দোয়ারাবাজার থেকে সংবাদদাতা :
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারসহ সারা বাংলাদেশে দ্বিতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পরপরই নৌকা প্রতীকের সম্ভাব্য প্রার্থীরা তদবিরে মরিয়া হয়ে ওঠেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের আচরণে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, নৌকা প্রতীক পেলেই বিজয় সুনিশ্চিত। এর জন্য যত চেষ্টা লবিং তদবির চালিয়ে যান প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড সূত্রে, প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে তিনজন সম্ভাব্য প্রার্থী নাম প্রস্তাব করবে জেলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটিকে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মনোনয়ন বোর্ডের চুলচেরা বিশ্লেষণসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে যে সব প্রার্থী সব দিক দিয়ে এগিয়ে থাকবেন তাদেরকে দেয়া হবে নৌকা প্রতীক। কোনো লবিং-তদবির বা টাকার বিনিময়ে নৌকা প্রতীক পাওয়া যায় না জানা সত্ত্বেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা নৌকা প্রতীকের সর্বশেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়,উপজেলার ভিন্ন ইউনিয়নে রাজাকার পুত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা নৌকার কান্ডারী হওয়ার জন্য সরকারি দলের এম.পিদের দিয়ে তদবির করছেন। একজন প্রার্থী তিন প্রকারের তদবির করে থাকেন। প্রথম, তালিকায় নাম তোলা। এর জন্য ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে তদবির করা। কারণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নাম প্রস্তাব করলে উপজেলা আওয়ামী লীগ তা গ্রহণ করে।
দ্বিতীয় তদবির, উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ যৌথ আলোচনায় যে তিনজনের নাম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রস্তাব করবে এর মধ্যে তালিকায় এক নম্বরে থাকার জন্য তদবির চালিয়ে যান। সর্বশেষ তৃতীয় তদবির নৌকা প্রতীক পাওয়ার জন্য। সম্ভাব্য প্রার্থীদের ধারণা, প্রস্তাবিত তিনজনের তালিকায় এক নম্বরে থাকতে পারলে নৌকা প্রতীক পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এর জন্য উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ, স্থানীয় সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে দেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। যতক্ষণ প্রতীক পাওয়ার নাম ঘোষণা হয়নি ততক্ষণ তদবির চালিয়ে যান।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায় , নৌকা প্রতীক দেয়ার ক্ষেত্রে যে সব বিষয়গু বিবেচনা করা হয় একটি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ফের প্রার্থী হলে নৌকা প্রতীক পাওয়ার ক্ষেত্রে দৌড়ঝাঁপে এগিয়ে থাকেন। যদি তার বিরুদ্ধে বিশেষ কোনো ফৌজদারি মামলা-অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত না হন এবং সর্বশেষ অতিরিক্ত বয়োজ্যেষ্ঠ না হলে তিনি নৌকা প্রতীক পেতে আর কোনো বাধা থাকে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একজন জনপ্রতিনিধির অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য পুনরায় পুরোনোকে প্রাধান্য দেয়া হয়। আর যেসব ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান অন্য দলের বা স্বতন্ত্র প্রার্থী বা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন তাদের ক্ষেত্রে একটু কৌশলী হয় মনোনয়ন বোর্ড। যেসব সম্ভাব্য প্রার্থী তৃণমূলের নেতাকর্মীর সাথে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে এবং দলের দুর্দিনে যাদের ভূমিকা ছিলো, পাশাপাশি বর্তমান সময়ে ক্লিন ইমেজ। তাদের এসব বিষয় গোয়েন্দা সংস্থা পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে প্রতিবেদন পেশ করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো লবিং-তদবির নৌকা প্রতীক পাওয়ার ক্ষেত্রে কাজে আসবে না। যার আমলনামা উত্তম তিনি পাবেন নৌকা প্রতীক। সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা বর্তমানে ঢাকা মধ্যে দৌড়ঝাঁপে আছেন। তদবিরের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, সিনিয়র নেতা ও স্থানীয় সাংসদের কাছে দোয়া চাওয়ার জন্য যাচ্ছেন।
দোয়ায় কি আশস্ত হচ্ছেন প্রতীক পেতে এমন প্রশ্নের জবাবে অনেকে হেসে বলেন, সব প্রার্থীকে তো দোয়া করে দিচ্ছেন। এখন আসল দোয়া কার ওপর পড়েছে তা জানতে পারবো ঘোষণা পর। প্রতীক না পেলে বিদ্রোহী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে অনেকে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করার অহরহ নজির রয়েছে। ভোটাররা চাইলে না করা সম্ভব নয়। এতে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা।
দোয়ারাবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ফরিদ আহমদ তারেক জানান, রাজাকার পরিবার কেউ আমার কাছে সিভি জমা দেয় নাই। তিনি আরো বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে বর্ধিতসভার মাধ্যমে তালিকা তৈরি করা হয়। সুতরাং তালিকাটা ইউনিয়ন থেকে যাচাই-বাছাই করে উপজেলা আওয়ামী লীগে পাঠায়। উপজেলা আওয়ামী লীগ জেলা আওয়ামী লীগে পাঠায়। আমরা সকল কিছু যাচাই-বাছাই করে।
উল্লেখ্য, আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ধাপে দেশের ৮৪৮টি ইউপিতে ভোট হবে। এর মধ্যে দোয়ারাবাজারে ৯টিতে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ১৭ অক্টোবর, মনোনয়নপত্র বাছাই ২০ অক্টোবর, বাছাইয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ২১ থেকে ২৩ অক্টোবর, আপিল নিষ্পত্তি ২৪ ও ২৫ অক্টোবর, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ২৬ অক্টোবর, প্রতীক বরাদ্দ ২৭ অক্টোবর এবং ভোট গ্রহণ ১১ নভেম্বর।