সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) ৬ থানায় ১৩ মাসে ১৮শ’ ৫৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু মাদক মামলাই ৫৬৬টি। এছাড়া ১৩ মাসে এসএমপিতে ৩৯টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। সিলেট আদালতের ৬ থানার জিআরও পুলিশের রেজিস্টার থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।
সিলেটের ২টি উপজেলা ও ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে এসএমপির ৬ থানা। এসব থানার লোকসংখ্যা প্রায় ১৫ লক্ষাধিকের ন্যায় মাত্র ২ হাজার ৭শ’ জন পুলিশ রয়েছে। ফলে ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে ৬ থানায় অপরাধ কর্মকান্ডে বেশী হওয়াতে মামলার সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকে এসএমপিতে অপরাধ কর্মকান্ড কিছুটা কমে আসছে। মাদক উদ্ধার জনিত কারনে ২০১৭ সালের চেয়ে ২০১৮ সালে মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও অবরাধ বেড়ে যায়নি বলে দাবী করছেন এসএমপি সদর দপ্তরের পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) মো: জেদান আল মুসা।
এদিকে পুলিশের ডিজিটাল পদ্ধতি সেবা চালু হওয়ায় এসএমপিতে অপরাধপ্রবণতা সার্বিকভাবে কিছু টা কমে আসলেও পাশাপাশি মোবাইল ফোন থাকায় অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে অপরাধীরা মোবাইলফোনেই এক অপরাধীর সাথে অন্য অপরাধীদের যোগযোগ থাকায় অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সচেতনমহল মনে করছেন- অপরাধীদের সনাক্ত ও গ্রেফতারে পুলিশ বাহিনীকে আরো বেশী করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে দক্ষ করে গড়ে তুলা অনেকটা প্রয়োজন।
৬ থানার মধ্যে বেশী অপরাধ কর্মকান্ড বরাবরই কোতোয়ালী মডেল থানায় সংঘটিত হয়ে আসছে। তবে মামলাগুলোর মধ্যে বেশী রয়েছে মাদক। এছাড়া প্রতিটি থানায় প্রথমে এগিয়ে রয়েছে মাদক মামলা, দ্বিতীয়তে মারামারি, তৃতীয়তে প্রতারণা, চর্তুথে রয়েছে চুরি-ছিনতাই, খুন, পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ৬ষ্ঠতে রয়েছে সন্ত্রাস, চোরাচালান, অস্ত্র, দস্যুতা ও রাজনীতিসহ অন্যান্য মামলা।
জিআরও রেজিস্টার ও এসএমপি সদর দপ্তর থেকে জানা যায়, এসএমপি ৬ থানায় ২০১৮ সালে ১৭১৬টি মামলা হয়। এর আগের বছর ২০১৭ সালে ১২৮০টি মামলা হলেও ২০১৮ সালে অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় মামলার সংখ্যাও বেড়ে গেছে। চলতি বছর ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাস পর্যন্ত এসএমপি ৬ থানায় ১৪৩টি মামলা হয়েছে। তবে নতুন বছরের অপরাধ ও মামলার সংখ্যা এসএমপিতে অনেকটা কমে আসছে।
কোতোয়ালী থানায় ২০১৮ সালে ৬১৩টি মামলা হয়। এর আগের বছর ২০১৭ সালে ৫০৩টি মামলা হলেও ২০১৮ সালে অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় মামলার সংখ্যাও বেড়ে গেছে। চলতি বছরের শুরুতে এ থানায় অপরাধ ও মামলার সংখ্যা অনেকটা কমে গেছে। তবে এই থানায় অন্যান্য থানা থেকে আসামী ধরা পড়ে বেশী।
দক্ষিণ সুরমা থানায় ২০১৮ সালে ২৩৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে মাদক মামলা বেশী। যাহা ২০১৭ সালে ১১৯টি মামলা হয়।
এয়ারপোর্ট থানায় ২০১৮ সালে ২৫০টি এবং ২০১৭ সালে ২৫৮টি। তবে এ থানায় ২০১৮ সাল থেকে ২০১৭ সালে অপরাধ ছিল কম।
শাহপরান থানায় ২০১৮ সালে ২২৫টি মামলা দায়ের করা হয় এবং ২০১৭ সালে ১৭৪টি মামলা হয়েছে।
জালালাবাদ থানায় ২০১৮ সালে ২৫৬টি মামলা হয়। যাহা ২০১৭ সালের ২২২টি মামলা হয়েছিল।
