কাজিরবাজার ডেস্ক :
চিরবিদায় নিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক মোঃ শাহ আলমগীর। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। রেখে গেছেন স্ত্রী ফৌজিয়া বেগম এবং এক ছেলে আশিকুল আলম ও এক মেয়ে অনন্যা অর্চিসহ অসংখ্য ভক্ত, অনুরাগী, সহকর্মী ও সুহৃদকে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, হঠাৎ করেই শাহ আলমগীরের রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গিয়েছিল। এছাড়া ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে অসুস্থ হয়ে সিএমএইচে ভর্তি হন পিআইবির মহাপরিচালক। পরদিন তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তার চিকিৎসার জন্য ছয় সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ডও গঠন করা হয়েছিল।
মোঃ শাহ আলমগীরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংস্কৃতিমন্ত্রী কে এম খালিদসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। শোকবাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, শাহ আলমগীরের মৃত্যু বাংলাদেশের গণমাধ্যম জগতের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তার নীতি ও আদর্শ সাংবাদিকদের জন্য অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকতার পাশাপাশি সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামেও সব সময় সোচ্চার ছিলেন শাহ আলমগীর।
বৃষ্টিভেজা দিনে শাহ আলমগীরের মৃত্যুতে ঝরেছে অনেক সাংবাদিক ও শুভাকাক্সক্ষীর চোখের জল। তার তৃতীয় দফা জানাযার জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবে নিয়ে আসা হলে অনেকেই শোককে সামাল দিতে না পেরে ডুকরে কেঁদে উঠেছেন। প্রেসক্লাবে তার জানাজা ও শ্রদ্ধা নিবেদনে সাংবাদিকদের পাশাপাশি শামিল হয়েছিলেন মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, কণ্ঠশিল্পী, অভিনয়শিল্পীসহ সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষেরাও। প্রেসক্লাবে নিয়ে আসার আগে বেলা দেড়টার দিকে প্রথমে রাজধানীর গোড়ানে পৈত্রিক বাসভবনে নেয়া হয় তার মরদেহ। গোড়ানের মক্কা মসজিদে প্রথম জানাজা হয়। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তার কর্মক্ষেত্র পিআইবিতে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসক্লাবে জানাজা শেষে বিকেলে উত্তরা ১১ নম্বরের সেক্টরের নিজ বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বায়তুল নূর মসজিদে তার চতুর্থ জানাজা হয়। এরপর উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
বেলা ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে তৃতীয় দফা জানাজা শেষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় ছেলে আশিকুল দ্বীপসহ পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। এখানে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন, দৈনিক পত্রিকা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বহ ব্যকিগতভাবে অনেকেই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান সভাপতি সাইফুল আলম ও ফরিদা ইয়াসমীনসহ অন্য নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) পক্ষে শ্রদ্ধা জানান সভাপতি মোল্লা জালালসহ অন্য নেতৃবৃন্দ। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) পক্ষে শ্রদ্ধা জানান সভাপতি আবু জাফর সূর্য ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরীসহ অনেকে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির পক্ষে শ্রদ্ধা জানান সভাপতি ইলিয়াস হোসেন ও কবির আহমেদ খান। এছাড়া সাংগঠনিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা জানায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, নারী সাংবাদিক কেন্দ্র, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস), বাংলা ট্রিবিউন, পিআইবি, চ্যানেল আই, দৈনিক প্রথম আলোসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও বেসরকারী টেলিভিশন। ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা জানান তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান খান, ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, তথ্যসচিব আবদুল মালেক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর, অভিনয়শিল্পী পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, রোকেয়া প্রাচী প্রমুখ। শ্রদ্ধাঞ্জলি পর্ব সঞ্চালনা করেন প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহেদ চৌধুরী।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, একজন নিষ্ঠাবান, সৎ ও আদর্শিক সাংবাদিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিলেন শাহ আলমগীর। সহকর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন একজন প্রাণপ্রিয় মানুষ। তার হাত ধরে তৈরি হয়েছে অসংখ্য সাংবাদিক। পিআইবিকে কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করায় রেখেছেন অসামান্য অবদান। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতার মানোন্নয়ন, ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন, বেতন-ভাতা নিশ্চিতকরণসহ সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের প্রতিটি আন্দোলনে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। সব মিলিয়ে সততা, নৈতিকতার সম্মিলনে নিজেকে সাংবাদিককতার বাতিঘরে পরিণত করেছেন। তার আদর্শিক জীবনকে অনুসরণের মাধ্যমেই তার প্রতি প্রকৃত সম্মান জানাতে হবে।
ফকির আলমগীর বলেন, সদাহাস্য ও অমায়িক এক মানুষ ছিলেন শাহ আলমগীর। পরিচয়ে গুণী সাংবাদিক হলেও তার প্রতি সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষের প্রিয়জন ছিলেন। তাই তিনি যখন অসুস্থ তখন শিল্পীদের অনেকেই তার আরোগ্য কামনা করেছেন। অনেকেই মৃত্যুর পর প্রশংসা পান। কিন্তু তিনি মৃত্যুর আগেই মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন। পরিণত হয়েছে প্রিয়জনে।