দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুলস্থ নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বিল, ৫ ঘণ্টা লাশ আটকে রেখে টাকা আদায় এবং করোনা রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ হওয়ার পরও রোগীকে কোভিড-১৯ ইউনিটে রেখে চিকিৎসা প্রদানের জন্য হাসপাতালটির বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সিলেট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি বরাবারে এ অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন দক্ষিণ সুরমার উপজেলার সিলাম ইউনিয়নের উলালমহল গ্রামের মৃত নাসির উদ্দিনের ভাতিজা আব্দুল বারী। এছাড়াও সিলেট জেলা প্রশাসক ও সিলেট সিভিল সার্জন বরাবারেও অভিযোগপত্রটি দাখিল করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ, ‘সিলেট দক্ষিণ সুরমার উপজেলার সিলাম ইউনিয়নের উলালমহল গ্রামের নাসির উদ্দিন (৬০) গত ৩ সেপ্টেম্বর রাত ২টায় শ্বাসকষ্ট নিয়ে নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তির পর রোগীকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনা ইউনিটে নিয়ে যেতে চাইলে স্বজনরা ‘করোনা নেগেটিভ’ রিপোর্ট দেখান। তবু স্বজনদের কথা উপেক্ষা করে কর্তব্যরতরা রোগীকে সাধারণ ওয়ার্ডে না রেখে করোনা ইউনিটে নিয়ে যান।
রোগীকে করোনা ইউনিটে নিয়ে পজিটিভ রোগীর মতোই চিকিৎসা প্রদান করা হয়। একদিন পর রোগীর শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে গেলে তাকে করোনায় মুমূর্ষু রোগীর মতো রক্তের প্লাজমা দেয়ার কথা বলেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। তবে স্বজনরা সম্মত না হলে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ভোররাত ৪টার দিকে নাসির উদ্দিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। রোগীর মৃত্যুর পর স্বজনদের হাতে ৭৭ হাজার ৪ শ ৭২ টাকার বিল ধরিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিলে শুধু পিপিই এবং সুরক্ষাসামগ্রী বাবদ প্রতিদিন ধরা হয় ৪ হাজার ২ শ ৫০ টাকা।
বড় অংকের বিল এবং গভীর রাত হওয়ার কারণে স্বজনরা টাকা বকেয়া রেখে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশ দেননি। ওই সময় সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল জব্বার জলিল হাসপাতালে কর্তব্যরতদের ফোন করে মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে স্বজনর দাফন-কাফনের সুযোগ দেয়ার সুপারিশ করেন এবং নিজে উপস্থিত হয়ে বিল পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন।
কিন্তু আব্দুল জব্বার জলিলের সেই অনুরোধও রাখেননি হাসপাতালে কর্তব্যরতরা। পরে সকাল ৯টায় আব্দুল জব্বার জলিল হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে বিলের টাকা পরিশোধ করার পরই লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।’
অভিযোগপত্রে আব্দুল বারী বলেন, ‘নর্থ ইস্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে আমার চাচাকে করোনা রোগী সাজিয়ে চিকিৎসা প্রদানে বাধ্য করেছে। ফলে যেখানে দুই দিনে ১০-১৫ হাজার টাকা বিল আসার কথা, সেখানে আমাদের বিল পরিশোধ করতে হয়েছে ৭৪ হাজার টাকা। এছাড়াও টাকার জন্য লাশ আটকে রেখে অমানবিক কাজ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ’
হাসপাতালটির এমন অনৈতিক ও অমানবিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে এবং যাতে এ হাসপাতাল ভবিষ্যতে এমন দু:ষ্কর্ম করতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন আব্দুল বারী। (খবর সংবাদদাতার)