ইজতেমায় বৃষ্টিতে মুসল্লিদের ভোগান্তি ॥ সাদ অনুসারীদের আখেরি মোনাজাত কাল

39

কাজিরবাজার ডেস্ক :
টঙ্গীর তুরাগতীরে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমার মেয়াদ এক দিন বাড়ানো হয়েছে। সোমবারের পরিবর্তে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব তাবলিগ জামায়াতের অন্যতম নেতা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের ইজতেমা।
রবিবার শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বের দুই দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা। কিন্তু এদিন ভোরে বৃষ্টির কারণে ইজতেমা মাঠ প্রস্তুতিতে বিঘœ হওয়ায় মেয়াদ বাড়ায় জেলা প্রশাসন।
এর আগে শনিবার সকালে অনুষ্ঠিত হয় মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীদের দুই দিনের প্রথম পর্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত।
সাদ কান্ধলভীর কিছু বক্তব্য নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে বাংলাদেশের তাবলিগ জামাত বিভক্ত হয়ে পড়ায় এবারের বিশ্ব ইজতেমা অনিশ্চিত ছিল। পরে দুই পক্ষের সমঝোতায় আলাদাভাবে ইজতেমা আয়োজিত হয়।
দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় রবিবার সকাল থেকে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইকবাল হাফিজ। বাংলায় তর্জমা করেন কাকরাইল মসজিদের মাওলানা আব্দুল্লাহ মনসুর। জোহরের নামাজের পর ভারতের মাওলানা আব্দুল বারী আমবয়ান পেশ করেন।
বয়ান শুরুর পরপরই শুরু হয় বজ্রসহ বৃষ্টিপাত। হিমশীতল বাতাস আর বৃষ্টি উপেক্ষা করে ইজতেমায় আসেন সাদপন্থী হাজার হাজার মুসল্লি। বৈরী আবহাওয়ার কারণে আখেরি মোনাজাতের দিন-তারিখ নিয়ে ইজতেমার মুরব্বি ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়।
ইজতেমার মুরব্বি আশরাফ আলী জানান, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওয়াসেকুল ইসলামের অনুসারি তাবলীগ জামাতের মুসল্লিরা ভোর থেকে তাদের মাল সামান নিয়ে ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করেন। তারা ময়দানের ৮৪টি খিত্তায় বিভক্ত হয়ে মাঠে অবস্থান নেন।
শনিবার প্রথম পর্বে জুবায়েরপন্থীদের আখেরি মোনাজাতের পর ইজতেমা ময়দানে উচ্ছিষ্ট খাবার আর ময়লা আবর্জনা ফেলে রেখেই তারা মাঠ ত্যাগ করেন। স্থানীয় প্রশাসন রাতে মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আবর্জনা সরানো শুরু করলেও স্বল্প সময়ের মধ্যে পুরো মাঠ পরিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। ওই পরিবেশের মধ্যেই ভোরে সাদপন্থী মুসল্লিরা মাঠে প্রবেশ করেন। পরে নিজস্ব উদ্যোগে ইজতেমা ময়দান গুছানো হয়।
কিন্তু সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে দুর্ভোগে পড়েন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল সাতটার দিকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন দেশ-বিদেশের সাদ অনুসারী মুসল্লিরা। বাস, ট্রাক, ট্রেনসহ বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে আসেন তারা। ইজতেমা ময়দানে ৮৪টি খিত্তায় বিভক্ত হয়ে মুসল্লিরা ময়দানে অবস্থান নেন।
সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টির মধ্যে কেউ পলিথিন মুড়িয়ে বসে আছেন, রান্নার আয়োজনও রয়েছে তাদের। এরই মধ্যে মাঠের অনেক স্থানে পানি জমে গেছে, রয়েছে শীতের দুর্ভোগও। বাজার থেকে অনেকে পলিথিন কিনে মালামাল ও নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।
অনেকে আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত ইজতেমা মাঠে ভারি বর্ষণ হলে থাকতে পারবেন কি না তা নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হলেও পরকালের শান্তির আশায় ইজতেমার শীর্ষ মুরব্বিদের সিদ্ধান্ত মেনে শেষ সময় পর্যন্ত ময়দানে থাকতে চান এসব মুসল্লি।
স্বল্প সময়ের প্রস্তুতিতে মাঠের অনেক স্থানে বালি ফেলা সম্ভব হয়নি, ফলে ময়দানের চারপাশ বৃষ্টির পানিতে কর্দমাক্ত হয়ে গেছে। এবার বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য ত্রিপাল বা পলিথিনও টাঙানো সম্ভব হয়নি।
সাদপন্থী অংশের একজন মুরব্বী বলেন, সকালে ময়দানের কাজ গুছাতে গিয়ে বেশ কিছু সমস্যা দেখা গেছে। কিছু মাইক, কোথাও পানির লাইন ও গ্যাস লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন পাওয়া গেছে। পরে বিষয়টি সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
এদিকে, বৃষ্টির পর মাঠের নানা সমস্যার সমাধানে ময়দানে ছুটে যান গাজীপুর সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি গত দুই দিনের লাখো মুসল্লির ফেলা যাওয়া আবর্জনা পরিষ্কারসহ পানি, গ্যাস ও পয়োনিষ্কাশন সমস্যার সমাধানে সিটির লোকজনকে নির্দেশ দেন।
ইজতেমার দিন বাড়ানো ও আখেরি মোনাজাত : সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৮ ফেব্রুয়ারি ইজতেমার আখেরি মোনাজাত হওয়ার কথা থাকলেও ১৯ তারিখ পর্যন্ত সময় চান সাদপন্থী ইজতেমার মুরব্বিরা। ইজতেমার মুরব্বি আশরাফ আলী বলেন, মাশোয়ারার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইজতেমার আখেরি মোনাজাত ১৯ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিন জোহরের নামাজের আগে আখেরি মোনাজাত হবে।
এ-সংক্রান্ত একটি আবেদন প্রথমে নাকচ করে দেন গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। পরে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলাপের পর জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাদপন্থী স্থানীয় মুরব্বিরা সরকারের কাছে এক দিন বেশি সময় চেয়ে আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এক দিন বাড়ানো হয়েছে। ১৯ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) সকাল ১০টায় আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
সাদপন্থীদের দ্বিতীয় পর্বের এই ইজতেমায় আগের মতোই নিরাপত্তাবলয় থাকছে। ময়দানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার সদস্যরা কয়েকটি স্তরে দায়িত্ব পালন করছেন।
ইজতেমা মাঠের পরিস্থিতি নজরে রাখতে পুলিশ ও র‌্যাবের আলাদা নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান বলেন, প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত শেষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল দ্বিতীয় পক্ষের কাছে মাঠ হস্তান্তর। সেটি গতকাল রাতে সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়েছে। মাশোয়ারার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রবিবার জোহরের নামাজের পর থেকে বয়ান শুরু করেছে। আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগে যা ছিল তা বহাল রয়েছে।
এবার চার দিনব্যাপী ইজতেমার প্রথম দুই দিন জোবায়ের অনুসারীরা ইজতেমায় অংশ নেন। শনিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় তাদের ইজতেমা। প্রশাসনের নির্দেশনায় শনিবার রাত নয়টার মধ্যে জোবায়ের অনুসারীরা মাঠ ত্যাগ করেন। এরপর মাঠের নিয়ন্ত্রণ নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
অন্যদিকে সাদ অনুসারীদের রবিবার সকাল সাতটায় মাঠে প্রবেশের কথা থাকলেও ভোর থেকেই তারা মাঠে প্রবেশ করতে থাকেন।