জেড এম শামসুল
সিলেট বিভাগের প্রতিটি জেলার উপজেলা সমূহে হাওর-বাওর ও পাহাড় জঙ্গলে ভরপুর হলে ও সুষ্ঠু পরিকল্পিত পরিকল্পনার অভাবে এ অঞ্চলের বৃহত্তম হাওরগুলোসহ পাহাড়-পর্বতের অনাবাদি পড়ে থাকা জমি থেকে উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দেশের বৃহত্তর যুব সমাজ কর্মহীন অবস্থায় বেকারত্বে ভোগতে হচ্ছে। দেশে কর্মের নিশ্চয়তা না থাকায় জীবন বাজী রেখে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। জীবিকা নির্বাহের লক্ষ্যে বিদেশে পাড়ি দিতে গিয়ে কত যুবকের প্রাণহানী ঘটেছে। বেকারত্বের হাত থেকে রক্ষা পেতে দেশের যুব সমাজকে জনশক্তি হিসাবে রূপান্তরিত করার বিকল্প নেই।
বর্তমান সরকার উন্নয়নমুখী সরকার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সিলেট অঞ্চলের হাওরসহ পাহাড়ের অনাবাদি জমিতে চাষাবাদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাকরণে উদ্যোগী হওয়া সময়ের দাবি। সিলেট বিভাগের ৪টি জেলায় ৩৫টি উপজেলার প্রতিটিতে রয়েছে যেমন হাওর অঞ্চলের জলাভূমি। এ ছাড়াও অধিকাংশ সীমান্তিক উপজেলায় রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য টিলা, পাহাড় আকৃতির অনাবাদি ভূমি। এসব ভূমি বছরের পর বছর অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকে। এ সব অনাবাদি জমিতে চাষের উদ্যোগ নেয়া হয় না। ফলে এসব অনাবাদি জমি সমূহ চাষ যোগ্য করে তুলতে পারলে বেকারত্বের বোঝা কমতে পারে।
সিলেট জেলার সদর, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, বিশ্বনাথ, দক্ষিণ সুরমা, মৌলবীবাজারের সদর, বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, হবিগঞ্জ জেলা সদর, নবীগঞ্জ, আজমিরীগঞ্জ, শায়েস্তাগঞ্জ, চুনারুঘাট। সুনামগঞ্জ জেলা সদর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, জগন্নাথপুর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, ধর্মপাশা, দিরাই, শাল্লা, মধ্যনগর, জামালগঞ্জ। তবে সিলেট বিভাগের মৎস্য খামার হিসাবে খ্যাত সুনামগঞ্জ জলাভূমিসহ হাওর-বাহরে পরিবেষ্টিত। এ হাওরের হাজারো প্রজাতি মাছের সুনাম দেশে বিদেশে প্রসিদ্ধ।
সিলেট বিভাগের অসংখ্য হাওর সমূহে পরিকল্পিত ভাবে মৎস্য চাষ, ফলমূল ও সবজির বাগান গো-চারণ ভূমি হিসাবে ব্যবহার করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সিলেটের বিশাল আকৃতির হাওর গুলোর প্রতিটি হাওরকে তিনভাগে ভাগ করে, এক ভাগে পানি মৎস্য খামার, এক ভাগে সবজি বাগানও গো-চারণ ভূমি হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়াও সীমান্তিক উপজেলার পাহাড়ি ভূমিতে সকল প্রকার মসলা জাতীয় পণ্য উৎপাদন ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছ গাছড়াসহ পান-সুপারীর চাষ করা যেতে পারে। এছাড়া ও অতি জরুরী পণ্যের আমদানী হ্রাস পাবে। উৎপাদনে সফল হলে বিদেশে রফতানী করা সম্বব হবে। বিশ্বের উন্নত দেশ সমূহ কৃষিজাত পণ্যের বিকাশ সাধন করে খ্যাতি অর্জন করেছে। কৃষি পণ্যেরই সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের একটি অংশ হিসাবে কাজে আসবে। এ দেশে বেকার যুবকদের কাজের সংস্থান হবে। দেশের বিশাল অদক্ষ শ্রমিক কৃষি কাজে নিয়োগ দেয়া সম্বব হবে। এ ছাড়াও হাওর-বাওর উন্নয়নে যেমন দক্ষ শ্রমিক লাগবে। তেমনি পাহাড়ি জমির উন্নয়নে দক্ষ কৃষিবিদসহ হাজার হাজার দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হবে। এক সময় হয়ত শ্রমিকের অভাব হবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় রূপান্তরিত হবে। দেশের বিশাল যুব গোষ্ঠি শক্তিতে পরিণত হবে। তাই বর্তমান সরকার কৃষি ক্ষেত্রে মনোযোগ দিয়ে হাওর-বাওর সহ গাহাড়ী ভূমিতে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোগী হওয়া খুবই প্রয়োজন।
বিশিষ্টজনের মতে হাওরাঞ্চলের সাথে স্থানীয় পাহাড়ী অঞ্চলে পরিকল্পিত উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালালে লক্ষ লক্ষ যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের উর্বর ভূমি ঘাতকদের মাত্রাতিরিক্ত গোলাবর্ষণে নষ্ট হয়ে পড়ে। দেশে দেখা দেয় চরম অভাব অনটন। দেশের দুস্থ মানুষের জন্য খোলা হয় লঙ্গর খানা আমার বাড়ীতেও খোলা হয়। আমার গ্রামের নি:স্ব গরীব মানুষেরা লাইন ধরে ডাল-ভাতের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। স্বাধীনতার পর দেশের আপামর সকল স্তরের মানুষের জীবনযাপন ছিল দুর্বিষহ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের সচ্ছল মানুষজন গরীব সাধারণ নি:স্ব মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসেন। তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের কান্ডাড়ি ধরে আওয়ামী লীগ সরকার। সে সময় ছিল মুক্তিকামী মানুষের দুর্বিষহ জীবন যাপন। এ সময় আমার বাবা আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী হিসাবে কাজ করেন আওয়ামী লীগের পক্ষে আজীবন। কিন্তু আমি আমার বাবার রাজনৈতিক কর্মদক্ষতা এবং ৭১ এর স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের হয়রানী কথা স্বরন করে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে করিমগঞ্জের চিত্রবানী রোর্ডে আয়োজিত ন্যাপের জনসভায় তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী বাংলার অগ্নিকন্যা বেগম মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্যসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের শোষণহীন সমাজ গঠনের প্রত্যাশা জাগে। এ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানী বাহিনীসহ তাদের দোসর আল-বদর রাজাকারদের হাতে আর্থিক, মানসিক, শারীরিক নির্যাতন আমকে এমনকি আমার বাবাকে গ্রেফতার করে আর্থিক ভাবে ক্ষয়ক্ষতি করে। যার প্রেক্ষিতে যুদ্ধকালীন সময় থেকে ন্যাপের অঙ্গ সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সাথে জড়িয়ে পড়ি। ১৯৭২ সালের প্রথম দিকেই জকিগঞ্জে প্রথম স্থায়ী ভাবে শহীদ মিনার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়ে শহীদ মিনার স্থাপন করি। স্বাধীনতার পর প্রথম সাধারণ নির্বাচন হয় ১৯৭৩ সালে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ-মোজাফ্ফর) সহ অন্যান্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দল গুলো। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে। তবে (ন্যাপ-মোজাফ্ফর) কয়েটি আসন পায়। এ সময় আমি জকিগঞ্জ থানা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময়ে ন্যাপের প্রার্থী কুঁড়ে ঘর প্রতীকে নির্বাচন করেন স্থানীয় ন্যাপ নেতা আবুল বাইছ এবং আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন পাকিস্তান আমলের দীর্ঘ ২৩ বছরের এম,এল,এ. এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচিত এম,এল,এ আব্দুল লতিফ বিপুল ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ন্যাপ ও আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে গঠিত হয় থানা উন্নয়ন কমিটি। এ কমিটিতে ন্যাপ, আওয়ামী লীগের থানা পর্যায় নেতৃবৃন্দসহ ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা। স্বাধীনতার পরপরই দেশের অবস্থাও দুর্দিন মোকাবেলায় তৎকালীন সরকার দেশের অভাব দূরীকরণে কর্মজীবী জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বেকার যুবসমাজকে কাজে লাগাতে উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ লক্ষ্যে প্রতিটি থানা ও জেলায় বেকার যুব সমাজকে নিজ নিজ অনাবাদি জমিতে কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। প্রত্যেক বেকার যুবককে জনশক্তিতে গড়ে তোলতে সচেতনতা সৃষ্টিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিল তৎকালীন বাকশাল ছাত্র ফেডারেশন। সে বাকশাল ছাত্র ফেডারেশনের থানা সাধারণ সম্পাদক হিসাবে কাজ করে ছিলাম।
১৯৭৪-৭৫ সালে দেেেশ সর্বস্তরের মানুষের কর্মতৎপরতায় ক্ষেতের মাট সোনালী ফসলে ভরপুর হয়ে উঠেছিল। কৃষকের মুখে হাসি ফুটে ছিল। কিন্তু ¯¦াধীনতা বিরোধী চক্র সহজ ভাবে মেনে নেয়নি তারা সুবিধা চক্রের সাথে আঁতাত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে দেয়ার পাঁয়তারায় লিপ্ত হয়ে স্বাধীনতাকামী মানুষের উপর ষ্টিম রোলার চালায়। রাজনীতি নিষেধাজ্ঞা করে। স্বাধীনতা অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কর্মকান্ড শুরু করে। স্বাধীনতায় পরাজিত শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে একটি সম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। পর্যায়ক্রমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিশ্বাসী অসস্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল গুলো এক জোট হয়ে সম্প্রদায়িক পরাজিত করে। বর্তমান সরকারের প্রধান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা সফল রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনা দেশেবাসীর প্রত্যাশা দেশে বিশাল যুবশক্তিকে কাজে হাওর ও পাহাড়ী এলাকার উন্নয়ন অতীব জরুরী।