বিষয়টিও আলোচনায় আসে। ১ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর তাঁর প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি নতুন গতি পায়। আর তাঁকে প্যারোলে মুক্ত করতে হলে বিএনপি থেকে নির্বাচিত ৬ জনকে সংসদে যোগ দেয়াসহ বিভিন্ন শর্ত মানার বিষয়টিও আলোচনায় ওঠে আসে। তখন বিএনপি থেকে নির্বাচিত ৬ জনের মধ্যে কেউ কেউ প্রকাশ্যেই বলতে থাকেন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিলে তারা সংসদে যাবেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে কোন আভাস না পাওয়ায় বিএনপি মহাসচিব বিষয়টি নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। তখন খালেদা জিয়া জানিয়ে দেন তিনি প্যারোলে মুক্তি চান না। আর এরপর থেকেই বিএনপি হাইকমান্ড থেকে বলা হচ্ছে দলের নির্বাচিত ৬ জন সংসদে যাবেন না। তবে তারা ৬ জন আপাতত এ বিষয়ে কোন মন্তব্য না করলেও কেউ কেউ ভেতরে ভেতরে সংসদে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর ওই দিন রাতেই বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বাচন দাবি করে। এরপর পুনর্র্নিবাচনের দাবিতে কঠোর আন্দোলনের কথা বললেও তেমন কোন আন্দোলন কর্মসূচী পালন করতে পারেনি। তবে নির্বাচন বাতিলের দাবিতে নির্বাচন কমিশনে জোটগতভাবে আবেদন ও গণশুনানিসহ বেশ কিছু কর্মসূচী পালন করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি।
২০০৮ সালের ২৯ নবেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পরও বিএনপি সংসদে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিল। তবে এক পর্যায়ে তারা সংসদে গিয়ে সরকারের ভুলত্রুটির প্রতিবাদ করার পাশাপাশি দলের পক্ষে কথা বলেছেন। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে সে সুযোগ থেকেও তারা বঞ্চিত হন। তাই এবারও বিএনপি সংসদে না গেলে গণতান্ত্রিক চর্চা থেকে দলটি অনেক পিছিয়ে পড়বে। যা দেশ-বিদেশে বিএনপিকে নতুন করে চরম সমালোচনার মুখে পড়তে হবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত ৬ জন হলেন, বগুড়া-৬ আসন থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বগুড়া-৪ আসন থেকে মোশাররফ হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে মোঃ আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে মোঃ হারুন উর রশিদ, ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে জাহিদুর রহমান জাহিদ এবং বি. বাড়িয়া-২ আসন থেকে আবদুস সাত্তার ভূইয়া।
জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরুর পর থেকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচিতদের শপথ নিয়ে সংসদে যাওয়ার বাধ্যবাদকতা রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সংসদে না গেলে তাদের আসনগুলো শূন্য হবে। ৩০ এপ্রিল ৯০ দিন সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। গত বছর ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এ বছর ৩০ জানুয়ারি শুরু হয় প্রথম অধিবেশন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, দল থেকে নির্বাচিত ৬ জনের সংসদে না যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে শপথ নিয়ে সংসদে গেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তারপরও যদি কেউ শপথ নিয়ে সংসদে যেতে চায় সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। এ পরিস্থিতিতে দল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া ছাড়াও অন্যান্য ব্যবস্থা নিতে পারবে।