কাজিরবাজার ডেস্ক :
উচ্চ আদালতসহ সারা দেশের আদালতে মামলা জট নিরসনে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এতদসত্ত্বেও বিচারক সঙ্কট, সাক্ষীদের গরহাজির এবং কিছু আইনজীবীর ভূমিকার কারণে দেশের উচ্চ ও নিম্ন আদালতে প্রায় ৩৬ লাখ মামলা বিচারাধীন। মামলা বাড়লেও তুলনামূলকভাবে নিষ্পত্তির হার আগের চেয়ে বেড়েছে। নিষ্পত্তির হার আরও বাড়লে পাহাড়সম মামলার জট অনেকাংশেই কমে যাবে। মামলা জট যাতে না বাড়ে সে জন্য সকল বিচারপতিকে যথাযথ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দায়রা জজ আদালতে ১০ বছরের বেশি বিচারাধীন ফৌজদারি মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশও দেয়া হয়েছে। এদিকে আইনজীবীদের অভিমত, মামলা জট কমাতে হলে অবশ্যই বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) ওপর জোর দিতে হবে। এতে অনেকে শুরুতেই মামলা করা থেকে রেহাই পাবেন। ফলে বাদী-বিবাদী উভয়ই উপকৃত হবেন।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ বলেছেন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি খুবই প্রয়োজন। এতে তাড়াতাড়ি মামলা নিষ্পত্তি হবে। সমাজে শান্তি ফিরে আসবে। মামলা ফাইল হলেও এটা মীমাংসা করা যায় পক্ষদ্বয়ের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে। ক্রিমিনাল মামলাও এডিআরের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যায়। এই ব্যবস্থা না হলে বিচার ব্যবস্থায় ধস নামবে। জনগণ দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিচার পাচ্ছে না। এডিআরের ফলে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে মামলা করার প্রবণতা দূর হবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে দেওয়ানি কার্যবিধি যা রয়েছে তা ১৯০৮ সালের। মামলা নিষ্পত্তিতে বিভিন্নস্তরে কোন সময়ের উল্লেখ নেই। আর এ কারণে লাখ লাখ মামলা বছরের পর বছর ঝুলে রয়েছে।
অবসর গ্রহণ ও কয়েক বিচারপতির মৃত্যুতে বর্তমানে হাইকোর্টে ৯৯ বিচারপতি আছেন। আপীল বিভাগে বিচারপতি ৭জন। অন্যদিকে নিম্ন আদালতে বিচারকের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। যা মামলার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, হাইকোর্টে একজন বিচারপতির হাতে গড়ে ১৪০০ এবং নিম্ন আদালতে গড়ে ৩১০০টি মামলা থাকে। কোনভাবেই একজন বিচারপতির পক্ষে এত মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভবপর নয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার জট আদিকাল থেকেই চলে আসছে। যে হারে মামলা হয় সে হারে নিষ্পত্তি হয় কম। বিচার পাওয়ার জন্য জনগণ মামলা করে থাকে। কোন কোন মামলা ৮০ বা ৯০ সালের, আবার কিছু মামলা আছে ১৯৭০ সালের। নিম্ন আদালতে এখনও একটি এজলাসে একাধিক বিচারক বসে বিচারকাজ পরিচালনা করছেন। একই সঙ্গে রয়েছে বিচারক সঙ্কট, জায়গার অভাব,সাক্ষীদের নানা ধরনের বিড়ম্বনা; বিশেষ করে পুলিশ, ডাক্তার যারা সাক্ষী হন তারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বদলি হবার কারণেও মামলা শুনানিতে বিঘ্ন ঘটে। পাশাপাশি হত্যা মামলার বড় বিষয় হলো ময়নাতদন্ত। এর রিপোর্ট ছাড়া মামলা হয় না। এটা দিতেও অনেক সময় দেরি হয়।
মামলা জট প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আগের তুলনায় মামলা জট কমতে শুরু করেছে। আমাদের নজর দিতে হবে নতুন যে মামলা হচ্ছে তার চেয়ে যাতে বেশি করে নিষ্পত্তি হয়। সেদিকেই বেশি নজর দিতে হবে। কিছু কিছু মামলা অনেকদিন পড়েছিল। ট্র্যাফিক ভায়োলেন্স মামলাগুলো সিএমএম কোর্টে দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে। আমরা কিন্ত এগিয়ে যাচ্ছি। অন্যদিকে আইনমন্ত্রী জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন. দেশের আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৫ লাখ ৮২ হাজার ৩৪৭টি। এর মধ্যে নিম্ন আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩০ লাখ ৫৩ হাজার ৮৭০, যার মধ্যে দেওয়ানি ১৩ লাখ ২৮ হাজার ৬০০ ও ফৌজদারি ১৭ লাখ ২৫ হাজার ২৭০টি। বর্তমানে আপীল বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ২১ হাজার ৮১৩। এর মধ্যে দেওয়ানি মামলা ১৪ হাজার ২৩, ফৌজদারি ৭ হাজার ৬৫৫ ও অন্যান্য (কনটেম্পট পিটিশন) মামলা ১৩৫। এছাড়া হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৫ লাখ ৬ হাজার ৬৬৪। এর মধ্যে দেওয়ানি ৯৬ হাজার ১১৪, ফৌজদারি ৩ লাখ ১৭ হাজার ৪৪৩ ও অন্যান্য ৯৩ হাজার ১০৭টি। এ সময় মন্ত্রী আরও জানান, বর্তমান সরকার বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি লাঘবের জন্য একটি আধুনিক বিচার বিভাগ ও বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।