অনুন্নত বা দরিদ্র দেশ হিসেবে যে বাংলাদেশকে একসময় ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে পরিহাস করা হতো, সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের সমীহ কুড়াচ্ছে এবং ক্রমান্বয়ে এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারভুক্ত হয়েছে। নিম্ন আয় থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় সবার পেছনে থাকা বাংলাদেশ এখন অনেক সূচকে সবার আগে চলে এসেছে। তার সর্বশেষ স্বীকৃতি মিলেছে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের তৈরি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচক ২০১৯-এ। ১৬৯টি দেশের মধ্যে এ বছর সাত ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান হয়েছে ১২১তম। গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২৮তম। এ বছর ভারতের অবস্থান হয়েছে ১২৯তম এবং পাকিস্তানের ১৩১তম। এই সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে ভুটান (৭৪তম), এরপর আছে শ্রীলঙ্কা (১১৫তম) এবং সবচেয়ে পিছিয়ে আছে আফগানিস্তান।
কোনো দেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পরিমাপ করা হয় চারটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে। এগুলো হলো আইনের শাসন, সরকারের অর্থনৈতিক আকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর দক্ষতা এবং মুক্তবাজার পরিস্থিতি। এ কাজে সাংখ্যিক ও গুণগত আরো ১২টি প্রভাবক উপাদানকে বিবেচনা করা হয়। সহজভাবে বলতে গেলে এতে দেখা হয় ব্যক্তির শ্রম, সম্পত্তি ও ভোগের অধিকার পরিস্থিতি, সমাজে শ্রম, পুঁজি ও পণ্য প্রবাহের স্বাধীনতা এবং এসব অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা পরিস্থিতি। সব বিবেচনায় বাংলাদেশ এগিয়েছে—এটাই আমাদের জন্য খুশির বিষয়। এটা ঠিক, দরিদ্র বা স্বল্পোন্নত কোনো দেশ চাইলেই রাতারাতি উন্নত দেশের সমকক্ষ হতে পারবে না। ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ অনুন্নত দেশে এমন হাজার রকমের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়, যা থেকে মুক্ত হয়ে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন কাজ। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের ক্রমিক অগ্রগতির যে হার দৃশ্যমান হচ্ছে, তা যথেষ্ট সুখকর।
বাংলাদেশের এগিয়ে চলার পথে এখনো একটি বড় বাধা দুর্নীতি। আর এই দুর্নীতির বেশির ভাগই করে থাকে বিত্তবানরা। গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) গত সোমবার ১৪৮টি দেশের মুদ্রাপাচারের যে হিসাব দিয়েছে তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে ২০১৫ সালে পাচার হয়েছে ৫৯০ কোটি ডলার বা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। মুদ্রাপাচারের বড় অংশই হয় আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে এবং তা করে থাকে কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ী। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) ২০১৮ সালের দুর্নীতির যে চিত্র তুলে ধরেছে, তাতেও বাংলাদেশের অবনতি হয়েছে। বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নিতে হলে দুর্নীতির লাগাম টানতেই হবে। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। আমরা এই ঘোষণার দ্রুত ও কঠোর বাস্তবায়ন দেখতে চাই। তা না হলে আমাদের সব উন্নয়ন-প্রচেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়বে।