অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, আগামী এক মাসের মধ্যে তামাবিল স্থলবন্দরে ব্যাংকের বুথ চালু এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ শুরু হবে। এছাড়া পর্যটকদের ট্রাভেল ট্যাক্স বাতিলের বিষয়টি বিবেচনা, এডভান্স ইনকাম ট্যাক্স ও রেজিস্ট্রেশন ফি কমিয়ে আনা এবং ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন একদিনের মধ্যেই দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল শনিবার নগরীর দরগাহ্ গেইটস্থ হোটেল স্টার প্যাসিফিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও সিলেট চেম্বার এর উদ্যোগে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটের উপর এক প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব আশ্বাস দেন।
সিলেট চেম্বারের সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদ এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কাস্টম্স এক্সাইজ এন্ড ভ্যাট কমিনারেট সিলেটের কমিশনার গোলাম মোঃ মুনীর ও কর অঞ্চল-সিলেটের কর কমিশনার রনজীত কুমার সাহা। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য কাস্টম্স পলিসি মোঃ ফিরোজ শাহ্ আলম, সদস্য ভ্যাটনীতি আব্দুল মান্নান শিকদার, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মৃণাল কান্তি দেব, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পরিতোষ ঘোষ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মোঃ আসলাম উদ্দিন।
সিলেটে অনুষ্ঠিত এই প্রাক-বাজেট আলোচনায় সিলেট চেম্বারের পক্ষ থেকে অনেকগুলো প্রস্তাবনা এবং বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা তাদের দাবী ও প্রস্তাব তুলে ধরেন। জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমরা সবার পরামর্শ বিবেচনা করে আগামী বাজেটে তার প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করবো।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া আরো বলেন, সবার অংশগ্রহণে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ক্ষুদ্র থেকে বড় শিল্পের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থান। কিন্তু কর আদায়ের ক্ষেত্রে আমরা এখনও সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারিনি। যে কারণে প্রায় ১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশে মাত্র ২০ লক্ষ লোক ইনকাম ট্যাক্সের রিটার্ন জমা দেন। বিদেশে এই বিষয়টি এত সুসংগঠিত যে ভ্যাটের জালের বাইরে কেউ যেতে পারে না। এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে এবং করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত মধ্যম আয়ের দেশ ও উন্নত দেশের পর্যায়ে পৌঁছাতে হলে আমাদের সবাইকে সততার সাথে ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রদান করতে হবে। তিনি জানান, ইএফডি মেশিনের টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। সেন্ট্রাল সার্ভারের সাথে সংযুক্ত করে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে যাতে কোথায় কোথায় ভ্যাট আদায় হচ্ছে তা জানা যাবে। তিনি বলেন, ১৫ শতাংশ ভ্যাট থেকে বেরিয়ে এসে আমরা কয়েকটি ধাপ করে দেব। এর ফলে ছোট হারেও ভ্যাট আদায় করলে ভ্যাটের হার ও আওতা অনেক বাড়বে।
তিনি বলেন, দেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। জাতীয় বাজেটের ৬৫-৭০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ খাত থেকেই অর্জিত হয়। বিদেশী সাহায্যের উপর আমরা তেমন নির্ভরশীল নই। আমাদের মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। এটা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। তিনি বলেন, বর্তমানে ইনকাম ট্যাক্স ৩৭ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এডভান্স ইনকাম ট্যাক্স কর আদায়ের উন্নত একটি মাধ্যম। তবে আপনাদের দাবীর প্রেক্ষিতে সরকার কোন কোন ক্ষেত্রে এডভান্স ট্যাক্স কমানোর চেষ্টা করবে। কর অবকাশের বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রে সুফল নিয়ে আসে না, তাই এটা পর্যালোচনা করা হবে। কাস্টম ডিউটি পরবর্তী আমদানীর সাথে সমন্বয় করার চেষ্টা করা হবে। সরাসরি প্যাকেজ ভ্যাট থাকবেনা তবে টার্নওভার ৩৬ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে দেওয়া হবে যাতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ভ্যাটের বাইরে থাকেন। বিও একাউন্টে টিআইএন বাধ্যতামূলক নয় এই আইন এখনও বহাল রয়েছে। তবে ইন্স্যুরেন্সের ক্ষেত্রে টিআইএন বাধ্যতামূলক করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ভূমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন ফি কমানোর দাবী সর্বত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, রেজিস্ট্রেশন খরচ ১৪-১৫ শতাংশ হলেও আমরা মাত্র ৬ শতাংশ পেয়ে থাকি। এই রেজিস্ট্রেশন কমানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তিনি প্রাক-বাজেট আলোচনা সভা আয়োজন করার জন্য সিলেট চেম্বারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনাদের দাবী এবং প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে। উল্লেখিত দাবীর মধ্যে ইকোনমিক জোনের মত বিসিক শিল্প এলাকায় সুযোগ সুবিধা পেতে ইকোনমিক জোন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়া পাথর ও কয়লা আমদানীর জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা, কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি প্রদান, চিকিৎসক ও আইনজীবীদের কাছ থেকে সঠিকভাবে কর আদায় এবং সিলেটের সব শুল্ক স্টেশনে স্ক্যানিং মেশিন ও শেড নির্মাণের আশ্বাস দেন তিনি।
মুক্ত আলোচনা পরিচালনা করেন সিলেট চেম্বারের সহ সভাপতি মোঃ এমদাদ হোসেন। সভায় বিভিন্ন প্রস্তাব উপস্থাপন করেন ও বক্তব্য রাখেন পরিচালক এবং ভ্যাট, বাজেট, শুল্ক, কর ও ট্যারিফ সাব কমিটির আহবায়ক মোঃ হিজকিল গুলজার, পরিচালক পিন্টু চক্রবর্তী, কয়লা আমদানিকারক গ্র“পের সভাপতি চন্দন সাহা ও মোঃ আতিক হোসেন, সিএনজি ফিলিং স্টেশন ওউনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, ভোলাগঞ্জ পাথর আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি মুজিবুর রহমান মিন্টু, সিএন্ডএফ এজেন্ট গ্র“পের সাধারণ সম্পাদক মোঃ বশিরুল হক, হবিগঞ্জ চেম্বারের পরিচালক শেখ আনিসুজ্জামান, গণদাবী পরিষদের সভাপতি চৌধুরী আতাউর রহমান আজাদ, উইমেন্স চেম্বারের সভাপতি স্বর্ণলতা রায়, গণদাবীর কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারী অধ্যাপক শফিকুর রহমান এডভোকেট, সুনামগঞ্জ চেম্বারের পরিচালক নুরুল ইসলাম, কর আইনজীবি সমিতির সভাপতি এডভোকেট মোঃ আবুল ফজল, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম পাঠান, সাংবাদিক কলামিস্ট আফতাব চৌধুরী, ফল ও কাঁচামাল আমদানিকারক গ্র“পের সভাপতি মোঃ আবুল কালাম ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা চৌধুরী, বিসিক শিল্প মালিক সমিতি গোটাটিকরের সাধারণ সম্পাদক আলীমুল এহছান চৌধুরী, রড সিমেন্ট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মজনু মিয়া, সিলেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জিয়াউল হক, সিলেট চেম্বারের পরিচালক ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, সিলেট কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহিত চৌধুরী। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সিলেট চেম্বারের সিনিয়র সহ সভাপতি মাসুদ আহমদ চৌধুরী এবং সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাওলানা শেখ ছাদিকুর রহমান।
সভায় সাবেক এমপি সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, বিজিবি সিলেটের সেক্টর কমান্ডার লেঃ কর্নেল আহমেদ ইউসুফ জামিল পিএসসি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব ইখতিয়ার উদ্দিন মোঃ মামুন, মোঃ ওয়াহিদ উল্লাহ, এ বি এম শফিকুর রহমান, হাসান মোহাম্মদ তারেক রিকাবদার, দ্বিতীয় সচিব মোঃ তারিক হাসান, মোহাম্মদ মেহরাজ উল-আলম স¤্রাট, শাহ্ মোঃ ফজলে এলাহী, উপ সচিব মোঃ কামরুল হাসান, যুগ্ম কর কমিশনার মিনহাজ উদ্দিন পালোয়ান, সিলেট চেম্বারের পরিচালক মোঃ সাহিদুর রহমান, এহতেশামুল হক চৌধুরী, মোঃ আব্দুর রহমান (জামিল), হুমায়ুন আহমেদ, জনতা ব্যাংকের জিএম মোঃ আসাদুজ্জামান, কাস্টম্স ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ, সিলেট বিভাগের বিভিন্ন চেম্বারের প্রতিনিধিবৃন্দ, ব্যাংকার, সিলেট চেম্বারের সদস্যবৃন্দ, করদাতাবৃন্দ ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি