কাজিরবাজার ডেস্ক :
ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোর উন্নয়নে নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। আর গৃহীত প্রকল্পের অধীনে সারাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ১ হাজার ৮১২ মন্দির বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন ও সংস্কার করা হবে। সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই ২২৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতেই এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মন্দির সংস্কার প্রকল্প ব্যয়ের পুরোটাই হবে সরকারী অর্থায়নে।
মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ’১৭ সালে অনুমোদন পাওয়া প্রতিটি জেলা-উপজেলায় একটি করে ৫৬০ মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের কাজও চলমান রয়েছে। এ বছর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য এমন উদ্যোগ নেয়ার ফলে এটা স্পষ্ট সরকার সবার উন্নয়নে কাজ করছে। সবাইকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চায় সরকার। এসব উন্নয়ন প্রকল্প উদাহরণ হিসেবে দেখান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, এই প্রকল্পের আওতায় হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি ২৩ লাখ সনাতন ধর্মাবলম্বী উপকৃত হবে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘সমগ্র দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সংস্কার’ নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট। সেবাধর্মী প্রকল্প উল্লেখ করে এর আয়-ব্যয় বিশ্লেষণ করা হয়নি। তবে প্রকল্পটি ’১৯ সালের মার্চ থেকে ’২২ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পের যৌক্তিকতায় বলা হয়েছে, পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত ’১১ সালের আদমশুমারি তথ্যের আলোকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ১ কোটি ২৩ লাখ। দেশের হিন্দু জনসাধারণের ধর্মীয়কল্যাণ সাধন ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা রক্ষার্থে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট মঠ/মন্দির/ আশ্রম/তীর্থস্থান/শ্মশানের সংস্কার/উন্নয়নের জন্য আজ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে অনেক মন্দির ধ্বংস করে। অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি হিন্দু জনগোষ্ঠীর একটি বড় সমস্যা হচ্ছে হিন্দু সংস্কৃতি ও মন্দিরগুলো রক্ষণাবেক্ষণ। ’৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসাম্প্রসায়িক দেশ গড়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে হিন্দু জনগোষ্ঠী উপকৃত হবে এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার পূরণে সহায়ক হবে বলেও মনে করা হচ্ছে। প্রকল্পের টাকা তিন অর্থ বছরে দেয়া হবে। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছর ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ৭০ হাজার, ২০১৯-২০ অর্থবছর ৯১ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার এবং ২০২০-২১ অর্থবছর ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ৭০ হাজার টাকা দেয়া হবে। প্রকল্পের আওতায় দুটি পিকআপ, দুটি জিপ, কম্পিউটার, অফিস সরঞ্জাম ও আসবাবপত্র কেনা হবে।
সারাদেশের কোন কোন এলাকা প্রকল্পের আওতায় আসছে সে বিষয়ে জানা গেছে, ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলা ছাড়া বিভাগের সকল উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকা, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর ময়মনসিংহ বিভাগের সকল উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকা। তবে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার তিনটি উপজেলা লাখাই, মাধবপুর ও বানিয়াচং ছাড়া সিলেটের অন্যান্য উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম জেলার ১৩ উপজেলা ছাড়া বিভাগের সব জেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উন্নয়ন মানেই সবার জন্য। সেখানে ধর্ম বর্ণ বা লিঙ্গ নেই। আর প্রকল্পটির মাধ্যমে সারাদেশের যে পুরানো মন্দির আছে সেগুলো সংস্কার করা হবে। যে ব্যয় ধরা হয়েছে তাতে হয়তো সব মন্দির সংস্কার করা সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে কিছু কিছু পুরানো মন্দির সংস্কার করা সম্ভব হবে।
প্রকল্পের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সব ধর্মের মানুষকে আমরা সমান গুরুত্ব দিই। আমরা সবাইকে নিয়েই এগোতে চাই। উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়তে চাই। এ আলোকে সারাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং সংস্কার প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। দেশে যেসব প্রাচীন মন্দির নানা কারণে প্রায় ধ্বংসের মুখে বা সংস্কার সম্ভব, সেগুলোকে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করব। পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীসহ সবাই আমরা এটাকে স্ট্রং সাপোর্ট দিয়েছি। এটা করার প্রয়োজন আছে। আমাদের যে রাজনৈতিক দর্শন- সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে চলতে চাই। কেউ পিছিয়ে থাকবে না। আমরা এ কাজটি করতে চাই।