মোগলাবাজার থানায় ২০১৮ সালে ১৩৩টি মামলা হয় এবং ২০১৭ সালে ১০৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যাহা অন্যান্য থানা থেকে এ থানার মামলার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেকটা কম।
সিলেট রেলওয়ে (জিআরপি) থানায় ২০১৮ সালে ৯টি মামলা দায়ের করা হয় এবং ২০১৭ সালে ১৭টি মামলা হয়েছে। যা ২০১৮ সালের থেকে ২০১৭ সালে এই থানায় অপরাধ ও মামলার সংখ্যা বেশী ছিল। অথচ সিলেট জিআরপি থানা এলাকাতে মাদক কেনা-বেচা-মাদকসেবী ও অন্যান্য অপরাধের সংখ্যা বেশী থাকলেও অন্যান্য থানা থেকে এই থানার মামলার সংখ্যা একেবারেই কম। কিন্তু এ থানা এলাকা থেকেই মাদক ব্যবসায়ীরা ও মাদকসেবীরা সিলেট নগরীর আনাচে-কানাচে মাদক কেনা-বেচার কলকাঠি নেড়ে তাদের মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এ থানায় মাদকের বিস্তার বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছে সুশীল সমাজ।
নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা থাকলেও এসবে কোনো ফল পাচ্ছেন না নগরবাসী। সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকা অনেক এলাকায় প্রায়ই ঘটে মোটরসাইকেল চুরিসহ মহিলাদের পার্স, গলার স্বর্ণের চেইন, মোবাইল ফোনসহ নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা। অপরাধীর কাছে শিকার হওয়া এসব ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজন থানায় অভিযোগ করলেও বেশিরভাগই মামলার জামেলা থেকে অনেকেই নীরব থাকেন।
এ ব্যাপারে সরাসরি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া এন্ড কমিউনিটি সার্ভিস) মো: জেদান আল মুসা জানান, এসএমপিতে পুলিশ কমিশনার থেকে শুরু করে পুলিশ সদস্যসহ ২৭শ’ পুলিশ রয়েছে। উন্নত দেশে ২৫০ থেকে ৩০০ জনের মধ্যে একজন পুলিশ রয়েছে। এসএমপিতে প্রতি ৬শ’ জনের মধ্যে রয়েছে একজন পুলিশ। তবে সরকার ৪শ’ জনের মধ্যে গড়ে একজন পুলিশ নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, মাদক উদ্ধার জনিত কারনে ২০১৭ সালের চেয়ে ২০১৮ সালে মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও অবরাধ বেড়ে যায়নি। তিনি আরো বলেন, সম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধ যেগুলো রয়েছে যেমন চুরি, ডাকাতী, দস্যুতার মতো অপরাধগুলো বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এছাড়া এসএমপি’র প্রতিটি পুলিশ সদস্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য সব সময় তৎপর।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, মানুষের নিরাপত্তার জন্য এসএমপি পুলিশ সেবামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। পুলিশ ইতিমধ্যে অনলাইন ভিত্তিক ডিজিটাল কার্যক্রম শুরু করেছে। তিনি বলেন, লোকজনের সুবার্ধে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সিসি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে। সিসিকের বাহিরে এসএমপির আরো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অপরাধ কমিয়ে আনতে সিসি ক্যামেরা বসানোর জন্য আমাদের প্রচেষ্টাধীন। যে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ড দূর করতে পুলিশ ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া প্রতিদিন মাদক সেবনকারী ও মাদক বিক্রেতাদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত থাকায় মামলার সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।