স্টাফ রিপোর্টার :
পূবালী ব্যাংকের ২২ লাখ টাকা ডাকাতির চাঞ্চল্যকর মামলায় সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব ও দক্ষিণ সুরমার তেতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উসমান আলী এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা আশিক আহমদসহ ১৬ জনকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ বছর করে বিনা সশ্রমে কারাদন্ডের আদেশ দেয়া হয়।
গতকাল সোমবার দুপুর ২ টার দিকে সিলেটের মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো: মফিজুর রহমান ভূঞা আলোচিত এ রায় ঘোষনা করেন।
দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হচ্ছে- দক্ষিণ সুরমা থানার বানেশ্বরপুর গ্রামের মৃত হাজী আজম আলীর পুত্র তেতলী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও গত জাতীয় নির্বাচনে সিলেট-৩ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য প্রার্থী উসমান আলী, তার সহোদর ভাই আনহার ও আঙ্গুর আলী, নগরীর দক্ষিণ সুরমা মোমিনখলা গ্রামের মৃত তমজিদ আলী পুত্র সিসিকের সাবেক ২৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আশিক আহমদ, শহরতলীর সোনাতলা গ্রামের হোসেন মিয়ার পুত্র সহিদুল ইসলাম উরফে শহিদ, নগরীর ফাজিলচিশতের ইউনুছ মিয়ার পুত্র জাবেদ, নগরীর সওদাগরটুলার কুটি মিয়ার পুত্র রুবেল আহমদ, নগরীর সুবিদবাজার বলকলাপাড়ার ছায়েদ আলীর পুত্র কামাল হোসেন, নগরীর সুবিদবাজারের নূরানী ১১/১৫ নং বাসার নরমদা সিংহের পুত্র যুবলীগ নেতা কলিন্স সিংহ, নগরীর দক্ষিণ সুরমা কদমতলী এলাকার ছালেক মিয়ার পুত্র আব্দুল মোমিন, নগরীর ইঙ্গুলার রোড কুয়ারপারের ২৫ নং বাসার নুর আলীর পুত্র রহিম আলী, দক্ষিণ সুরমা থানার বানেশ্বরপুর গ্রামের হারেছ আলীর পুত্র শফিক মিয়া, হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানার কালিকাপুর গ্রামের মৃত মতিউর রহমানের পুত্র সৈয়দ ফয়জুর রহমান শিপন, ওসমানীনগর থানার দয়ামীর খলিলপুর গ্রামের আজিজুর রহমানের পুত্র আব্দুল হক উরফে লিটন, নগরীর মোমিনখলা গ্রামের ছিদ্দেক মিয়ার পুত্র শাহান, ও একই এলাকার মৃত আব্দুর রবের পুত্র লিটন।
এদের মধ্যে বর্তমানে জাবেদ, রহিম আলী, শফিক মিয়া, আবদুল হক লিটন ও লিটন পলাতক রয়েছেন। এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশিটভুক্ত অপর আসামী আনোয়ার হোসেনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ৭ ফেব্র“য়ারী বিকেলে সিলেটের বিভিন্ন শাখা থেকে টাকা নিয়ে নগরীর লালদীঘিরপার প্রধান শাখায় (ঢাকা মেট্রো-চ-৫৪-০০২৬) নং মাইক্রোবাস যোগে আসছিলেন পূবালী ব্যাংকের জুনিয়ার অফিসার (ক্যাশ) জি এম আতাহার হোসেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন গার্ড মোজাম্মেল আলী, আমানত উল্লাহ ও মাইক্রোবাস চালক মজনু মিয়া। বিকেল পৌনে ৬ টার দিকে হুমায়ূন রশীদ চত্ত্বরে আসার পর ১৫ থেকে ২০ জন লোক মাইক্রোবাসের গতিরোধ করে হামলা চালিয়ে গাড়িতে থাকা ৮৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকার মধ্যে ২২ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় ডাকাত দলের সদস্যরা ১৪ রাউন্ড গুলিভর্তি একটি স্ট্যান্ডগানও ছিনিয়ে নিয়ে গাড়ীর আরোহীদের মারধর ও জখম করে। এ ঘটনায় ব্যাংকের জুনিয়ার অফিসার (ক্যাশ) জি এম আতাহার হোসেন বাদি হয়ে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৬ জনকে আসামী করে কোতোয়ালী থানায় একটি ডাকাতী মামলা দায়ের করেন। যার নং- ২ (০৮-০২-২০০৪)।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০০৫ সালের ১৭ অক্টোবর সিলেট সদর (উত্তর) সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো: গিয়াস উদ্দিন আহমদ উক্ত আসামীদের অভিযুক্ত করে আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন এবং ২০০৮ সালের ২৮ মে থেকে আদালত এ মামলার বিচারকায্য শুরু করেন। দীর্ঘ শুনানী ও ২৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৩ জনেরই সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত উক্ত ১৬ আসামীদের বিরুদ্ধে ৩৯৫ ও ৩৯৭ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের প্রত্যেককে উল্লেখিত দন্ডাদেশ ও আসামী আনোয়ার আলীকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে পিপি এডভোকেট মো: মফুর আলী ও আসামীপক্ষে এডভোকেট সৈয়দ রাব্বী হোসেন তারেক, এড. বিশ্বজিৎ সরকার, এড. মো: রায়হান উদ্দিন, এড. অশেষ কর, এড. মো: মিজানুল হক (মিজান), এড. মঈন উদ্দিন, এড. মো: হাসান ও এড. মো: শফিকুল ইসলাম প্রমুখ মামলাটি পরিচালনা করেন।