রাষ্ট্র জনগণকে যেসব সেবা দেয়, তার মধ্যে সবচেয়ে জরুরি একটি খাত হলো স্বাস্থ্যসেবা খাত। দেশের বেশির ভাগ মানুষ এখনো সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। অথচ অতি জরুরি এ খাতে অনিয়মের যেন অন্ত নেই। দুর্নীতি একে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে। শুধু সরকারি চিকিৎসাসেবাই নয়, গোটা স্বাস্থ্য খাতেই দেখা যায় এমন অরাজকতার চিত্র। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানেও উঠে এসেছে ভয়াবহ চিত্র। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যেসব খাতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়, এমন ১১টি খাত চিহ্নিত করেছে দুদক। তারা এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে ২৫ দফা সুপারিশও করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে দ্রুত এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি-অনিয়ম গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত উঠে আসছে। সরকারি হাসপাতালে, বিশেষ করে ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি রীতিমতো বেদনাদায়ক। কেউ কেউ মাসে দু-এক দিন হাসপাতালে যান, কেউ তা-ও যান না। যাঁরা যান, তাঁদেরও একটি বড় অংশ পুরো সময় হাসপাতালে থাকে না। অনেক চিকিৎসক হাসপাতালের কর্মসময়ে বাইরের ক্লিনিকে রোগী দেখেন। বিনা মূল্যে দরিদ্র রোগীদের দেওয়ার জন্য যেসব ওষুধ বরাদ্দ করা হয়, সেগুলো রোগীরা পায় না। কমিশনের আশায় রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হাসপাতালে না করে রোগীদের বাইরে থেকে করিয়ে আনতে বলা হয়। হাসপাতালের পরিবেশও থাকে নোংরা-অস্বাস্থ্যকর। বাজারে যেসব ওষুধ পাওয়া যায়, তার একটি বড় অংশই ভেজাল ও নিম্নমানের। এসব ওষুধে শুধু রোগীর মৃত্যুই ত্বরান্বিত হয়। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষার মান নিয়ে রয়েছে বিস্তর প্রশ্ন। চিকিৎসকদের রোগী দেখার সময় ও ফি নিয়ে পত্রপত্রিকায়ও অনেক লেখালেখি হয়েছে। অভিযোগ আছে, যতটুকু সময় নিয়ে একজন রোগীকে দেখা প্রয়োজন, তার ১০ শতাংশ সময়ও অনেক চিকিৎসক দিতে চান না। তাঁরা অধিকসংখ্যক রোগী দেখে অধিক অর্থ উপার্জন করতে চান। ফলে প্রায়ই ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। ওষুধের মান যা-ই হোক, অনেক চিকিৎসক ওষুধ কোম্পানির লোকজনের প্রণোদনায় সেসব ওষুধই রোগীদের দিয়ে থাকেন। এমনই সব অনিয়ম বন্ধে দুদক যে সুপারিশগুলো করেছে, তা খুবই যুক্তিযুক্ত। সুপারিশসংবলিত একটি প্রতিবেদন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি, তিনি জরুরি ভিত্তিতে সুপারিশগুলো বিবেচনা করবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
দেশ এগিয়ে চলেছে। এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখার একটি প্রধান পূর্বশর্ত হচ্ছে সুস্থ ও সবল জাতি। জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন ছাড়া সেই সবল জাতি আশা করা যায় না। আমরা আশা করি, নতুন সরকার শুরু থেকেই জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেবে। আর সেসব পদক্ষেপের সুফল নিশ্চিত করার জন্য এ খাতের দুর্নীতি দূর করার প্রতি সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে।